শেষ আপডেট: 4th December 2024 11:42
এলেন, দেখলেন, জয় করলেন! থুড়ি, গান গাইলেন। তবে সেই গাওয়া জয় করার চেয়ে কিছু কম নয়। আক্ষরিক অর্থেই মানুষের ‘দিল’ জিতে নিলেন দিলজিৎ। যিনি সদ্য একটি মেগা-শো করে গেলেন শহর কলকাতায়। আর তার পরেই ছেয়ে গেলেন কলকাতাবাসীর হৃদয় থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার পেজে পেজে। কী করে যেন, গোটা কলকাতা ফ্যান হয়ে গেল এই পাঞ্জাবি যুবকের!
৩০ তারিখে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও ৭২ ঘণ্টা আগেই দিলজিৎ দোসাঞ্জ পৌঁছে যান কলকাতায়। বিমানবন্দরে নেমে সোজা হোটেলে পৌঁছলেও সেখানে বেশিক্ষণ মন টেকেনি দিলজিতের। একেই শহরের নাম ‘সিটি অফ জয়’, তার উপরে তিনি নিজে প্রাণোচ্ছল, তরুণ শিল্পী। তাই ঘরে না থেকে রাস্তায় নেমে পড়েন।
আর এরপরের গল্পটাই জেনে ফেলেছেন সকলে। কারণ তিলোত্তমা থেকে ফিরতেই শহরের অলিগলির নানা রঙিন ছবি ফুটে উঠেছে পাঞ্জাবি সঙ্গীতশিল্পী তথা অভিনেতার সোশ্যাল মিডিয়া পেজে। সেই ভিডিও এন্তার শেয়ার হয়ে ভরিয়ে দিয়েছে চারদিক।
সফর শুরু
শুরুটা হয়েছিল চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর। দেশের একাধিক বড় শহরে পারফর্ম করার 'দিল-লুমিনাতি ট্যুর' শুরু করেছিলেন দোসাঞ্জ। নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে প্রথম অনুষ্ঠান।
কিন্তু সফর শুরুর প্রথম থেকেই একাধিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে দিলজিতের নাম। সে টিকিট বিক্রিই হোক বা আয়োজকদের চূড়ান্ত অব্যবস্থা! সবকিছুই সহ্য করতে হয়েছে। তবে সবকিছুকে উড়িয়ে নিজের ব্যবহার ও পারফরম্যান্সে নিন্দুকদের পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিতর্ক
দিলজিতের গানের সফর যত দীর্ঘ হয়েছে, ততই যেন বিপত্তি বেড়েছে শিল্পীর। দিল্লির পর হায়দরাবাদ, আমদাবাদ, লখনউ, পুনেতেও অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু কোথাও কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি।
কোনও কোনও রাজ্য আবার জানিয়ে দেয়, গানে সমস্যা নেই। কিন্তু মদ ও মাদক নিয়ে কোনওরকম গান তিনি গাইতে পারবেন না। সেই মতো গানের 'মদ'কে বদলে কোকাকোলাও গেয়েছেন তিনি! তবু থামাননি অনুষ্ঠান, বা নিজে কোনও সমস্যার কারণ হননি। বরং সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য সহযোগিতাই করেছেন দিলদরিয়া মেজাজে।
মানবিক দিলজিৎ
প্রতিটি অনুষ্ঠানে টিকিট হটকেকের মতো বিকোলেও, দিলজিতের সঙ্গে এই সফরে যাঁদের আলাদা করে দেখা হয়েছে, মতামত বিনিময় হয়েছে, সে সব শ্রোতারা বা অনুগামীরা একেবারেই নিরাশ হননি। উল্টে তাঁদের কাছে অন্য অবতারে ধরা দিয়েছেন দিলজিৎ। কখনও শো চলাকালীন শীতের হাত থেকে দর্শকদের বাঁচাতে যেমন জ্যাকেট ছুড়ে দিতে দেখা গেছে তাঁকে, আবার ‘দিলজিৎ অনুরাগীদের’ একবার হলেও মঞ্চে ডেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
তিলোত্তমায় পা শিল্পীর
