শেষ আপডেট: 30th June 2023 09:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অনেক ঝামেলা বিতর্কের পর অবশেষে পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্যের ছবি 'শিবপুর' ৩০জুন মুক্তি পাবে। ইতিপূর্বে পরিচালকের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'অন্তর্লীন', 'ফ্ল্যাট নম্বর ৬০৯ ', 'অন্তর্ধান' সমালোচকদের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। 'শিবপুর' ছবি মুক্তির আগে পরিচালক অরিন্দমের সঙ্গে এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ছবি প্রসঙ্গে নানা অজানা কথা উঠে এল। কথোপকথনে চৈতালি দত্ত।
'শিবপুর'কে ঘিরে অভিযোগ, বিতর্ক, ট্রেলার লঞ্চে আপনি আমন্ত্রণ পেলেন না। এত কিছুর পর অবশেষে ৩০ জুন 'শিবপুর' মুক্তির স্বাদ পেতে চলেছে। প্রযোজনা সংস্থা থেকে আপনি কি প্রিমিয়ারে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন?
সৃজনশীলতার দিক থেকে আমাদের মধ্যে অনেকদিন ধরেই মতবিরোধ চলছিল। তাই নিয়ে প্রচুর ঝামেলাও হয়েছিল। তবুও এত কিছুর পর বলব ছবিটা তো শুধু আমার একার নয়, এটা সকলের। একটা ছবি সবাই মিলে তৈরি করা হয়। প্রিমিয়ারে যাওয়ার জন্য আমাকে মেলে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রযোজক অজন্তা দি আমাকে ফোন করেছেন। আমি খুশি। আমি যাব। ছবিটা মানুষকে দেখাতে পারব এটাই বড় কথা।
আপনার আগের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো থেকে 'শিবপুর' কতটা ব্যতিক্রমী ?
অনেকটাই আলাদা। বাংলা ছবিতে এই ধরনের ঝুঁকি খুব কম পরিচালকরা নেন। কারণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে কাজ করা এবং সেই লোকজন এখনও যাঁরা বেঁচে রয়েছেন তাঁদের উপর ভিত্তি করে একটা ছবি তৈরি করা সেক্ষেত্রে একটা ঝুঁকি তো থেকেই যায়। বাংলা ছবিতে এরকম দুর্ধর্ষ ভায়োলেন্স আগে দেখা যায় নি । ঘটনাগুলো তো সত্য ঘটেছে। আমরা কিছু বানিয়ে ছবিটা তৈরি করিনি। যেভাবে ঘটনা ঘটেছিল ঠিক সেভাবেই দেখিয়েছি। ছবিতে রিয়্যাল ফ্যাক্টর একটা তো অবশ্যই আছে। আর ঝুঁকি যদি না নিতাম তবে সত্য ঘটনা অবলম্বনে কোনও ছবি তৈরি করতে পারতাম না। মানুষজন কেউ সত্য ঘটনা জানাতে পারতেন না। 'শিবপুর' যে কতটা মারাত্মক বা ভয়াবহ ছিল সেটাই তুলে ধরার আমরা চেষ্টা করেছি। বদলে যাওয়া এক অশান্ত এবং অন্ধকারময় শহরের ইতিহাসের কথা বলবে এই ছবি।
এই বিষয় নিয়ে ছবি করার চিন্তা ভাবনা কবে থেকে মাথায় আসে?
আমি তখন 'অন্তর্ধান' ছবি করছি। ২০১৯ সাল। আমার এক বন্ধু তথা অভিনেতা রাজদীপ সরকার শিবপুরে থাকেন। শিবপুরের একের পর এক ঘটনা ওঁনার মুখ থেকে আমি শুনি। ঘটনাগুলো ভায়োলেন্সের দিক থেকে মারাত্মক। তখন আমরা দুজনে মিলে আলোচনা করে স্থির করি যে এটা আমরা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরব। এরপর আমি শিবপুরের প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালে পুরো চিত্রনাট্য লিখে ফেলি। প্রযোজকের চিত্রনাট্য পছন্দ হলে ছবির কাজ শুরু করি । বাস্তবে শিবপুরে হাড় হিম করা ভায়োলেন্স ঘটেছিল। যেমন মাছের বটি দিয়ে মাথা কাটা,মানুষের মুন্ডু দিয়ে ফুটবল খেলা ইত্যাদি। এর সঙ্গে লিঙ্ক করেই আমরা ছবি তৈরি করেছি। চরিত্রের নাম বদল হয়েছে, গল্পের চেহারা পাল্টেছে। কিন্তু ঘটনাগুলো এক রেখেছি।
যেহেতু সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছবি, সেটা কতটা তথ্যভিত্তিক ?
