শেষ আপডেট: 8th June 2023 14:14
'মুখার্জি দার বউ' ছবির পর নতুন ছবি 'পাহাড়গঞ্জ হল্ট' এর শ্যুটিং সম্প্রতি শেষ করলেন পরিচালক পৃথা চক্রবর্তী। তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফলে দ্বিতীয় ছবিকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশার পারদ ক্রমশ চড়ছে। এখন জোর কদমে ছবি সম্পাদনার কাজ চলছে। চরম ব্যস্ততার ফাঁকে পরিচালক পৃথা এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে ছবি সংক্রান্ত নানা কথা জানালেন। আলাপচারিতায় চৈতালি দত্ত।
'মুখার্জি দার বউ' ছবির বিপুল সাফল্যের পর চার বছর ব্যবধানে দ্বিতীয় ছবি পরিচালনা করতে এতটা সময় লাগল কেন?
আসলে আমি যেভাবে ছবি তৈরি করতে চাইছি সেটা যথাযথ ভাবে তৈরি করতে পারছি কিনা সেটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণে আমাকে প্রযোজকের জন্য অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ অনেকদিন আগেই আমার লেখা হয়ে গেছিল। আমি প্রথম ছবি যে প্যাশন নিয়ে তৈরি করেছিলাম ঠিক সেই ভাবেই এই ছবিটা তৈরি হচ্ছে। সেজন্য আমি প্রযোজকের কাছে কৃতজ্ঞ।
এই ছবিতে আপনি কী ধরনের গল্প বলবেন ?
'মুখার্জি দার বউ' ছবিতে একই পরিবারে শাশুড়ি বউয়ের চিরাচরিত সম্পর্কের বাইরেও দুই নারীর সম্পর্কের ভিন্ন আঙ্গিক দেখিয়েছিলাম। এই ছবির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সম্পর্কের গল্পই আমি বলব তবে তা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। যে কোনও সম্পর্ককেই আমরা একটা চিরাচরিত ছকের মধ্যেই ভাবতে শুরু করি। কিন্তু এমন অনেক সম্পর্ক আছে যা শুধু নাম দিয়ে এবং নির্দিষ্ট সীমারেখায় বেঁধে রাখা যায় না। এই ছবিতে নারী পুরুষের সম্পর্ক আরেকটু নতুনভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছি। নারী পুরুষের একে অপরের ভাল লাগার জন্য কি সেই সম্পর্ককে প্রেমের পথেই নিয়ে যেতে হবে? আপাত দৃষ্টিতে যে সম্পর্ক বিয়ে বা প্রেমে আবদ্ধ সেই সম্পর্কগুলো কিছুটা হলেও আমরা অনুমাপকের মধ্যে বেঁধে দিই। সেগুলোর বাইরে গিয়েও নিজেকে কীভাবে ভালবাসা যায় এবং সাহচর্য মানে কী তা আবিষ্কার করার গল্প বলে এই ছবি। ছবিতে মূল কেন্দ্রীয় চরিত্রে যে দুজন আছেন তাঁদের সম্পর্কটাও ঠিক সেরকমই , নির্দিষ্ট কোনও গল্পের মধ্যে আবদ্ধ নয়।
ছবির নাম পাহাড়গঞ্জ হল্ট কেন?
এটা মূলত মফস্বল শহরের গল্প। জায়গার নাম পাহাড়গঞ্জ। আমার বড় হয়ে ওঠাও রানাঘাটে। ফলে আমার পারিপার্শ্বিক মানুষের সম্পর্ক সেগুলোর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য লেখা। পাহাড়গঞ্জ জায়গাটাও ছবির চরিত্র হিসেবে বড় ভূমিকা রয়েছে। যে জায়গায় পাইলট এবং বীণার দেখা হয়। যেহেতু ছবিতে এই জায়গাটা একটা বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে সেই কারণে ছবির এই ধরনের নাম রাখা। দুটো মানুষ এই স্টেশনে রেলের টিকিট কাউন্টারে চাকরি করেন। তাঁরা যাত্রীদের টিকিট দেন। দুজনের দেখা হয় এই ছোট একটা শহরে। এই মুহূর্তে এর থেকে বেশি বলা সম্ভব নয় বাকিটা ছবি দেখলে বোঝা যাবে।
পারিপার্শ্বিক কোনও চরিত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই ছবির গল্প লেখা?
