Latest News

নায়িকা ইন্দ্রাণী একার জোরে আজও হিটমেশিন, জুটি না পেয়েও মাতিয়েছেন ছোট-বড় পর্দা

শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাবা সঞ্জয় হালদার ছিলেন কলকাতা দূরদর্শনের চেনা মুখ। ক্যামেরার পিছনে ও ছোট পর্দায় সেই সময় আশি নব্বই দশকে চরিত্রাভিনেতার রোলে জনপ্রিয় ছিলেন। অন্যদিকে জোছন দস্তিদার তাঁর ‘সোনেক্স’ প্রোডাকশানে স্বল্প দৈর্ঘ্যের জনপ্রিয় ধারাবাহিক করছেন, যা তখন বাঙালির অন্দরমহলের সন্ধ্যের এক মুঠো দখিনা বাতাস ছিল। জোছন দস্তিদারের আসন্ন ধারাবাহিক ‘তেরো পার্বণ’ এ দুজন কিশোর কিশোরী লাগবে। তাই চেনা লোক সঞ্জয়ের দুই ছেলে-মেয়ে ইন্দ্রাণী (Indrani Haldar) আর ইন্দ্রনীলকেই বেছে নিলেন জোছন দস্তিদার। এই ‘তেরো পার্বণ’-এ সব্যসাচী চক্রবর্তীরও ‘গোরা’ নায়কের ভূমিকায় প্রথম টেলিদুনিয়াই আত্মপ্রকাশ।

সেই কিশোরী বনি চরিত্রের ইন্দ্রাণী চোখে পড়লেন ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির সব পরিচালকদের। একের পর এক নায়িকা বা সহনায়িকা চরিত্রে ফিল্মের অফার আসতে লাগল হু হু করে। আজ তিন দশকের বেশি পার করে ইন্দ্রাণী গোয়েন্দ্রাণী থেকে শ্রীময়ীতে অনন্যা, বিশাল সফর। খুঁজে নেওয়া যাক ইন্দ্রাণী হালদারের কিছু সেরা চরিত্রকে।

নীলিমায় নীল ১৯৯১

নায়িকা রূপে ইন্দ্রাণীর প্রথম যুগের সুপারহিট ছবি বীরেশ চট্টোপাধ্যায়ের ‘নীলিমায় নীল’। তাপস পালের বিপরীতে হিট দিলেন ইন্দ্রাণী। বড়লোক পিতার মেয়ে শর্মিলা দরিদ্র, কিন্তু শিক্ষিত ছেলে আনন্দর প্রেমে পড়ে। তার পর বিয়ে। বিয়ের পর শর্মিলার লড়াইয়ের গল্প।

শ্বেত পাথরের থালা ১৯৯২

শ্বেত পাথরের থালাতে ছিলেন অপর্ণা সেন, হিটমেশিন নায়িকা। তাঁকে ঘিরেই গল্প। অপর্ণার স্টারডমের পাশেও কিন্তু ইন্দ্রাণী হালদার ননদ কলির চরিত্রে নিজের জায়গা করে নেন দর্শকের মনে। তখন ইন্দ্রাণী কিছু ছবি করলেও প্রায় নতুনই বলা যায় আবার এ ছবি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর ডেবিউ ছবি। কিন্তু ইন্দ্রাণী হালদারের সারা জীবনের সেরা চরিত্রর অবশ্যই একটি কলি। এমন একটা রোল প্রভাত রায় ইন্দ্রাণীকে দেন, যা সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা চরিত্র। বৌমণি অপর্ণার সবচেয়ে ভাল বন্ধু কলি। তাঁদের বাড়ির অন্ধকার গলি থেকে বের করে বৌমণিকে আলো দেখায় কলি। কলি প্রথমে খুব ছটফটে প্রাণবন্ত, অথচ ছবির শেষভাগে সেই কলি কত পরিণত। এমন একটা কঠিন চরিত্র করে ইন্দ্রাণী শুরুতেই বুঝিয়ে দেন তিনি কত বড় অভিনেত্রী।

