গুরু দত্ত যেন এক অস্ফুট হাহাকারের নাম — যিনি নিজের জীবনের অন্ধকার গলিপথে হাঁটতে হাঁটতেই সৃষ্টি করেছিলেন আলো-আঁধারির ভাষা।
গুরু দত্ত
শেষ আপডেট: 17 May 2025 16:25
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতীয় সিনেমার আকাশে এক অনন্য নক্ষত্রের নাম গুরু দত্ত। জন্মেছিলেন ১৯২৫ সালের ৯ই জুলাই। মাত্র ৩৯ বছরের স্বল্প জীবনে রেখে গিয়েছেন এমন এক অমোঘ ছাপ, যা আজও সিনেমাপ্রেমীদের হৃদয়ে অম্লান। অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, কোরিওগ্রাফার, চিত্রনাট্যকার — একাধারে এতসব পরিচয়ের ভার বহন করেও ছিলেন এক নিঃশব্দ প্রতিভা।
নীরবতায় মূর্ত শব্দের ম্যাজিক
গুরু দত্তের সিনেমাগুলি যেন ছিল তাঁর মনের গভীর কষ্টের প্রতিফলন। যশ, খ্যাতি, ভালোবাসার পেছনে ছুটে চলা এক নিঃসঙ্গ প্রাণ, যিনি পর্দায় সৃষ্টি করতেন এমন চরিত্র, যারা জীবনের রঙিন মুখোশ সরিয়ে বাস্তবতার মুখোমুখি হতেন। ‘পিয়াসা’র বিজয় বা ‘কাগজ কে ফুল’-এর সুরেশ সিনহা — তারা যেন স্বয়ং গুরু দত্তের আত্মপ্রতিকৃতি।
পাঁচ দশকের পরতেও এখনও সমান প্রাসঙ্গিক
২০২৫ সালে গুরু দত্তের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে Ultra Media & Entertainment Group তুলে ধরেছে এক বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য। ‘পিয়াসা’, ‘কাগজ কে ফুল‘, ‘চৌদহভি কা চাঁদ’, ‘সাহিব বিবি অউর গুলাম’ — এই সমস্ত কালজয়ী ছবিগুলি আজ পুনরুদ্ধারিত হয়েছে আধুনিক ফোর কে/ টু কে প্রযুক্তিতে। অত্যন্ত যত্নসহকারে করা হয়েছে ফ্রেম-বাই-ফ্রেম রেস্টোরেশন, যেন পুরোনো দিনের সেই ম্যাজিক আবার নতুন প্রজন্মের কাছে ধরা দেয়।
পৃথিবী যদি পেয়ে যাই, তবে কী লাভ?
‘পিয়াসা’ ছবির সেই বিখ্যাত দৃশ্য, যেখানে গুরু দত্ত হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে, যেন খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ ভঙ্গিমায় — সেই মুহূর্ত আজও ছুঁয়ে যায় কোটি দর্শকের মন। মোহাম্মদ রফির গাওয়া ‘ইয়ে দুনিয়া অগর মিল ভি যায়ে তো কেয়া হ্যায়?’ গানটি যেন আজও অনুরণিত হয়ে যায় বিশ্বব্যাপী ক্লান্ত আত্মাদের হৃদয়ে।
বর্ণিল রঙে ধরা দিচ্ছে সাদা-কালোর ফ্রেম
Ultra সংস্থা শুধু রেস্টোরেশনেই থেমে নেই। তারা কিছু ক্লাসিক ছবিকে রঙিন করে তুলছে নিজস্ব প্রযুক্তিতে — যেমন চোরি চোরি, পৈগাম, ইনসানিয়ত ইত্যাদি। উদ্দেশ্য একটাই: অতীতের শিল্পকে ভবিষ্যতের দর্শকদের জন্য জীবন্ত করে তোলা।
পুরনো ও নতুন ছবি
ভারতীয় সিনেমার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
কান চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছে গুরু দত্তের পুনরুদ্ধারিত রত্নগুলি। জুলাই মাসজুড়ে চলবে ভারতের নানা প্রান্তে তাঁর ছবির পুনঃপ্রদর্শন, বিশেষ প্রদর্শনী ও চলচ্চিত্র চর্চার অধিবেশন — যেখানে বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকাররা আলোচনা করবেন তাঁর অমর শিল্পকর্ম নিয়ে।
এক অপ্রকাশ্য বিষাদের সৌন্দর্য
গুরু দত্ত যেন এক অস্ফুট হাহাকারের নাম — যিনি নিজের জীবনের অন্ধকার গলিপথে হাঁটতে হাঁটতেই সৃষ্টি করেছিলেন আলো-আঁধারির অনুপম ভাষা। তাঁর চলচ্চিত্র কেবল বিনোদন নয়, এক সাহিত্যিক উপলব্ধির অভিজ্ঞান। তাঁর শততম জন্মবর্ষে যখন তাঁর সৃষ্টি নতুন আলোয় উদ্ভাসিত, তখন শুধু একটাই কথা মনে পড়ে —‘ইয়ে দুনিয়া অগর মিল ভি যায়ে তো কেয়া হ্যায়?’