শেষ আপডেট: 12th January 2025 11:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সহজ সাদামাটা গল্প। নেই চটকদার দৃশ্যপট কিংবা ক্ষুরধার সংলাপের ভার। আসলে গোটা ছবিটাই নির্বাক। চরিত্রদের কেউই কোনো কথা বলে না। অথচ প্রতিটি ফ্রেমে ধরা আছে মরমি ভিস্যুয়াল। সবচেয়ে তাজ্জবের বিষয়, এই ফিল্ম বানানো হয়েছে একটি ফ্রি এবং ওপেন সোর্স সফ্টওয়ারকে কাজে লাগিয়ে! চলচ্চিত্র-বিশেষজ্ঞ ও অ্যানিমেশনপ্রেমীদের সমাদর তো আগেই মিলেছিল। এবার জুটল গোল্ডেন গ্লোবের স্বীকৃতি। এ বছরের সেরা অ্যানিমেশন ছবির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ‘ফ্লো'-কে। লাটভিয়ার বছর উনত্রিশের গিন্স জিলবালোডিস এই ছবির পরিচালক।
গল্পটা, গোড়ায় যেমনটা বলা হয়েছে, ভীষণই সরল। হঠাৎ করে পৃথিবীজুড়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। একটি কালো বেড়াল কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে তার সঙ্গে বনের অন্যান্য প্রাণীর দোস্তি শুরু হয়। তারপর সকলে মিলে বেঁচে থাকার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শেষে কী হল? তার জন্য ছবিটি দেখতে হবে। রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চারের শিহরণ তো রয়েইছে। তবে তা ছাপিয়ে এই অ্যানিমেশন ফিল্মটি একটি সহানুভূতি ও সমানুভূতির বার্তা পৌঁছে দিতে চায়, যেটা আর পাঁচটা ছবির থেকে একে আলাদা করে তুলেছে।
যদিও ‘ফ্লো’ ইদানীং চর্চায় রয়েছে গল্পের জন্য নয়, তার মেকিংয়ের দৌলতে। ‘ব্লেন্ডার’ নামে একটি অতিপরিচিত, ফ্রি সফ্টওয়ার ইন্টারনেট থেকে চাইলেই ডাউনলোড করা যায়। ইন্ডিপেন্ডেন্ট চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রায় সকলেই এর নাম জানেন। ‘ফ্লো’-এর নির্দেশক জিলবালোডিস-ও ব্লেন্ডারেই আস্থা রেখেছেন। কোনো সুপারকম্পিউটার কিংবা ‘হাই এন্ড’ সফ্টওয়ারের ভরসায় থাকেননি। নিজের দক্ষতায় বিশ্বাস থাকলে যে সীমিত আয়োজনেও বড়ো কিছু করে ফেলা সম্ভব, সেটা আরও একবার প্রমাণ করেছেন লাটভিয়ার এই অখ্যাতনামা তরুণ!
অ্যানিমেশন-ভক্তদের দাবি, এই ছবি আগামী দিনে অ্যানিমেশনের নকশা বদলে দিতে চলেছে। ডিজনির ভাঁড়ারের তুরুপের তাস মনে করা হয় পিক্সার স্টুডিয়োকে। আধুনিক প্রযুক্তির সমস্ত উপাদান জড়ো করে ফি-বছর একাধিক ছবির জন্ম দেয় পিক্সার। প্রোডাকশন দুর্দান্ত হলেও, সব ফিল্ম মনে দাগ কাটে না। ‘ফ্লো’ এসে সেই ধারণাটাই বদলে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্লেন্ডারের মিক্সিং ছবিতে ভিডিয়ো গেমের আমেজ নিয়ে এসেছে। জনপ্রিয় অ্যাডেভেঞ্চার গেম ‘স্ট্রে'-এর সঙ্গে এর ভিস্যুয়ালের প্রচণ্ড মিল খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে ছিমছাম গ্রাফিক্সের কারণে জঙ্গলে ফুটে ওঠা আলো, নদীর জলরাশির ঝিকিমিকি এবং চরিত্রদের অভিব্যক্তি যেন জ্যান্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। ছবিটি যেহেতু নির্বাক, তাই এই ছোট ছোট বিষয় নিখুঁত না হলে আস্ত ফিল্মই মাঠে মারা যেত। আর এখানেই পরিচালক আশ্চর্য মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। সে কারণে ‘ইনসাইড আউট-২’-এর মতো বিগ বাজেটের অ্যানিমেশনকে হারিয়ে গোল্ডেন গ্লোবের খেতাব তুলে দেওয়া হয়েছে জিলবালোডিসের হাতে।