ঘটনাগুলো একদমই তথ্যভিত্তিক যা ইতিপূর্বে খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে । কিন্তু ছবিতে মূল কাহিনি যেভাবে বোনা হয়েছে তার মধ্যে সত্তর-আশি শতাংশ ফিকশন যুক্ত করা হয়েছে। ছবিতে পার্টিকুলার কোনও চরিত্র ধরে আমি এগোইনি। শিবপুরের লোকেশন হল ছবির চরিত্র। সেখানে কিভাবে ওয়াগান ব্রেকিং, চোরাচালান, মারপিট হত, মাফিয়ার রাজত্ব কীরকম ছিল ইত্যাদি আমি গল্পে দেখিয়েছি। ছবিতে সুলতান আহমেদের চরিত্র সত্যি হলেও মন্দিরা বিশ্বাসের চরিত্র কিন্তু ফিকশন। এছাড়া বাকি চরিত্রগুলো অনেকটাই বাস্তব চরিত্রের উপর ভিত্তি করেই তোইরি হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে সেই চরিত্রগুলোর নাম বলতে চাইছি না। সেই সময় শিবপুরে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল তার সঙ্গে পুরোটাই মিল আছে।
কয়েক বছর পর আবার পরমব্রত এবং স্বস্তিকা এক ছবিতে অভিনয় করেছেন। এঁদের অনস্ক্রিনে কিভাবে দেখা যাবে?
অনেকেই হয়তো ভাবছেন ছবিতে পরম এবং স্বস্তিকার কোনও সম্পর্ক আছে। কিন্তু সেটা একেবারেই ভুল। কিছু নেই। বরঞ্চ ওঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেশি আছে। একজন মাফিয়াকে কেন আইপিএস অফিসার মারতে পারছেন না এটা একটা ব্যাপার। আর এই দ্বন্দ্বের কয়েকটা দৃশ্য ছবিতে আছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। সেই চরিত্রকে কীভাবে ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ?
জ্যোতি বসুর লুকস ছিল খুবই ইউনিক। ওটাকে পারফেক্ট করতে হলে অনেক বেশি কষ্ট করতে হত। তাই আমি চেয়েছিলাম যে আমার মুখ্যমন্ত্রী এমন হবেন যাঁর হাবভাব জ্যোতি বসুর সঙ্গে মেলে। তদানীন্তন সময়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। আর উনি সেই সময় সুলতান সিং নামে একজন আইপিএস অফিসারকে শিবপুরের ঘটনা তদন্তের জন্য নিয়োগ করেছিলেন। তবে ছবিতে জ্যোতি বসুর নামের কোথাও উল্লেখ নেই। আমার ছবিতে মুখ্যমন্ত্রীর নাম সি এম রাখা হয়েছে। শিবপুরের ঘটনা তো একটা নয়। ছবিতে পুরো জায়গাটার একটা আঁচ দেবার চেষ্টা করেছি। শিবপুরের পুরো ঘটনাটা দেখাতে গেলে তিনটি ওয়েব সিরিজ হয়ে যাবে। ছবিতে স্বস্তিকা একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে কিভাবে গ্যাং লিডার হয়ে ওঠেন সেটা দেখিয়েছি। শেষে তার কী পরিণতি হল সেটাও ছবিতে রয়েছে । এক সময়ে শিবপুর কতটা ভয়ানক ছিল ,রাতে সেখানকার পরিস্থিতি কেমন ছিল সেটাও ছবিতে ধরা পড়েছে । স্থানীয় মানুষজন সবই জানেন কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না।
এছাড়া ছবিতে আর কী কী ধরা পড়েছে?
ষাটের দশকের একজন মহিলা গ্যাং লিডার কে দেখা যাবে যার এখন অনেক বয়স হয়ে গেছে। কেউ তাকে এখন পাত্তা দেয় না,একটু খিটখিটে ধরনের। বাস্তবে কিন্তু সত্যিই তিনি ছিলেন। এই চরিত্রে মমতা শঙ্কর অভিনয় করেছেন। ছবির সময় কাল ৮০ থেকে ৯০ দশক হলেও বর্তমান সময় তাঁরা এখন কে কীভাবে আছেন সেটা দেখা যাবে।
ছবিতে কারা কারা অভিনয় করেছেন?
মমতা শঙ্কর, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (সুলতান আহমেদ), স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়(মন্দিরা বিশ্বাস), সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়(সাংবাদিক), রজতাভ দত্ত, খরাজ মুখোপাধ্যায়, রাজদীপ সরকার প্রমুখ। সুজন মুখোপাধ্যায় (নীল) কে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয়ে দেখা যাবে। চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন অরিন্দম ভট্টাচার্য। ক্যামেরার দায়িত্বে রয়েছেন প্রসেনজিৎ চৌধুরী। সম্পাদনা করেছেন সুজয় দত্ত রায়। পোশাক পরিকল্পনার দায়িত্বে রয়েছেন সুলগ্না চৌধুরী। পরমব্রতর বৃদ্ধ বয়সের প্রস্থেটিক মেকআপ করেছেন সোমনাথ কুন্ডু। ছবির প্রযোজক অজন্তা সিনহা রায়।
আজকাল ‘নায়ক’ চেনা যায়না, নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের কটাক্ষ মৌসুমীর