যিশু সেনগুপ্ত, দেবশ্রী রায়
শেষ আপডেট: 8 May 2025 15:50
রবীন্দ্রনাথ তখন ১৯, সব ফিরেছেন বিলেত থেকে। কাদম্বরী নতুন বৌঠান ২১। দু'জনের বন্ধুত্ব সেই ছেলেবেলা থেকে। জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর রবিই একমাত্র কাদম্বরীর বন্ধু। স্বামী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ব্যস্ত বাইরে। কাদম্বরীর একাকীত্বের জীবনে রবিই তরুণ দেবদূত। ২০০২ সালে তারকাখচিত একটি বাংলা ছবি এসেছিল যেখানে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় যিশু সেনগুপ্ত (Jishu Sengupta) আর কাদম্বরী দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করেন দেবশ্রী রায় (Debasree Roy)। সেসময় ছবিটি নিয়ে বিপুল চর্চা হলেও কখনও বড় পর্দায় মুক্তি পায়নি।
২০০২ সালে পরিচালক সুকান্ত রায় তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) ছোটবেলা থেকে প্রথম যৌবনের দিনগুলি নিয়ে বাংলা ছবি 'ছেলেবেলা' । ছবির শ্যুটিং শুরুর থেকেই চর্চায় ছিল খবরটি। কিন্তু সে অর্থে দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারেনি ছবিটি।
তারকাখচিত ছবিতে রবীন্দ্রনাথের বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চরিত্রে রঞ্জিত মল্লিক ও মা সারদা দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। বম্বে থেকে কলকাতা এসে সারদা দেবীর চরিত্রটি বেশ সুন্দর করেছিলেন মৌসুমী। ইন্দ্রাণী হালদার ছিলেন জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর ভূমিকায়। তবে মূল আকর্ষণ ছিলেন দেবশ্রী আর যিশু।
যিশু সেনগুপ্ত তখন বাংলা ছবিতে ফ্লপমাস্টার। যদিও তিনি ছোট পর্দায় 'মহাপ্রভু' করে রীতিমত স্টার। তাই শ্রীচৈতন্যদেব থেকে রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে যিশু সেনগুপ্তকে মেনে নিতে দর্শকের কোন অসুবিধে হয়নি। যদিও ছবিটি তো মুক্তি পাইনি। শ্যুটিংয়ের মুহূর্ত শুধু ধরা পড়েছিল সংবাদপত্রে। পরে যদিও টেলিভিশনে দেখা যায় সিনেমাটি মাঝেমধ্যে। যিশু তখন দীনেন গুপ্তর 'প্রিয়জন', 'ঋণমুক্তি' এসব ছবি করলেও সুপার ফ্লপ হয়। সেসময় রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় যিশুর অভিনয় দেখে ফিল্ম সমালোচকরা প্রশংসা করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের তখনকার বয়স অনুযায়ী যিশুর বয়স ছিল একদম ঠিক। তবে কাদম্বরীর ২৫ বছর বয়স তখন দেবশ্রীর ছিল না। যিশুর সঙ্গে দেবশ্রীর বয়সের অনেকটাই তফাত ছিল। কিন্তু সুন্দর অভিনয়ে আর দেবশ্রীর রূপের জাদুতে দুজনের রসায়ন জমেছিল। দেবশ্রী তখন তারকা নায়িকা বলেই তাঁকে কাদম্বরী করা হয়। কাদম্বরীর মৃত্যু রহস্যও ছবিতে ধরা পড়েছিল।
২০০২ সালে তখনও রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কাদম্বরী দেবীর সুইসাইড নোট' বই লেখেননি। তাই নতুন বৌঠান আর রবি, দেওর-বৌদির সম্পর্কে প্রেমের স্পর্শ বাঙালির মনে লাগেনি। 'ছেলেবেলা' ছবিতে রবি আর নতুন বৌঠানের মান-অভিমান থাকলেও তাঁদের উষ্ণ সান্নিধ্যে দাঁড় করাননি পরিচালক।
ছবিটি কয়েকটি ফেস্টিভ্যালে প্রশংসিত হয়েছিল বটে। তবে পরিচালনা দুর্বল হওয়ার কারণে বড় তারকাদের অভিনয়েও জড়তার ছাপ ছিল। ভীষণ নাটুকে সংলাপধর্মী ছবি হওয়াতে বাস্তবতা হারিয়েছিল। তবে ছবিটি সুস্থ রুচিপূর্ণ ভাবেই বানানো হয়েছিল। এই ছবির আবহে ধারাভাষ্য বলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
যিশু সেনগুপ্ত আজ বাংলা, হিন্দি, দক্ষিণী ছবিতেও কাজ করছেন। ২৫ শে বৈশাখ এলে রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে অতীতের অপাপবিদ্ধ মুখের যিশুকে দেখতে মন্দ লাগে না। পরবর্তীকালে সুমন ঘোষের ছবিতে 'কাদম্বরী' পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ সাজলেও যিশুর অভিনয়ে নিষ্পাপ আবেদন অনেক বেশি ছিল।