বাস্তবে দেখা মানুষগুলোকে নিয়ে শুধু যে আমার বড় হয়ে ওঠা তা নয়। এখনও আমার চারপাশে এমন বহু মানুষ আছেন যাঁদের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা আমাকে এই গল্প লিখতে অনুপ্রাণিত করে। চারপাশের মানুষের অভিজ্ঞতাগুলোকে এক জায়গায় একত্রিত করে প্রতিটি চরিত্র আমি নিজের উপলব্ধির মাধ্যমে তৈরি করেছি।
এই ছবির গল্প দর্শকরা নিজেদের সঙ্গে কতটা রিলেট করতে পারবেন বলে আপনার মনে হয়?
আমি খুব আশাবাদী। ছবির মুখ্য চরিত্র বীণা,পাইলট অতি সাধারণ দুটো চরিত্র। প্রচুর মানুষ আছেন যাঁরা এই দুটো চরিত্রের মধ্যে বেঁচে আছেন। তাঁদের নিশ্চয়ই ভাল লাগবে ।
ঋত্বিক এবং পাওলির চরিত্র ঠিক কী ধরনের?
পাইলট বন্দোপাধ্যায়ের মতো বহু মানুষ আছেন যাঁরা একটা সম্পর্কে থেকেও সাহচর্য অর্থটা বুঝতে পারেন না। কারণ অনেক পুরুষদের ক্ষেত্রে আবেগ এবং বোধশক্তির ঘাটতি থাকে। এই ছবির জার্নির মধ্যে পাইলট বন্দোপাধ্যায় সম্পর্কের নতুন অর্থ আবিষ্কার করেন। পাইলট নিজেও পাহাড়গঞ্জ হল্টে এসে নিজের একটা নতুন জার্নি শুরু করেন। অন্যদিকে বীণার ক্ষেত্রে এটা এমন একটা জার্নি সে নিজেকে নতুন করে ভালবাসতে শেখে। সেটা কী কী ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে যায় এবং এঁরা একে অপরকে কতটা প্রভাবিত করে সেটা নিয়ে ছবির গল্প এগোয়। এঁরা একে অপরকে নতুন একটা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জীবনকে দেখার প্রস্তাব দেয়। সেই দৃষ্টিভঙ্গিটাই বদলে দেয় তাঁদের জীবন। খুব চেনা চরিত্রদের গল্প নিয়ে এই ছবি। কিন্তু তাঁদের সরল লড়াইগুলো নিয়ে বোধহয় যথেষ্ট ভাবে কথা বলা হয় না সেটাই ছবির মাধ্যমে আমি বলার চেষ্টা করেছি।
বীণা,পাইলট এই নাম দুটো খুবই ইন্টারেস্টিং। এই নামের পিছনে বিশেষ কোনও কারণ?
