শেষ আপডেট: 11th January 2025 17:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, ক্রিসমাস মানেই বলিউডে বড় বাজেট ছবির এবং বক্স অফিস রেকর্ড। তবে, গত সাত বছরে উৎসবের মরশুমে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো একেবারে ধসে গিয়েছে। ক্রিসমাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সর্বশেষ সাফল্য দেখেছিল ২০১৭ সালে। সলমন খান অভিনীত ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’। অর্থলাভ ৩৩৯.১৬ কোটি! তারপর থেকে, বলিউড এমন ফসলের মুখ দেখেনি। অতীতের পুনরাবৃত্তি হয়নি। লড়াই হয়েছে। সাত বছর ধরে ফ্লপ, অ্যাভারেজ কিংবা ধরাশায়ী হওয়া ছাড়া আর কিছুরই মুখ দেখেনি বলিউড!
২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল, ক্রিসমাসকেই মোটামুটি নিজের ‘মাঠ’ই মনে করতেন আমির খান। ‘পিকে’ (২০১৪) এবং ‘দঙ্গল’ (২০১৬) দুটিই সর্বকালের ব্লকবাস্টার হয়ে থেকে গিয়েছে। ৩৪০.৮ কোটি টাকা এবং ৩৮৭.৩৮ কোটি টাকা আয় করে দুটি ছবি।
শুধু দেশের বক্স অফিসে আধিপত্য নয়, বিশ্বব্যাপী রেকর্ডও তৈরি করেছে। ক্রিসমাসে ‘কোয়ালিটি’ কনটেন্ট যে কী করতে পারে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট। আমিরের আরেকটি ছবি ‘ধুম ৩’ (২০১৩) এবং সলমন খানের ‘দাবাং ২’ (২০১২) বছর শেষে নিজেদের জায়গা ধরে রেখেছিল।
২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'টাইগার জিন্দা হ্যায়' ছিল শেষ ক্রিসমাস ব্লকবাস্টার। বিরাট সাফল্য! বলিউডের মনে হয়েছিল এভাবেই হয়তো গল্প এগবে। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোর বদলে গেল অদ্ভুতভাবে। ক্রিসমাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ১০০ কোটির গন্ডি পেরতেই নাকানিচোবানি খেতে থাকে। ব্যতিক্রমী কিছু ছবি ছাড়া, ছাপ ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে প্রত্যেকে। ২০২৪ সালে বরুণ ধাওয়ান অভিনীত অ্যাকশন-প্যাকড ছবি হওয়া সত্ত্বেও, ‘বেবি জন’ ৩৩.৩৮ কোটি ঘরে তুলতে পেরেছে, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ক্রিসমাস ফ্লপগুলির মধ্যে অন্যতম ছবি। একইভাবে, ২০২২ সালে রোহিত শেট্টির কমেডি ছবি 'সার্কাস' ৩৫.৬৫ কোটির উপর উঠতেই পারেনি। ২০২৩ সালে কিং খান অভিনীত 'ডাঙ্কি'র আয় ২১২.৪২ কোটি।তবে শাহরুখ খান একেবারেই ছবির মাধ্যমে দর্শকদের মন ছুঁতে পারেনি।
কোভিডের বছরগুলোয় ক্রিসমাসে বক্স অফিসের হাল ছিল আরও খারাপ। ২০২১ সালে কবির খানের ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ের উপর নির্মিত ‘৮৩’, ১০৯.০২ কোটি আয় করে, যা ছিল একেবারে খারাপের দিকে। প্রযোজকের খরচ ছিল প্রচুর, তার তুলনায় লাভের মুখ দেখতে পারেনি। একইভাবে, ২০১৮ সালে শাহরুখ খান অভিনীত ‘জিরো’ মুখ থুবড়ে পড়ে বক্সঅফিসে, মাত্র ৯০.২৮ কোটি ঘরে তোলে ছবি। কোভিডের আগেও, বক্সঅফিসে এমন পতনের লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। ২০১৯ সালে ‘দাবাং ৩’, সলমন খান থাক সত্বেও সত্ত্বেও শুধুমাত্র ‘হিট’ হয়েই সিনেমা হল ছাড়ে ছবি।