দিল্লি সফরের পর নভেম্বরের ১৫ তারিখ হায়দরাবাদ, ১৭ নভেম্বর আমদাবাদ, ২২ নভেম্বর লখনউ, ২৪ নভেম্বর পুনের পথ পেরিয়ে ২৭ তারিখ তিনি উড়ে আসেন কলকাতায়। টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া হলেও ৩০ নভেম্বর অ্যাকোয়াটিকায় মানুষের ঢল নামে। দিলজিৎ অবশ্য আগেই আশ্বাস দিয়েছিলেন, টিকিটের যাই ব্যবস্থা থাকুক, অনুষ্ঠান না দেখে কেউ ফিরবেন না।
মঞ্চে উঠে ‘নমস্কার কলকাতা’ বলতেই সব ক্লান্তি ভুলে দিলজিতের সফরসঙ্গী হন শহরবাসী। এরপর একের পর এক জনপ্রিয় গান। কিন্তু অনুষ্ঠান নিয়ে যত বেশি চর্চা শিল্পীকে নিয়ে হয়েছে, কলকাতা ছাড়ার পরে আরও বেশি মাত্রায় খবরে এসেছেন তিনি।
শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ানো
২৭ নভেম্বর কলকাতায় পৌঁছে, দক্ষিণেশ্বর মন্দির হোক বা ট্যাক্সি চেপে হাওড়া ব্রিজে ঘুরে বেড়ানো, অথবা হোক কফি হাউসের ইনফিউশনের নস্ট্যালজিয়ায় ডুব, সেই সঙ্গেই উত্তর কলকাতার একাধিক ঘাটে ঘুরে বেড়ানো-- সবটাই করতে দেখা গেছে তাঁকে পরম আনন্দে এবং অবশ্যই আবেগে।
নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে সেই কলকাতা প্রেমেরই একাধিক প্রমাণ দিয়েছেন পাঞ্জাবি শিল্পী। হলুদ ট্যাক্সিতে চেপে ঘুরে বেড়ানো হোক বা দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে গিয়ে ভক্তিভরে মা কালীর আরাধনা, সবকিছুতেই যেন অন্য শিল্পীদের ১০ গোল দিয়েছেন দিলজিৎ।
ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বিভিন্ন পোস্টে ভিউ এবং লাইকের বন্যা বইলেও কলকাতা নিয়ে তাঁর করা সবকটি ভিডিও মন ছুঁয়েছে মানুষের। হবে নাই বা কেন? হাওড়ার ফুল মার্কেটে গিয়ে একজন ফুল বিক্রেতার সঙ্গে ছবি তুলেছেন দিলজিৎ। ভাঙা মোবাইল স্ক্রিনে তাঁর সঙ্গে সেলফি নিয়েছেন কলকাতার এক ভক্ত। এর পরেও কল্লোলিনী কলকাতা তাঁকে ভালবাসবে না?
কলকাতায় কেল্লাফতে
এ কথা ঠিক, যে নতুন প্রজন্মের কাছে দিলজিতের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। কিন্তু কলকাতায় তাঁকে নিয়ে এত চর্চা পিছনে অবদান দিলজিতের স্পেশ্যাল টিমের। বিভিন্ন মুহূর্তে শিল্পীকে হাজির করিয়ে এবং সে সব ক্যামেরাবন্দি করে গায়ককে ভালবাসার অবকাশ যেন আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরাই। বিষয়টি দেখে আপাত চোখে বোঝার উপায় না থাকলেও, এই সফর যে শিল্পীর প্রোমোশনের একটা বিশাল ক্ষেত্র, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
সেই জন্যই বোধহয় দিলজিতের প্রতিটি পদক্ষেপই যেন ছবির মতো। বাঙালি আবেগকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক স্টান্ট। অনুষ্ঠান করতে শহরে এসেও হাবেভাবেও বাঙালি হয়ে ওঠেন তিনি। উঠে আসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিবেকানন্দের কথা। সেখান থেকেই শিল্পী সোজা এসে পড়েন করব, লড়ব, জিতব স্লোগানে। এ নিয়ে অবশ্য কিছুটা বিতর্কেও জড়াতে হয়েছে।
কিন্তু স্টেজে গান গাইতে উঠে সুরেলা ভাষায় সব সমালোচনা মাঠের বাইরে পাঠিয়ে, বাঙালির মন জয় করেছেন দিলজিৎ দোসাঞ্জ। আগামী ৬ ডিসেম্বর বেঙ্গালুরু, ৮ ডিসেম্বর ইন্দোর, ১৪ ডিসেম্বর চণ্ডীগড়ের পর ২৯ ডিসেম্বর গুয়াহাটিতে গিয়ে সফর শেষ করবেন গায়ক।