(হেসে) এই দুটো নামের পেছনের গল্পটা খুবই মজার। রানাঘাটে আমার বাড়ীর পাড়াতে বীণা পিসি নামে একজন আছেন যাঁর খুব দেরিতে বিয়ে হয়। সেটা নিয়ে পাড়াতে খুব মজার একটা গল্প ছিল। ওঁনার স্বামীর নাম পাইলট। যদিও ছবির গল্পের সঙ্গে ওই দুজনের ঘটনার কোনও মিল নেই। বীণা পিসির যখন বিয়ে হয় তখন আমি খুবই ছোট। কিন্তু কোনও মানুষের নাম যে পাইলট হতে পারে এটা আমার ধারণার বাইরে। যা আমার কোথাও অবচেতন মনে গেঁথেছিল। তাই ছবির মুখ্য চরিত্রদের নামের ক্ষেত্রে এই দুটো নাম আমি শুধুমাত্র ব্যবহার করেছি।
ঋত্বিক এবং পাওলির মতো দক্ষ অভিনেতাদের সঙ্গে একজন তরুণ পরিচালক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আমি এই ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য অনেক সময় ধরে লিখি। তাই প্রতিটা চরিত্র কীভাবে কথা বলবে,তাঁদের আবেগ এবং চরিত্রগুলো নিয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি আমার ভীষণভাবে মাথার মধ্যে ছিল। আমার মনে হয় যত বেশি গুণী মানুষ হন তাঁরা তত বেশি সহযোগিতামূলক কাজে বিশ্বাসী হন। এটা আমার পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি। আমি পরিচালক হিসেবে তরুণ। তবুও বলব পারস্পারিক সম্মানবোধ আমাদের দু‘তরফের থেকেই ছিল যা কাজটা করতে খুব সুবিধা হয়েছে। আর ওঁনারা দুজনেই ওঁদের চরিত্র এত বিশ্বাসযোগ্য ভাবে অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন আশা করি দর্শকদের মনে দাগ কাটবে। আমার ধারণা ঋত্বিক,পাওলির বাইরে গিয়েও বীণা,পাইলট হিসাবে বহু বছর এই চরিত্র মানুষের মনে বেঁচে থাকবে।
পরিচালক হিসেবে প্রথম ছবিতেই সাফল্য, ফলে দ্বিতীয় ছবি ঘিরে মানুষের প্রত্যাশার পারদ ক্রমশ বাড়ছে। পরিচালক হিসেবে আপনার কাছে সেটা কতটা বাড়তি চাপ?
২০১৯ এ 'মুখার্জি দার বউ' ছবি করার সময় আমি অনেকটাই ছোট ছিলাম। ফলে চার বছরের ব্যবধানে আমার বয়স ,অভিজ্ঞতা একটু বেড়েছে। জীবন আরও অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি এইটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি আমার খ্যাতি, জনপ্রিয়তা সবই আমার কাজের উপর নির্ভর করে। ছবির জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এটাও মাথায় রাখতে হয় মানুষ আমাকে চাইছেন নাকি আমার কাজকে পছন্দ করছেন। আমার প্রথম ছবি একশো শতাংশ দিয়ে তৈরি করেছিলাম। তার থেকেও আরও বেশি শ্রম, ভালবাসা ,যত্ন নিয়ে এই ছবিটা তৈরি করেছি। কাজটাকে আরও ভাল করে করার চেষ্টা করেছি। যদি আরও চার বছর ছবি না করি 'পাহাড়গঞ্জ হল্ট' এর জন্য দর্শক যদি আমাকে মনে রাখেন সেটাই হবে আমার বড় পাওনা। আমি নিজেও অনেকটা বীণার মতো। কোভিডের ঠিক আগের মুহূর্তে আমার বিয়ে হয়। তারপরেই লকডাউন, দীর্ঘসময়ের বিরতি। আমার স্বামীর সঙ্গে থাকতে থাকতে সেই সময়ে আমি নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছি। সেটারও প্রভাব চিত্রনাট্যে রয়েছে।
ছবিতে কারা কারা অভিনয় করেছেন?
সোহাগ সেন, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, শ্যামল চক্রবর্তী প্রমুখ গুণী শিল্পীরা ছাড়াও থিয়েটারের কিছু নতুন শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। আমোদপুর ,লাভপুর এবং বনপাস রেল স্টেশনে শ্যুটিং হয়েছে। ছবিতে ক্যামেরার দায়িত্বে রয়েছেন অভিমন্যু সেনগুপ্ত। সম্পাদনা করছেন শুভজিৎ সিংহ। সুরারোপ করেছেন রনজয় ভট্টাচার্য। পোশাক পরিকল্পনার দায়িত্ব রয়েছেন তৃষিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রমোদ ফিল্মস প্রযোজিত এই ছবির প্রযোজক প্রতীক চক্রবর্তী।
সোনাঝুরির রঙে রঙিন জয়া-স্বস্তিকা! ফ্যাশনে এপার-ওপার দুই বাংলা মিলেমিশে একাকার