শেষ আপডেট: 15th June 2020 02:30
সুশান্তের আত্মহত্যা: রবিবার সকালে ঘটনা যেভাবে এগিয়েছিল...
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রবিবার সকাল তখন ১০টা। বান্দ্রার কার্টার রোডের সাত তলা আবাসনে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ফ্ল্যাটের পরিবেশ তখন রোজকারের মতই। দু’জন রান্নার লোক রয়েছেন। এক জন পরিচারিকা। সেই সঙ্গে সুশান্তের এক বন্ধুও তখন ছিলেন ফ্ল্যাটে। তিনি আর্ট ডিজাইনার। পুলিশ জানিয়েছে, তার অনেক আগে বেশ সকালেই নাকি ঘুম থেকে উঠেছিলেন সুশান্ত। ১০টা নাগাদ রান্নার লোকের কাছ থেকে এক গ্লাস ফলের রস চেয়ে খান। সেটা খেয়ে কিছুক্ষণ লিভিং রুমে বসে থাকেন। তার পর বলেন, আমি আর একটু ঘুমোব। ডিস্টার্ব কোরো না। এর পরেই বেডরুমে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন সুশান্ত। বেলা গড়াচ্ছে দেখে ঘণ্টাখানেক পরে রান্নার লোক দরজায় টোকা দেন। এক বার, দু’বার, তিন বার। ভিতর থেকে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে ক্রমশ জোরে দরজায় টোকা মারেন। তার পরে জোর গলায় ডাকেন। তাতেও সাড়া না পেয়ে সুশান্তের মোবাইলে ফোন করেন তাঁর বন্ধু। কিন্তু মোবাইল রিং হয়ে যায়। তাতে তাঁদের সন্দেহ ও উদ্বেগ বাড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা প্রথমে সুশান্তের বোনকে নীতুকে ফোন করেন। নীতুই তাঁদের বলেন, একজন তালাওয়ালা ডেকে আনতে। বেলা ১২টা নাগাদ তালাওয়ালা ডেকে যখন দরজা খোলা হয়, দেখা যায় নিজের কুর্তা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে সুশান্তের দেহ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা দেহ নামিয়ে ফেলেন। পুলিশ জানিয়েছে, সুশান্ত সিংহ রাজপুতের দেহ তার আগেই নিথর হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ ও ডাক্তাররা এসে জানান, অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে। মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, আপাত ভাবে আত্মহত্যার ঘটনা মনে হলেও তদন্ত শুরু হয়েছে। যদিও কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। কেন এই চরম পথ তিনি বেছে নিয়েছেন তা খতিয়ে দেখতে সুশান্তের ব্যক্তিগত জীবন ও আর্থিক বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবারের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। তা ছাড়া পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার জানিয়েছেন, শেষ কয়েক ঘন্টা ও গত কয়েক দিনে তিনি কাদের ফোন করেছেন বা মেসেজ করেছেন তাও তদন্ত করে দেখা হবে। গত কাল মধ্য রাতে সুশান্ত তাঁর এক অভিনেতা বন্ধুকে ফোনও করেছিলেন। তবে দেখা গিয়েছে, ওই অভিনেতা বন্ধুর ফোন বেজে গিয়েছিল। তিনি ফোন তোলেননি। গত কয়েক মাস ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এই তরুণ অভিনেতা। একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৬ মাস ধরে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। মুম্বই পুলিশের জোন ৯-এর ডিসি অভিষেক ত্রিমুখে জানিয়েছেন, “ফ্ল্যাটের মধ্যে এখনও সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তাই কোনও রকম ষড়যন্ত্র বা সে ধরনের কিছুর ইঙ্গিত এখনও মেলেনি। তবে সেটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ। গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।” পুলিশ এও জানিয়েছে, সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ানের আত্মহত্যার সঙ্গে তাঁর আত্মহত্যার কোনও যোগসূত্র এখনও পাওয়া যায়নি। কোনও তথ্য প্রমাণও এ ব্যাপারে মেলেনি। তা ছাড়া দিশার আত্মহত্যার ঘটনায় সুশান্তের প্রসঙ্গও কখনও ওঠেনি। পুলিশ কর্তাদের কথায়, সুশান্তের গত কিছু দিনের কল রেকর্ড পরীক্ষা করলে হয়তো বোঝা যাবে শেষ কয়েকদিনে তাঁর মনের মধ্যে কী চলছিল। প্রসঙ্গত, গত ৮ জুন সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ান বহুতলের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। সেই সময়ে তাঁর প্রেমিকও তাঁর সঙ্গেই ছিলেন।