চলতি বছর কান উৎসবের বিশেষ আকর্ষণই ছিল ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র ফোর কে সংস্করণ। ১৯৭০ সালের এই ক্লাসিক ছবির বিশেষ প্রদর্শনী শুধুই সিনেমা দেখা বা সেই নিয়ে জড়িত মুহুর্ত ফিরে দেখা নয়, ছিল পুনর্মিলনের সূত্রপাতও।
শর্মিলা ঠাকুর ও সিমি গারেওয়াল (গ্রাফিক্স- শুভ্র শর্ভিন)
শেষ আপডেট: 20 May 2025 13:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ফরাসী শহরে বসেছে কান চলচ্চিত্র উৎসবের পসরা। প্রতিদিনই রেড কার্পেট সাক্ষী থাকছে হরেক রকম অভিজ্ঞতার। তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। কে হাঁটছেন লাল গালিচায়, কে কী পরছেন সেদিকে নজর রয়েছে সকলের। পাপারাৎজিরা সবকিছু তুলে ধরছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর মাঝেই ভারতীয় সময় সোমবার মধ্যরাতে ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকল কান-এর রেড কার্পেট। সেই মুহূর্ত মনের ফ্রেমে বন্দি হল দেশবাসীরও। কারণ, সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সৃষ্টি 'অরণ্যের দিনরাত্রি'র প্রদর্শনীতে রেড কার্পে ছুঁলেন বর্ষীয়ান দুই অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর ও সিমি গারেওয়াল।
সোমবার মধ্যরাতে সময় যেন থমকে গিয়েছিল ফরাসি রিভিয়েরার লাল গালিচায়, যখন একসঙ্গে রেড কার্পেটে এন্ট্রি নিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের দুই সাক্ষী, শর্মিলা ও সিমি। কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫-এর ঐতিহাসিক সন্ধ্যায় তাঁরা শুধু সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের নয়, সকলকে মুগ্ধ করলেন একটা আস্ত যুগের প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁদের দেখে মনে হচ্ছিল চোখের সামনে হেঁটে বেড়াচ্ছেন সীতা ও দুলিরা। মিষ্টি করে ভাগ করে নিচ্ছেন মনের ভিতর জমে থাকা এত বছরের গল্প।
চলতি বছর কান উৎসবের বিশেষ আকর্ষণই ছিল ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র ফোর কে সংস্করণ। ১৯৭০ সালের এই ক্লাসিক ছবির বিশেষ প্রদর্শনী শুধুই সিনেমা দেখা বা সেই নিয়ে জড়িত মুহুর্ত ফিরে দেখা নয়, ছিল পুনর্মিলনের সূত্রপাতও। আর কান-এর ভিডিও দেখে স্পষ্ট, ছবির দুই অভিনেত্রীও কিছুক্ষণের জন্য ফিরে গেছিলেন তাঁদের জীবনের সোনালি অধ্যায়ে। হয়তো সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজের মুহূর্ত সেই সময় মনে পড়ছিল দু'জনেরই।
বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক ওয়েস অ্যান্ডারসন, যিনি বহুবার সত্যজিৎ রায়ের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, তিনিও উপস্থিত ছিলেন এদিন। সারা দেশ যখন ঘুমিয়ে তখন নিঃশব্দে গোটা ভারতীয় সিনেমার অতীত-গৌরব তুলে ধরা হয় বিশ্বের দরবারে।
রেড কার্পেটে স্নিগ্ধ শর্মিলা পরেছিলেন শাড়ি। একদম আটপৌরে সাজেই তাঁকে লাগছিল বেশ। গাঢ় সবুজ রঙের অর্গ্যানজা, তাতে সোনালি জরির কাজ। ঠিকরে পড়ছিল অভিনেত্রীর রুচিশীলতার পরিচয়। কানে সবুজ রঙের মানানসই দুল। অর্ধেক খোলা চুল আর বাকিতে আলতো ঢেউ ছিল সময়ের ওপারে থাকা এক পরিণত সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। কোনও বাড়তি জাঁকজমক নয়, শর্মিলার সাজ পরিমিতির মাঝে পরিপূর্ণতা প্রকাশ পেয়েছে প্রতি মুহূর্তে।
এদিকে ৭৬ বছর বয়সে প্রথমবার কানের রেড কার্পেটে পা রাখেন সিমি গারেওয়াল। যৌবন শুধু বয়সে নয়, আত্মবিশ্বাসে থাকে তা প্রমাণ করলেন অভিনেত্রী। সম্পূর্ণ সাদা সূক্ষ্ম কারুকাজ করা ওভারকোট ও নীচে সাদা গাউন পরেছিলেন তিনি। সঙ্গে নজরকাড়া স্টেটমেন্ট নেকলেস। তাঁকে দেখে বোঝাই গেল, সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে আত্মমর্যাদার মিশেল কীভাবে বয়সকে ছাপিয়ে যায়। এদিন সিমির অভিব্যক্তি ও উপস্থিতি ছিল শান্ত, আত্মবিশ্বাসী ও অভিজাত।
শর্মিলা ঠাকুরের কন্যা সাবা পতৌদি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন তাঁদের কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের। যা সকাল হতেই ভাইরাল হয়। অনেকেই বলছেন, এই সন্ধ্যা শুধুই সিনেমার ছিল তা নয়, ছিল এক সংবেদনশীল সময়যাত্রারও। সত্যজিৎ রায়ের ছবির পুনরুজ্জীবন, শর্মিলা ঠাকুর ও সিমি গারেওয়ালের মতো অভিনেত্রীর পুনরাবির্ভাব এবং তাঁদের একসঙ্গে দেখা হওয়া, সব মিলে কান উৎসবের এই মুহূর্ত হয়ে থাকল চিরস্মরণীয়।