অনীক দত্ত-মাধবী মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: 10th February 2025 19:33
মাধবী মুখোপাধ্যায় নামটা শুনলেই আমার চোখে ভেসে ওঠে ‘চারুলতা’। তারপর বাকি সব। ‘মহানগর’, ‘কাপুরুষ’ এরপর এই ছবিগুলো। হাতে বাইনোকুলার, দোলনা, সাদা-কালো ফ্রেমে ক্লোজ শট, বাঙালি ভুলতে পারবে না, কোনওদিন। আমি মাধবীদির সঙ্গে প্রথম কাজ করি একটি সুগারফ্রি বিস্কুটের বিজ্ঞাপনে। সেই বিজ্ঞাপনে ’চারুলতা’র আইকনিক গান, ‘আমি চিনি গো চিনি’ গানটি ব্যবহার করি। শুধু বিজ্ঞাপনের গানটিতে ‘চিনি’ শব্দটি ছিল না। যেহেতু বিস্কুটটি সুগারফ্রি। এ ছাড়া ‘চারুলতা’য় ওই দৃশ্যে যা যা ছিল, ঠিক তেমন একটি সেট তৈরি করি। সামনে পিয়ানো। সব সাজিয়েগুছিয়ে নিই। আমি ভেবে রেখেছিলাম, বিজ্ঞাপনেও থাকবেন মাধবী মুখোপাধ্যায় এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্রবাবু পিয়ানো বাজিয়ে গান ধরেছেন ‘আমি চিনি গো চিনি’, কিন্তু চিনি বলছেন না, হু হু করছেন। মাধবীদি হাতে চা আর বিস্কুট নিয়ে ঢোকেন, জিজ্ঞেস করেন, সে কি হু হু কেনয চিনির কী হল? সৌমিত্রবাবু বলেন, ‘সুগারটা বেড়েছে তো, তাই চিনি বাদ’। সপ্তক গানটি গেয়েছিল। প্রশংসা পেয়েছিল সেই বিজ্ঞাপন।
তারপর যখন ‘বরুণবাবুর বন্ধু’ করলাম, আবার আমি মাধবীদির কাছে ফেরত গেলাম। আমি ভেবে রেখেছিলাম সৌমিত্রবাবু ছাড়া ছবিটা যেমন হতো না, তেমনই মাধবীদিই ছিল আমার প্রথম পছন্দ। ছবিতে ওঁর বিরাট যে চরিত্র ছিল তা নয়, কিন্তু তাও একবার বলতেই মাধবীদি সম্মতি দিয়েছিলেন। আমায় স্নেহ করতেন, বলেই রাজি হয়েছিলেন। ‘অপরাজিত’র সময় মাধবীদি যেভাবে সাহায্য করেছেন, পাশে থেকেছেন, আমি কোনওদিনও ভুলতে পারব না। ছবি দেখার পরও যা প্রশংসা আমি তাঁর থেকে পেয়েছি, তা আমার সারাজীবনের উপহার হিসেবে থেকে যাবে।
অনেকের কাছে মাধবী মুখোপাধ্যায় (Madhabi Mukherjee) অপরূপা, সুন্দরী কিংবা ডিভা। আমার কাছে তা নয়। আমি মনে করি, মাধবীদি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী একজন অভিনেত্রী। কেতাবি ভাষায় ভীষণ ইনটেলেক্টচুয়াল কিংবা ডিগ্রিধারী উনি নন, কিন্তু ইনস্টিংটিভ অভিনয়ের জন্য যে বুদ্ধিটা লাগে, তা ওঁর রয়েছে। ওঁর মুখের আদলে রয়েছে, এক বুদ্ধিদীপ্ত সৌন্দর্য। আর তাতেই আকৃষ্ট হয়েছেন সত্যজিৎবাবু, তপন সিনহা কিংবা ঋত্বিক ঘটকের মতো পরিচালকদের। আরেকটি বিষয়, এতো স্বনামধন্য সব পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন মাধবীদি, তাই দারুণভাবে বোঝেন ক্যামেরা, কোন দিকে তা রয়েছে, অ্যাঙ্গেল ঠিক কী কিংবা, ক্যামেরাকে কতটা প্যান হচ্ছে, গোটাটাই ওঁর জানা। গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের ভার উনি বোঝেন, ঠিক কী করতে হবে, কতটা করতে হবে, তা উনি জানেন। রিহার্সালে ঠিক যেমনটা করেছেন, শটের সময়ও একই থাকে তাঁর অভিনয়। এক চুলও এদিক ওদিক নয়। তাই আমি বিশ্বাস করি, মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করা প্রত্যেক পরিচালকের কাছে বড় সহজ হয়ে ওঠে।
একটা ঘটনার কথা আজ খুব মনে পড়ছে। একটা আলোচনা সভায়, আমি মাধবীদি (Madhabi Mukherjee)এবং অশোক বিশ্বনাথন (পরিচালক) ছিল। আমি ওঁকে খানিক সাহস নিয়েই জিজ্ঞেস করি, ‘এই যে আপনার বিষয়ে শোনা যায়, যে প্রত্যেক পরিচালক নাকি আপনার প্রেমে পড়তেন, এটা কি ঠিক? উনি একটু মুচকি হাসলেন, তারপর বললেন, ‘আমার প্রেমে পড়ত না বোধ হয়, আমি যে চরিত্রগুলো করতাম, তার প্রেমে পড়তেন!’
জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা, আমার চারুলতা।