কাচের পৃথিবী ১৯৯৩

অমল রায় ঘটকের ছবি ‘কাচের পৃথিবী’। ওই সময় টলিউডে মারদাঙ্গার ছবি হত। সেখানে দাঁড়িয়ে এমন একটি মননশীল অথচ বাণিজ্যিক ছবি তৈরি করার সাহস দেখান পরিচালক। ত্রিকোণ প্রেমের গল্প। বহুদিন পর নায়ক রূপে অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে দুই নায়িকা লাবণী সরকার ও ইন্দ্রাণী হালদার। হঠাৎ দিদির অবর্তমানে জামাইবাবুর ভরসা থেকে স্ত্রীতে রুপান্তর হয় শালির। এমন সময় সহসা দিদির প্রত্যাবর্তন। ইন্দ্রাণীর চরিত্রটা বেশ, বেশ কঠিন। ছবির শেষেও সেরা অভিনয়টা দিয়ে গেছেন ইন্দ্রাণী। ‘কাচের পৃথিবী’র জন্য বিএফজেএ পুরস্কারও পান ইন্দ্রাণী।

নট ও নটী

নব্বইতেই দূরদর্শনের টেলিছবি ‘নট ও নটী’। রঙ্গালয়ের বঙ্গনটী তিনকড়ি দাসীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইন্দ্রাণী। বড্ড বেশি লড়াই করতে হয়েছিল তিনকড়ি দাসীকে। এক দিকে মা, অন্য দিকে থিয়েটার।

মা চাইতেন মেয়ে তাঁরই বারবণিতা পেশায় থাক। বন্দোবস্তও করে ফেলেন ‘ভদ্দরলোক’ ডেকে। সুন্দরী, দীর্ঘাঙ্গী, সুগায়িকা তিনকড়ির শরীর জুড়ে বিদ্যুৎ। কিন্তু তত দিনে তিনকড়ি বাঁধা পড়ে গিয়েছেন থিয়েটারে। মায়ের চরিত্র করেন সুপ্রিয়া দেবী। সেই চরিত্রে সুপ্রিয়ার কী দাপট! খোলা চুলে, এলো আঁচলে তিনকড়ি ইন্দ্রাণীর চুলের মুঠি ধরে শাসন মায়ের!

চরাচর ১৯৯৪

১৯৯৩ সালে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ছবি ‘চরাচর’। রজিত কাপুর মূল ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন। প্রফুল্ল রায়ের কাহিনি অবলম্বনে পরিযায়ী পাখিদের ঘিরে অনবদ্য এক কবিতা যেন ‘চরাচর’। সঙ্গে ইন্দ্রাণী হালদার, লাবণী সরকার। বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কারেও মনোনীত হয় ছবিটি। এই ছবির জন্যও ইন্দ্রাণী বিএফজেএ পুরস্কার পান।

কুয়াশা যখন ১৯৯৯

ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি শব্দগুলো যেমন এখন বাঙালির ড্রয়িংরুমে খোলা নিউজ চ্যানেলে খুব সাবলীল, নব্বই দশকে তা কিন্তু ছিল না। শব্দগুলো নিষিদ্ধ ও স্বল্পব্যবহৃত শব্দই ছিল। ‘কুয়াশা যখন’ মেগা এই শব্দগুলোকে বাঙালির অন্দরমহলে এনে ফেলল ভরদুপুরে। যীশ দাশগুপ্তর পরিচালনায় ‘কুয়াশা যখন’ দেবযানীর গল্প। যে ঘরের বউ দেবযানী তিন শক্তিশালী পুরুষের দ্বারা ধর্ষিতা হয়। তিন ভিলেন চরিত্রে দুলাল লাহিড়ী, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় ও অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নায়ক সঞ্জীব দাশগুপ্ত আর কুণাল মিত্র। বিশেষ ভূমিকায় সুপ্রিয়া দেবী। দুপুর দেড়টায় নচিকেতার গাওয়া  ‘কুয়াশা যখন’-এর টাইটেল ট্র্যাক আজও আইকনিক গান। ওই সুর যেন আজও ভিতরটা নাড়িয়ে দিয়ে যায়। ‘এ মন ব্যাকুল যখন তখন’ গানটাও খুব হিট করে এই সিরিয়ালে। দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেন ইন্দ্রাণী। মায়ের ধর্ষণের বিচার চায় মেয়ে।

