শেষ আপডেট: 16 August 2022 04:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তিনি বলিউডের বাদশা। হিন্দি সিনেমা জগতে তাঁর অবদান অস্বীকার করবেন না কেউই। বিশ্বের মানচিত্রে ভারতীয় সিনেমাকে যতজন তুলে ধরেছিলেন, সেই তালিকায় সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনদের পরে নাম থাকবে শাহরুখ খানেরও (Shah Rukh Khan)। কিন্তু বহু জনই হয়তো জানেন না এই শাহরুখেরই পূর্বপুরুষ ছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামী।
তিনি দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের অত্যন্ত কাছের এবং বিশ্বস্ত সহচর জেনারেল শাহনাওয়াজ খান (General Shahnawaz Khan)। এটুকুই কি তাঁর পরিচয়? না, এখানেই শেষ নয়। আজাদ হিন্দ বাহিনীর (Azad Hind Fauz) মেজর হওয়ার পাশাপাশি তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি ব্রিটিশ পতাকা ছুঁড়ে ফেলে লালকেল্লায় সর্বপ্রথম ভারতের তেরঙা জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন। কিন্তু সুভাষের সেই নয়নমণি শাহনাওয়াজ আজ বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছেন।
অসাধারণ নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ছিল তাঁর। সঙ্গে ঝরঝরে ভাষায় দারুণ বক্তৃতা দিতে পারতেন। তাই পরাধীন ভারতে হোক কিংবা স্বাধীন দেশে, তাঁর বক্তৃতা হাঁ করে গিলতেন সাধারণ মানুষ। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সকলে শুনতেন প্রতিটি কথা। এতরকম গুণের জন্যই নেতাজির অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ছিলেন শাহনাওয়াজ, এমনটাই মত বহু রাজনৈতিক বিদগ্ধ ব্যক্তিদের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর লালকেল্লায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত 'লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো'-তে নেতাজির সঙ্গে শোনা যেত শাহনাওয়াজ খানের দুর্দান্ত বক্তৃতাও।
জাতীয় পতাকার উপর ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন! গোয়ায় গ্রেফতার উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা
অবিভক্ত ভারতের বাসিন্দা ছিলেন বিপ্লবী শাহনাওয়াজ খান। দেশভাগের সময় পাকিস্তানে গোটা পরিবারকে ফেলে একাই ভারতে চলে এসেছিলেন। কারণ হিসাবে পরে জানা যায়, তাঁর পরিবার পাকিস্তানেই থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু তিনি চাননি। স্বাধীন ভারতবর্ষে চারবার উত্তরপ্রদেশের মেরঠ থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিবারই বিজয়ী হন তিনি। একইসঙ্গে জায়গাও করে নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়।
কিন্তু তাঁর জীবনে অন্যতম কালো অথবা অন্ধকার অধ্যায় হয়ে থাকবে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। একদিকে তিনি সেইসময় ছিলেন ভারতের মন্ত্রী। অন্যদিকে তাঁর বিপক্ষে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে ছিলেন নিজের ছেলে কর্নেল মেহমুদ আলি। মেহমুদ পাকিস্তান সেনাদলের গুরুত্বপূর্ণ অফিসার পদে ছিলেন। এই খবর জানাজানি হতে ওইসময় বেশ কিছু অতি দেশভক্ত মন্ত্রিসভা থেকে শাহনাওয়াজের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ভরসার হাত কাঁধে রেখেছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী।
কিন্তু শাহরুখের সঙ্গে এই মহান বিপ্লবীর যোগ কীভাবে? সেই গল্পও অনেকের অজানা। আসলে শাহনাওয়াজের একজন পালিত কন্যাও ছিল, যিনি এই দেশেই থাকতেন। তাঁর নাম লতিফ ফাতিমা খান। ফাতিমাকে নিজেই লালন-পালন করে মানুষ করেছিলেন শাহনাওয়াজ। পরে তাঁর বিয়ে দেন আরও এক স্বাধীনতা সংগ্রামী মির তাজ মহম্মদ খানের সঙ্গে। মির ও ফাতিমার প্রথম সন্তানের নামই হলো শাহরুখ খান, যিনি বর্তমানে হিন্দি তথা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা।