নানা পাটেকর
শেষ আপডেট: 16 January 2025 19:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তাঁর অভিনয়ের মাপকাঠি হয় না। দশকের পর দশক ধরে তিনি প্রমাণ করেছেন, অভিনয় দক্ষতায় তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন। নানা পাটেকর। যিনি তাঁর অসাধারণ প্রতিভার মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করে চলেছেন আজও। কিছুদিন আগে তিনি তাঁর ৭৪ তম জন্মদিন উদযাপন করলেন। ‘ক্রান্তিবীর’, ‘পারিন্দা’ এবং ‘ট্যাক্সি নং ৯২১১’-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয়ের জন্য পরিচিত অভিনেতা আজও শিখিয়ে চলেছেন কত নতুন প্রতিভাবানদের।
সম্প্রতি, এক সাক্ষাৎকারে তাঁর অতীতের স্মৃতির টুকরো কথায় বেশ চমকে দিলেন নানা। প্রশ্ন ছিল অভিনেতা না হলে কী হতেন তিনি? উত্তরে বললেন অভিনয়ের প্রতি যদি তাঁর আগ্রহ না থাকতো তিনি হয়তো আন্ডারওয়ার্ল্ডে যোগ দিতেন! অভিনেতা তাঁর আক্রমণাত্মক মেজাজ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি যদি অভিনেতা না হতাম, তাহলে আন্ডারওয়ার্ল্ডে থাকতাম। আমি এই বিষয় নিয়ে অত্যন্ত সিরিয়াস।’ অনেকেই জানেন, নানা পাটেকর তাঁর সোজাসাপটা উত্তরের জন্য বেশ পরিচিত, নানা বলেন যে তাঁর ছোটবেলায় তাঁর মধ্যে এক অস্থির স্বভাব ছিল যার ফলে প্রায়শই মানুষের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত। ‘আমি ছোটবেলায় মারামারি করতাম, যার কিছু-কিছু আমি এখন মনেও করতে পারি না,’ তিনি স্বীকারও করেন, কীভাবে তাঁর হিংস্র স্বভাব একসময় তাঁর চারপাশের মানুষদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করেছিল! নিজের আক্রমণাত্মক প্রবণতা স্বীকার করলেও, নানা পাটেকর বেশ জোর দিয়ে বলেন যে, বছরের পর বছর ধরে তিনি নিজেকে শান্ত করেছেন।
‘মানুষ আমাকে ভয় পেত। আমি খুব বেশি কথা বলতাম না এবং আমার কাজেই জবাব দিতাম,’ তিনি বলেন। যদিও তিনি স্বীকার করে নেন যে উত্তেজিত হলেই তিনি দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতেন, এও বলেন যে অভিনয়ই একমাত্র মাধ্যম, যা সেই উত্তেজনা থেকে মুক্তি পেতে তাঁকে সাহায্য করে। অভিনয়ই শক্তিশালী প্রতিকার হয়ে উঠেছিল। নানা পাটেকর তিনবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু আপনি কি জানেন কার্গিল যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য তাঁর ফিল্মি কেরিয়ার পর্যন্ত সঁপে দিয়েছিলেন!
সম্প্রতি ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি ১৬’-তে অংশ নেন অভিনেতা নানা পাটেকর।
শোয়ের একাংশে তিনি মিস্টার বচ্চনকে বলেন যে, কীভাবে তিনি কার্গিল যুদ্ধের সময় সম্মুখভাগে দেশের স্বার্থে এগিয়ে এসেছিলেন। নয়ের দশকের গোড়ার দিকে নানা পাটেকর মারাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রির সঙ্গে তিন বছর সময় কাটান এবং প্রশিক্ষণ নেন। তখন তিনি ‘প্রহার’ ছবিটি লিখছিলেন। যখন কার্গিল যুদ্ধ শুরু হয়, তখন তিনি ডিভিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সৈন্যদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধও করেন, কিন্তু সেই অনুরোঝ মঞ্জুর হয়নি। তাঁকে বলা হয় শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রীই এই অনুমোদন দিতে পারেন।
অভিনেতা বলেন, ‘আমি তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজকে চিনতাম, আমি ওঁকে ফোন করি,’ তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি তিনিও বলেছিলেন যে এটা অসম্ভব। আমি তাঁকে বলি যে কমিশনের প্রশিক্ষণ ছয় মাস হলেও, আমি তিন বছর ধরে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। মারাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রির সঙ্গে আমার প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা শোনার পর তিনি অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তুমি কবে যেতে চাও?’ ১৯৯৯ সালের অগাস্ট মাসে নানা পাটেকর নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধক্ষেত্রে কাটান। সৈন্যদের সাহায্যে নিজেকে সঁপে দেন। এমনকি কয়েকদিন হাসপাতালেও কাজ করেছিলেন। কার্গিলে থাকাকালীন কুইক রেসপন্স টিমে (QRT) ছিলেন নানা। পুরনো সেই কথা শেয়ার করে অভিনেতা বলেন, ‘শ্রীনগরে পৌঁছানোর সময় আমার ওজন ছিল ৭৬ কেজি। ফিরে আসার সময় আমার ওজন কমে হল মাত্র ৫৬ কেজি!’
কার্গিল থেকে ফিরে আসার পর নানা পাটেকর তার চলচ্চিত্র কেরিয়ারে ফের মন দেন এবং সর্বকালের সবচেয়ে সফল এবং প্রশংসিত কিছু ভারতীয় ছবি দর্শকদের উপহার দেন নানা পাটেকর। সম্প্রতি নানাকে অনিল শর্মার ‘বনবাস’ ছবিতে দেখা গিয়েছে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে।