শেষ আপডেট: 22nd January 2024 17:39
আজ ২২শে জানুয়ারি ২০২৪, টানা তিন দশকের অপেক্ষার অবসান। হাজার বাকবিতণ্ডা, ঝামেলা পেরিয়ে অবশেষে রাম মন্দিরের উদ্বোধন হল অযোধ্যায়। রামমন্দির উদ্বোধন একটি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। এই বিশেষ দিনে আসুন জেনে নিই রাম সীতা নিয়ে একটি বাংলা ছবির গল্প। যদিও ছবিটি আদতে ডাবড বাংলা ছবি। বলিউড তারকাদের সঙ্গে এ ছবিতে কাজ করেছিলেন কয়েকজন বাঙালি অভিনেত্রী। রামায়ণকেন্দ্রিক তারকা খচিত ছবিটি নব্বই দশকে কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
১৯৯৭ সালের ২৫ শে জুলাই কলকাতার উত্তরা পূরবী উজ্জ্বলা তে মুক্তি পায় বাংলা ছবি 'লব কুশ'। এটি ছিল আদতে ডাবড ছবি। রামায়ণের শেষ পর্ব নিয়ে ছবিটি নির্মিত হয়। রামানন্দ সাগর 'রামায়ণ' সিরিয়াল বানানোর এক দশক পর এই 'লব কুশ' ছবি তৈরি হয়। সিরিয়ালের রাম অরুণ গোভিল এই ছবিতে হন লক্ষণ। রামের ভূমিকায় জিতেন্দ্র এবং সীতা জয়াপ্রদা।
প্রযোজক দিলীপ কানিকারিয়ার দেবায়ঙ্ক আর্টসের প্রযোজনায় ভি মধুসূদন রাওয়ের পরিচালনায় এই ডাবড ছবিটি হিন্দি বাংলা ও তামিলে মুক্তি পেয়েছিল।
বিপুল টাকা খরচ করে ছবিটি নির্মিত হলেও বক্সঅফিসে ছবিটি সে অর্থে সাফল্য পায়নি।
১৯৯৭ সালে জিতেন্দ্রর তখন ঝরাবেলার সময়। বলিরেখা মুখে নিয়ে তিনি রামচন্দ্র হন। অরুণ গোভিল রামানন্দ সাগরের রামায়ণের রাম রূপে যতটা সারা ভারতবর্ষে হিট ততটাই তিনি ফ্লপ অভিনেতা ছিলেন ফিল্মে। অরুণ গোভিল নায়ক হয়ে যে কটি হিন্দি ছবি করেন সব কটি ফ্লপ হয়। এরমধ্যে একটি হিন্দি ছবিতে অরুণ গোভিলের নায়িকা ছিলেন দেবশ্রী রায়। সে কারণেই 'লব কুশ' ছবিতে অরুণ গোভিল রাম হিসেবে জনপ্রিয় হলেও তাঁকে দেওয়া হয় লক্ষণের চরিত্র আর লিড রোলে রাম হন জিতেন্দ্র। যদিও জিতেন্দ্রর অভিনয় তেমন দাগ কাটেনি। জয়া প্রদা সীতা রূপে নজর কাড়লেও তখনও তিনি প্রথম সারির নায়িকার আসন থেকে সরে গেছেন। জিতেন্দ্র-জয়া প্রদার আশির দশকের হিট ম্যাজিক কাজে লাগেনি নব্বই দশকের এই পৌরাণিক ছবিতে। তবে ছবিটি বাংলায় ডাবড হওয়াতে সেসময় টেলিভিশনে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। মাস্টার আদিত্য ও বেবি শ্রেষ্ঠা লব কুশের অভিনয় করেছিলেন।
লব কুশ ছবিটি সঙ্গীতমুখর ছবি। লেজেন্ডদের সমাহার ছিল এ ছবির গানে। লতা মঙ্গেশকর,আশা ভোঁসলে, এস. পি. বালসুব্রহ্মণ্যম, কুমার শানু, কবিতা কৃষ্ণমৃর্তি, অলকা ইয়াগনিক, সুরেশ ওয়াদকর সেসময়কার প্রথম সারির সঙ্গীত তারকারা গান গেয়েছিলেন এই ছবিতে। তবে বাংলা ভার্সনে লতা আশা কেউই গাননি। বাংলা ভার্সনে নতুন করে গান লেখা হয় বাংলায়, তাতে সীতা জয়া প্রদার লিপে গেয়েছিলেন ইন্দ্রাণী সেন। রামলক্ষণের সঙ্গীত পরিচালনায় গান যদিও কোনটাই হিট করেনি। যে কারণে ছবিটি আরও ফ্লপ করে।
'লব কুশ' ছবির প্লট ছিল রাম রাবণবধ করে সীতাকে উদ্ধার করে অযোধ্যায় ফিরে এসেছেন। রাম অযোধ্যার রাজা। কিন্তু রামের গায়ে কলঙ্ক লাগে। সীতা রাবণের অধীনে লঙ্কায় ছিলেন বলে সমাজে আলোড়ন ওঠে । তাই রাম সীতাকে পরিত্যাগ করেন। এ হেন অবস্থায় গর্ভবতী সীতাকে উদ্ধার করেন ঋষি বাল্মীকি। সীতা জন্ম দেন যমজ সন্তান লব কুশের। এভাবেই এগোতে থাকে ছবির গল্প।
মহর্ষি বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেন প্রাণ এবং হনুমান হয়েছিলেন অবশ্যম্ভাবী ভাবেই দারা সিং। বাঙালি অভিনেত্রীদের মধ্যে চূর্ণী গাঙ্গুলি মান্ডবীর ভূমিকায়, অদিতি চ্যাটার্জি শ্রুতিকীর্তি ও বম্বের বিখ্যাত অভিনেত্রী বীনা ব্যানার্জি শান্তার চরিত্রে অভিনয় করেন।
তবে কলকাতায় এই ডাবড বাংলা ছবি রিলিজ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। টলিউড ইন্ডাস্ট্রির শিল্পীরা প্রতিবাদ জানান বাংলা ডাবড ছবি রিলিজ হলে প্রকৃত বাংলা ছবিতে খারাপ প্রভাব পড়বে , এই ছিল তাঁদের বক্তব্য। তবুও লব কুশ কলকাতায় রিলিজ করে।
লব কুশ না চলার আরও একটা কারণ হল একই সময় মুক্তি পায় ইংরেজি হিট ছবি 'অ্যান্যাকোন্ডা'। অ্যানাকোন্ডা সাপ যে ছবির হিরো। আট থেকে আশির মধ্যে অ্যানাকোন্ডা নিয়ে এত উচ্ছ্বাস ছিল যে লব কুশ সেখানে ম্লান হয়ে যায়। আবার অন্যদিকে ১৮ ই জুলাই ১৯৯৭ সালে রিলিজ করেছিল শাহরুখ খান-জুহি চাওলা জুটির 'ইয়েস বস'। যে ছবি গানে অভিনয়ে বক্সঅফিসে ঝড় তোলে।
তারকাখচিত 'লব কুশ' ছবিটি দেখতে কিন্তু মন্দ লাগে না। রাম সীতা লক্ষণ বিগতযৌবনের হলেও সব তাবড় অভিনেতার সমাহারে ছবিটি মন ভাল করে দেয়। আজকের দিনে একবার দেখে নিতেই পারেন 'লব কুশ'।