ট্রেড অ্যানালিস্ট তরন আদর্শ বক্সঅফিসে ‘ক্রিসমাস’ ছবির এই অবস্থা সম্পর্ক নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিষয়টি বেশ অবাক করার মতো, কারণ ক্রিসমাস মানেই নতুন বছরের শুরু। শুধু ভারতে নয়, আমেরিকা, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপ, সব দেশেই ক্রিসমাস ছুটির দিন। দেশেও, আমরা সকলেই ছুটির মুডে থাকি। মানুষ রেস্তোরাঁয় যায় সিনেমা দেখে। এই সময়টাকে কোনওভাবেই দোষ দেওয়া যায় না। আমি ছবির কনটেন্টকে দোষ দেব। ‘জিরো’ কিংবা এখন, ‘বেবি জন’। যখন দর্শকের ছবি পছন্দ হয় না, তখনই প্রত্যাখ্যান করে। এক সময়ে, আমির খান ক্রিসমাসে রাজত্ব করতেন। তাঁর দুর্দান্ত সব ছবি এসেছিল এবং বক্সঅফিসে দারুণ সফলও হয়, যেমন ‘পিকে’, যেমন ‘থ্রি ইডিয়টস’ কিংবা ‘গজনি’।
আদর্শ দুটি দক্ষিণী ছবির কথা উল্লেখও করেন। দক্ষিণী ছবি দুটির হিন্দি ডাবড ভার্সন, একটি মৌলিক হিন্দি ছবির থেকে বেশি সফল হয়েছে! ‘এই সময়ে যে দুটি ছবি ভালো ব্যবসা করে তা হল কেজিএফ—(২০১৮), যা জিরো থেকে বেশি ভাল ফল করে এবং ২০২৩ সালে এসেছিল ‘সালার’," তিনি বলেন, ‘কেজিএফ-১’ এত ভালো ব্যবসা করে যে কেজিএফ-২ এর পথ প্রশস্ত হয়। যা আমরা সকলেই জানি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সেই সময়ে ‘জিরো’র মতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করে ছবি। কিছু লোক ছিল, (স্বঘোষিত ট্রেড অ্যানালিস্ট), যারা লিখেছিল যে ‘কেজিএফ’ ১ কোটি টাকাও আয় করবে না। তারা ছবির সুনাম নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। পরে অবশ্য তারাই পাল্টি খায়। বক্স অফিস খুব অপ্রত্যাশিত!’
তিনি আরও বলেন, “দুটি ছবিই মুম্বইয়ের বাইরে নির্মিত। একটি বেঙ্গালুরু (কেজিএফ) থেকে এবং অন্যটি হায়দ্রাবাদে (সালার)। তাই, এই দুটি শহর থেকে আমরা হিন্দি ডাবড ভার্সানের জন্য সাফল্য পেয়েছি। কিন্তু বাস্তব এটা, হিন্দি ছবির জন্য আমরা তেমন সাফল্য পাইনি, যা দুর্ভাগ্যজনক। আর এ কারণেই গত কয়েক বছর ধরে বড়দিনে বড় সাফল্য আসেনি। তবে আমি সত্যিই আশা করি যে ২০২৫ সালে আবারও হিন্দি ফিল্ম টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠবে। তাই, সময়কে দোষারোপ নয়, কনটেন্টকে করুন। এমন কিছু ছবিও আছে, যা দীপাবলি এবং ইদেও ব্যর্থ হয়েছে। আমরা সাধারণজের জন্য কনটেন্ট তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছ, এবং সে কারণেই ছবি চলেনি।’
তরণ আদর্শ এও বলেন যে ‘পুষ্পা-২’, ‘অ্যানিমেল’, ‘বাহুবলী-২’, কিংবা ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’-এর মতো ছবির কোনও উৎসব বা ছুটির সময়ের প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু বক্সঅফিসে তুমুল সাফল্য পেয়েছে।
বলিউডের রিলিজ ক্যালেন্ডারে একসময় বড়দিন ছিল ‘লক্ষ্মীলাভ’-এর দিন। তবে, গত সাত বছর ধরে এই লাভজনক সময়ে দুর্দান্ত সুযোগ হারাচ্ছে বলিউড। পূর্বের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে, বলিউডকে দর্শকদের পছন্দ বুঝে কনটেন্টের উপর জোর দিতে হবে এবং তাঁদের থিয়েটারে ফিরিয়ে আনার সমস্ত কৌশল অবলম্বন করতে হবে। উৎসবের আনন্দ আপাতত ম্লান হয়ে এসেছে, তবে বলিউডের ইতিহাস ইঙ্গিত দেয়, যে পরিবর্তন অস্বাভাবিক নয়। সময়ই উত্তর দেবে ২০২৫-এর ক্রিসমাস হারিয়ে যাওয়া সেই বক্স-অফিস ‘নম্বর’ ফিরিয়ে আনতে পারবে কি না। (Flop bollywood films)