Kuasha Jakhan Serial Cast - whichheavy

বিয়ের ফুল ১৯৯৬

কর্মাশিয়াল ছবিতে ইন্দ্রাণীর সর্বকালীন বক্সঅফিস হিট ছবি রাম মুখার্জীর ‘বিয়ের ফুল’। রানি মুখোপাধ্যায়ের দিদির ভূমিকায় ইন্দ্রাণী। আর নায়ক অদ্বিতীয় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। প্রেম থেকে বিয়ের আমেজ ঘিরে এ ছবির দর্শক তো আজও কমেনি। মিউজিক্যাল হিটেও রেকর্ড সাফল্য পায়। রানি মুখার্জীর একমাত্র বাংলা ছবি হিসেবেও ‘বিয়ের ফুল’ আজও জনপ্রিয়। ছবিতে ইন্দ্রাণীকে অসাধারণ সুন্দর দেখতে লেগেছিল। মাতৃস্নেহে দিদির অভিনয়েও অনবদ্য ইন্দ্রাণী।

দহন ১৯৯৭

ইন্দ্রাণী-ঋতুপর্ণার দু’পাশে মুখ পোস্টারে। মাঝে লেখা সুচিত্রা ভট্টাচার্যর ‘দহন’। পরিচালনায় ঋতুপর্ণ ঘোষ। নড়িয়ে দিয়েছিল সমাজকে এ ছবি। ‘কুয়াশা যখন’-এর সেই সাহসিকতাই যেন বড়পর্দায় উঠে এল। তবে এখানে ঝিনুকরূপী ইন্দ্রাণী ধর্ষিতার পরিত্রাতা রূপে অবতীর্ণ হলেন। কে বলে দ্রৌপদীদের বস্ত্রহরণে শুধু পুরুষ কৃষ্ণই বাঁচায়। পুরুষরা যখন প্রকাশ্য মেট্রো স্টেশনের সামনে অন্যায় দেখেও ভয়ে গা বাঁচিয়ে চলে তখন এক মেয়েই আর এক মেয়েকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পরে এক পাল নরখাদকের মধ্যে এবং তাঁদের শায়েস্তাও করে। ‘দহন’ এনে দিল ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আর ইন্দ্রাণী হালদারকে যুগ্ম সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার। ‘দহন’ তো এক বিপ্লবের নাম। এই জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তি ইন্দ্রাণীর কেরিয়ারে বাঁক বদলও বটে।

একই প্রেক্ষাপটে শতরূপা সান্যালের ‘অনু’ এবং হরনাথ চক্রবর্তীর ‘দায় দায়িত্ব’ ছবিতেও ইন্দ্রাণীর প্রশংসনীয় অভিনয়।

Dahan (1997)

সম্প্রদান ১৯৯৯

প্রসেনজিৎ এর বিপরীতে ‘বিয়ের ফুল’-এর মতো বাণিজ্যিক হিট ছবি করেও মূলধারার নায়িকা হিসেবে ভাগ্য খোলেনি ইন্দ্রাণীর। সব গুণ থাকা সত্ত্বেও তিনি চলচ্চিত্রের নায়িকা রূপে বেশি ছবি পাচ্ছিলেন না। কারণ প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি তখন জনপ্রিয় হয়ে যায়। ফলত ইন্দ্রাণী জুটি তৈরি করার মতো নায়ক পেলেন না। সঞ্জীব দাশগুপ্ত, কুণাল মিত্ররা তাঁর হিরো হলেও বাণিজ্যিক ছবি প্রসেনজিৎ ম্যাজিকেই হিট করত।  তাই নতুন পরিচালকদের মননশীল ছবিকেই বেছে নিলেন ইন্দ্রাণী। নবাগত বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সম্প্রদান’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করলেন তিনি। বাণিজ্যিক ছবিতে যে দক্ষিণী ভোজপুরি রিমেক ছবি হত, সেখানে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রাণী অন্যধারার ছবি করেই এক বিপ্লব ঘোষণা করলেন। এই সিনেমায় মা অনসূয়া মজুমদার ছিলেন সিঙ্গেল মাদার। মেয়ের বিয়েতে কন্যাদান করেন।

সাঁঝবাতির রূপকথারা ২০০২

মূলধারাতে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির হাতেই সব ছবি, অন্যদিকে এসে গেল জিৎ-কোয়েল, জিৎ-স্বস্তিকা জুটির দাপট। এই সময়েও হাল ছাড়লেন না ইন্দ্রাণী। ভাল ছবি, ভাল রোলের তাগিদে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাবা-মেয়ে বা শিক্ষক-ছাত্রীর রোলে বেশ কিছু ভাল ছবি, টেলিছবি করলেন ইন্দ্রাণী। গৌতম ঘোষের ‘দেখা’ বা অতনু ঘোষের অজস্র টেলিফিল্মে দেখা গেল সৌমিত্র-ইন্দ্রাণী জুটিকে। আবার অঞ্জন দাসের ডেবিউ ছবি ‘সাঁঝবাতির রূপকথারা’, বাবা-মেয়ের ভূমিকায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ইন্দ্রাণী হালদার। প্রশংসিত যেমন হল, তেমন এই ছবি বক্সঅফিসেও হিট করল। শত বাধা অতিক্রম করেও ভাল কাজ করার চেষ্টা সবসময় ইন্দ্রাণী করে গেছেন।

