গতকাল মুক্তি পেয়েছে অনুরাগ বসুর বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘মেট্রো ইন দিনো’। কিন্তু সিনেমা রিলিজ মানেই বিশ্রাম নয় তাঁর কাছে—বরং শুরু এক নতুন ছুটে চলা। কখনও মুম্বই, কখনও পুনে—শহর থেকে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিজের ছবিকে নিয়ে।
অনুরাগ বসু
শেষ আপডেট: 5 July 2025 08:33
গতকাল মুক্তি পেয়েছে অনুরাগ বসুর বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘মেট্রো ইন দিনো’। কিন্তু সিনেমা রিলিজ মানেই বিশ্রাম নয় তাঁর কাছে—বরং শুরু এক নতুন ছুটে চলা। কখনও মুম্বই, কখনও পুনে—শহর থেকে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিজের ছবিকে নিয়ে। ব্যস্ততা এতটাই যে, ফোনে ধরার ফাঁকেও বারবার নেটওয়ার্কের টানাপড়েন! তবুও পর্দার গল্পের মতোই মনোযোগ দিয়ে কথা বললেন, হালকা হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, ‘চিন্তা নয়, কাজ নিয়েই… একজন ফিল্মমেকার জানেন সিনেমা রিলিজের আগে ঠিক কতটা টেনশন থাকে। কত কাজ থাকে।’
অনুরাগ বসুর ছবিতে এক অদ্ভুত মায়া থাকে। তাঁর ক্যামেরা যেন শহরের ভিড়, ব্যস্ততা, সম্পর্কের জটিলতা সব কিছুকেই নতুন করে চিনিয়ে দেয়। কখনও বরফি'র সরলতায় হৃদয় ছুঁয়ে যায়, কখনও আবার জগ্গা জাসুস-এর রহস্যে মিশে যায় শিশুসুলভ বিস্ময়। ‘মেট্রো ইন দিনো’ তারই এক নতুন অধ্যায়—যেখানে আবার ফিরে এসেছে সম্পর্কের টানাপোড়েন, আধুনিক শহরের একাকীত্ব, আর কথাহীন অনুভবের গল্প।
তবে শুধু পরিচালক নয়, অনুরাগ এই ছবির লেখক, স্ক্রিনপ্লে রচয়িতা, প্রযোজক এবং সিনেমাটোগ্রাফারও। তিনি বললেন, ‘যদি আলাদা ক্যামেরাম্যান থাকত, তবে আমি পোস্ট প্রোডাকশনের সাউন্ড নিয়ে কাজ করতে পারতাম। এখন সব দায়িত্ব একসঙ্গে সামলাতে হয়। তাই পোস্ট প্রোডাকশনেই ঘুম উড়ে যায়।’
‘লাইফ ইন আ মেট্রো’র পর এতদিন পর আবার এই শহরের গল্পে কেন ফিরলেন, সেই প্রশ্নে তিনি জানান, ‘জগ্গা জাসুস শেষ হওয়ার পরেই লেখা শুরু করেছিলাম, কিন্তু কিছুতেই ঠিক হচ্ছিল না। পরে চার-পাঁচ বছর আগে ১০-১৫ দিনের মধ্যে লিখে ফেলি স্ক্রিপ্টটা। এখন শহর বদলেছে, সময় বদলেছে, তাই গল্পটা নতুনভাবে ফিরে আসার সময় হয়েছিল।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘সব পরিচালকেরই একটা ছবি তৈরি করতে সময় লাগে—রাজকুমার হিরানি হোন বা সঞ্জয় লীলা বনসালী—আমি মোটেও ধীরে কাজ করি না।’
সিনেমায় যত সম্পর্কের জটিলতা, বাস্তবে কিন্তু জীবন নিয়ে খুব একটা সংশয় নেই তাঁর। এমন কোনও দিন এসেছে কি, যেদিন মনে হয়েছে, "সব ছেড়ে চলে যাই"? একদম স্পষ্ট উত্তর তাঁর—‘না, এমনটা কখনও মনে হয়নি। আমি যেখানেই যাই, ঘুরে ফিরে বম্বেতেই ফিরি। এই শহরই আমায় টানে।’ তবে কলকাতা নয়, বরং শান্তিনিকেতনই তাঁর শান্তির ঠিকানা। বললেন, ‘কলকাতা আমার তেমন টানে না, তানির (স্ত্রী) ক্ষেত্রেও তা-ই। কারণ আমাদের বাচ্চার স্কুলিং, জীবন সব এখানেই। শান্তিনিকেতন বরং টানে।’
বাঙালি খাবার, পুজোর জোগাড়, আবেগ—সব কিছুতেই মন পড়ে থাকলেও বাংলায় ছবি তৈরি করা হয়নি এখনও। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কেন? অনুরাগের উত্তরটা বড় বাস্তব—‘লাভটা সিনেমা দেখার সংখ্যায়। আমি চাই আমার ছবি সবাই দেখুক। শুধু বাঙালি নয়, সব ভাষাভাষীর মানুষ। এখন সিনেমার ভাষা কেবল ভাষা নয়, অনুভব। আমি চাই, সেটাই সকলের কাছে পৌঁছাক।’
অনুরাগ বসু নিজের ছবির মতোই গভীর, চিন্তাশীল, আর বাস্তব। মেট্রো ইন দিনো শুধু সিনেমা নয়, এক সময়ের দলিল। যেখানে সম্পর্ক, শহর, মানুষ—সব একসঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়েছে ক্যামেরার ক্যানভাসে। ‘সব ফেলে চলে যাওয়ার’ নয়, বরং বারবার ফিরে আসার গল্পই বলেন অনুরাগ। ঠিক যেমন তাঁর সিনেমা—প্রতিবার নতুন, প্রতিবার মন ছুঁয়ে যাওয়া।