ম্যাডাম আজুরি
শেষ আপডেট: 8 May 2025 17:06
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এ সময়ের বলিউড সিনেমাগুলোয় আইটেম সং ছাড়া যেন কিছু একটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মালাইকা অরোরা ‘হোঁট রসিলে’, করিনা কাপুরের ‘ফেভিকল সে’, সামান্থার ‘উ অঁটাভা’ কিংবা নোরা ফতেহির ‘দিলবর দিলবর’—আপনি নিশ্চয়ই বছরের পর বছর ধরে অনেক সুপারহিট আইটেম গান দেখেছেন। প্রথম সারির বহু অভিনেত্রী আইটেম সং-এ পারফর্মও করেছেন। কিন্তু এটা কি জানেন, ভারতের প্রথম আইটেম গার্ল কে ছিলেন? যদি মনে পড়ে জিনাত আমান, হেলেন কিংবা বিন্দুর নাম—তাহলে তা ভুল। কে সেই অভিনেত্রী যিনি নাচের মাধ্যমে প্রথমবার সেই ইতিহাস গড়ে ছিলেন এবং ভারতীয় সিনেমায় আইটেম নম্বরের জগতকে চিরদিনের জন্য পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন?
সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের নৃত্যরেখা
পশ্চিমী ব্যালে নৃত্যশৈলীর সঙ্গে ছোটবেলাতেই পরিচয় হয়েছিল ম্যাডাম আজুরির। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের ধারাগুলোর—ভারতনাট্যম, কত্থক ও মণিপুরীর গভীরে প্রবেশ করেন। প্রখ্যাত নৃত্যগুরু আতিয়া ফয়জি-রহিমিনের তত্ত্বাবধানে তিনি এই সব ধারার সঙ্গে ব্যালের এক অনন্য মিশেল ঘটান। সাংস্কৃতিক ফিউশন তাঁকে সিনেমার পর্দায় নিয়ে এসেছিল একেবারে ভিন্ন রূপে।
'আইটেম নম্বর'-এর জন্মলগ্নে আজুরি
১৯৩০-এর সময়ে সিনেমায় পা রাখেন ম্যাডাম আজুরি। তাঁর নাচ ছিল শুধুই সময় কাটানোর মাধ্যম নয়, বরং সিনেমার গল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাণবন্ত, ছন্দময়, অথচ শালীন নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে তিনি সৃষ্টি করলেন নতুন এক ধারা—যা আজকের দিনে 'আইটেম নম্বর' নামে জনপ্রিয়।
দেশ পেরিয়ে রাজকীয় সম্মান
আজুরির প্রতিভা ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছেছিল বিদেশেও। ১৯৪০-এ তিনি আমন্ত্রিত হন বাকিংহাম প্যালেসে পারফর্ম করতে—যা ছিল ভারতীয় নৃত্যশিল্পীর জন্য এক বিরল সম্মান। তিনি প্রমাণ করেছিলেন, ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যও বিশ্বমঞ্চে দাপটের সঙ্গে জায়গা করে নিতে পারে।
পাকিস্তানে নতুন যাত্রা
দেশভাগের পর আজুরি পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে তিনি শুধু পারফর্মই করেননি, গড়ে তোলেন এক ধ্রুপদী নৃত্য অ্যাকাডেমিও। পাকিস্তানের ন্যাশনাল কাউন্সিল অব দ্য আর্টস-এ তাঁর অবদান ছিল বিশাল। তাঁর হাত ধরেই নতুন প্রজন্মের অনেক নৃত্যশিল্পী নিজেদের গড়ে তুলেছেন।
আজুরির ঐতিহ্যে বেঁচে আছে বলিউডের ছন্দ
এখনকার বলিউড আইটেম নম্বর মানেই আলাদা উত্তেজনা, কিন্তু এর পিছনে যে ম্যাডাম আজুরির মতো পথপ্রদর্শক ছিলেন, তা অনেকেই জানেন না। তিনি শুধু নাচের দৃশ্যকে আকর্ষণীয় করে তোলেননি, বরং এক রূপ দিয়েছিলেন শিল্পে। তাঁর কাজ আজও অনুপ্রেরণা জোগায় অসংখ্য নৃত্যশিল্পীকে।