নস্টালজিয়া-সংখ্যাতত্ত্ব কেন এতটা জনপ্রিয়?
শেষ আপডেট: 19 April 2025 09:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নিশ্চয়ই কখনও কোনও গান শুনে আপনার মনে হয়েছে, ‘এটা তো একটা সিনেমার নাম হতে পারে!’ এমন ভাবনা বলিউডে মোটেও অভাবনীয় একেবারেই নয়, যেখানে সৃজনশীলতা আর ট্রেন্ড হাত ধরাধরি করে চলে। এখনকার সময়ে পুরনো দিনের গানের প্রতি মানুষের টান এতটাই বেশি, যেন মাল্টিপ্লেক্সে পপকর্নের থেকেও দ্রুত বিক্রি হয় নস্টালজিয়া। আর সেই সুযোগ নিচ্ছে নির্মাতারা—পুরনো গানের হিট লাইন তুলে এনে বানিয়ে ফেলছেন সিনেমার নাম। ‘তেরি বাতোঁ মে এমন উলঝা জিয়া’ (রাঘবের জনপ্রিয় গান ‘তেরি বাতোঁ’ থেকে), ‘জরা হটকে জরা বঁচকে’ (‘ইয়ে হ্যায় বোম্বে মেরি জান’ গান থেকে) বা ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ (রণধীর কাপুর ও জয়া ভাদুড়ি অভিনীত গানের নাম) — এমন বহু উদাহরণ পাওয়া যায় যেখানে সিনেমার নাম উঠে এসেছে পুরনো গানের লাইন থেকে। এমনকি কিংবদন্তি ‘শোলে’ সিনেমার গান থেকেও হয়েছে ‘জব তাক হ্যায় জান’-এর মতো বিখ্যাত ছবির নাম।
তবে প্রশ্ন হল, কেন এই প্রবণতা এতটা জনপ্রিয়?
নস্টালজিয়ার ম্যাজিক
‘তাল’, ‘পরদেশ’, ‘রাম লখন’-এর মতো ছবির পরিচালক সুভাষ ঘাই জানান, এমন নাম নির্বাচনের প্রধান উদ্দেশ্য দর্শকদের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ একটি সংযোগ সৃষ্টি করা। তবে একইসঙ্গে তিনি এটাও মনে করিয়ে দেন—শুধুমাত্র আকর্ষণীয় নাম যথেষ্ট নয়, সিনেমার কাহিনিও হওয়া উচিত নামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুভাষ বলেন, ‘গান বা কবিতার লাইন ব্যবহার করা সহজ উপায়, তবে গল্পের থিমের সঙ্গে নামের মিল থাকা জরুরি। যেমন ‘দঙ্গল’, ‘তাল’ বা ‘লাপাটা লেডিজ’—এগুলো শুধু নামেই নয়, গল্পেও আলাদা ছাপ রাখে।’
সৃজনশীলতা নাকি মার্কেটিং গিমিক?
গান থেকে নাম নেওয়া নিয়ে বর্ষীয়ান গীতিকার স্বানন্দ কিরকিরে একটু ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, এটা আসলে একটা মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। ‘এটা বহুদিন ধরেই হয়ে আসছে। নামের মাধ্যমে দর্শকদের একটা ধারণা দেওয়া হয় সিনেমা সম্পর্কে। এখন অনেকে গান থেকে লাইন নিয়ে নাম রাখে কিন্তু যথাযথ কৃতিত্ব দেন না, যা সৃজনশীলতাকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করে।’ তবে তিনি এও বলেন, ‘শেষ কথা কিন্তু সিনেমার কনটেন্ট। নাম যতই আকর্ষণীয় হোক, যদি গল্প ভালো না হয়, দর্শক কিন্তু মুগ্ধ হবে না।’
নিউমারোলজির খেলা
বিষয়টি এখানে শেষ হয় না। জনপ্রিয় নিউমারোলজিস্ট সিদ্ধার্থ এস কুমার জানান, বলিউডে এখন সিনেমার নাম নির্ধারণে জ্যোতিষ আর অঙ্কশাস্ত্রের মেলবন্ধন ঘটছে! প্রতিটি বর্ণ, প্রতিটি অক্ষর এক একটি গ্রহের শক্তি বহন করে। সেই শক্তিকে ব্যালেন্স করতেই নামের অক্ষর কমানো, বাড়ানো, বা বদলানো হয়। তিনি বলেন, ‘নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা ফিল্মের এনার্জি তার অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালকের অনুকূল করে তুলি। এটি কোনও আন্দাজের কাজ নয়—এটা একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান।’ বলিউডে যেখানে দু’বার একই অক্ষর ব্যবহার করাও অস্বাভাবিক নয়, দক্ষিণ ভারত বা হলিউডে এই পরিবর্তনগুলো হয় অনেক সূক্ষ্মভাবে। সেখানকার নির্মাতারা চাইছেন এমন নাম, যা জ্যোতিষগত দিক থেকে মানানসই হলেও বাহ্যিকভাবে আলাদা না দেখায়।
নাম, নস্টালজিয়া ও নম্বর—সব মিলিয়ে সাফল্যের রসায়ন
আজকের দিনে ‘ম্যায় তেরা তু মেরি, তু মেরি ম্যায় তেরা’ বা ‘হ্যায় জওয়ানি তো ইশক হোনা হ্যায়’-এর মতো সিনেমার নাম শুনলে বোঝাই যায়, গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাতারা এখন নামেও খেলতে জানেন। কখনও নস্টালজিয়ার টান, কখনও মার্কেটিং-এর চাল, আবার কখনও নিউমারোলজির সুনিপুণ হিসেব—সব মিলিয়ে সিনেমার নাম এখন শুধুই নাম নয়, এটা একদম ক্যালকুলেটেড, ক্রিয়েটিভ ডিসিশন। আসলে, বলিউডে তো সবই সম্ভব। আর শেষে এসে, শেকসপিয়রের বিখ্যাত লাইনটা একটু বলিউডি ঢঙে বললেই চলে—"নাম মে কেয়া রাখাআ হ্যায়?" মনে হচ্ছে, এখনকার দিনে অনেক কিছু!