বম্বে সফরে ‘সুজাতা’ থেকে ‘মা শক্তি’

বিআর চোপড়ার ডাকে ইন্দ্রাণী দিলেন বলিউড পাড়ি। প্রতিমা মুখ ইন্দ্রাণী হলেন মা দুর্গা। আবার হিন্দি সামাজিক ধারাবাহিকেও ‘সুজাতা’ করে বিশাল জনপ্রিয়তা পেলেন ইন্দ্রাণী। একটা দীর্ঘ সময় ইন্দ্রাণী মুম্বইতেই কাটিয়েছিলেন। তবে সুযোগ পেলে করে যেতেন টলিউডের কাজও।

গোয়েন্দা গিন্নি

ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কিরীটিরা সবাই পুরুষ। মিতিন মাসি করার কথা হয়েও সুযোগ পাননি ইন্দ্রাণী। কিন্তু যখন তাঁর কাছে ‘গোয়েন্দা গিন্নি’র অফার এল সেই সুযোগ ছাড়েননি ইন্দ্রাণী। থোড়বড়িখাড়া সিরিয়ালের মাঝে ‘গোয়েন্দা গিন্নি’ পরমা যেন মুক্ত অক্সিজেন হয়ে উঠল দর্শকদের কাছে। একের পর এক কেস সলভ করে ইন্দ্রাণী বুঝিয়ে দিলেন যার হাতে থাকে খুন্তি অথচ মাথায় মগজাস্ত্র। গোয়েন্দা গিন্নির দ্বিতীয় সিরিজেও দর্শকরা ইন্দ্রাণীকেই চেয়েছিলেন। ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালী’ গোয়েন্দা গিন্নির অনুরূপ মেগা এলেও সেটা ‘গোয়েন্দা গিন্নি’র জনপ্রিয়তা পায়নি।

শ্রীময়ী

বহু সফর পেরিয়ে আবারও সেই সাধারণ মেয়েদের অসাধারণ হওয়ার কাহিনিতে মাত করছেন ইন্দ্রাণী। এরকম ঘরোয়া অথচ লড়াই করা গৃহবধূর রোলে ইন্দ্রাণী ছাড়া টেলিভিশনে কেউ এত দীর্ঘ সময় দর্শকধন্য হতে পারেননি ইন্দ্রাণীর মতো। বহু অযত্নে থাকা বাড়ির গৃহবধূরাই যখন কোম্পানির বস হয়ে যায় তখন তাঁর কাছে স্বামীর অবহেলা, স্বামীর পরকীয়া, শাশুড়ির অত্যাচার সবই যেন তুচ্ছ হয়ে যায়। কারণ শ্রীময়ী আজ এসবের ঊর্ধ্বে।

এসবের পাশাপাশি আবার সঞ্চালিকার ভূমিকাতেও কিন্তু জনপ্রিয় তিনি। তারা বাংলায় ‘সঙ্গে ইন্দ্রাণী’ টক শো-তে ইন্দ্রাণীর সঞ্চলনা ছিল নজরকাড়া।

ইন্দ্রাণী হালদার এমন একজন অভিনেত্রী যিনি বড় পর্দার সফল ও জনপ্রিয় নায়িকা হয়েও ছোট পর্দাকে কোনও দিন অবহেলা করেননি। যাতেই কাজ করেছেন, অসাধারণ করে তুলেছে। তাই দুটো মাধ্যমই তাঁকে দু’হাত ভরিয়ে দিয়েছে। ব্যক্তিগত টানাপড়েন, কাজে অপ্রাপ্তি সব শিল্পীরই থাকে, কিন্তু সবেতে সমতা রেখে চলে অনন্যা হয়ে উঠতে টলিউডে একমাত্র ইন্দ্রাণী হালদারই পেরেছেন।

উত্তমকুমারের দিদিভাই সুমিত্রা, সুচিত্রার লিপে রবীন্দ্রসঙ্গীত মানেই তাঁর কণ্ঠ! দুই সেনের দারুণ জুটি

You might also like