জমে উঠেছিল উত্তরপাড়া সঙ্গীত চক্রের তবলা-লহরী

উত্তরপাড়া সঙ্গীত চক্রের সঙ্গীত অ্যাকাডেমি আয়োজন করেছিল উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। এটি বার্ষিক অনুষ্ঠান না হলেও ত্রৈ-মাসিক এই আসরটি বেশ নজর কেড়েছিল। সঙ্গীত অ্যাকাডেমির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সব্যসাচী সরকার শুরুতেই জানিয়েছিলেন যে, এবারের অনুষ্ঠানের আকর্ষণ থাকবে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতভিত্তিক তবলা-লহরী। প্রবীণ তবলিয়া পণ্ডিত বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর দু-ঘন্টার তবলা-লহরীতে এমনই আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি করেছিলেন যা শ্রোতাদের মনে চির-স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কখনও তিনি নিজে, কখনও ছাত্রদের সঙ্গে এমনই বোল আর তালের সঙ্গম ঘটালেন যা নতুন প্রজন্মের কাছে যথেষ্ট শিক্ষনীয়। শিল্পীরা অত্যন্ত সাবলীল ভাবে সঠিক পদ্ধতিতে থিরাকুয়া বাজ ঘরানায় প্রথমে রূপক ও পরে তিনতালে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের শেষ মার্গে বিচরণ করলেন। প্রবীণ তবলিয়ার সঙ্গে যথেষ্ট যোগ্যতার সঙ্গে সঙ্গত করলেন সুমন কাঁড়ার, অমিয় চৌধুরী, জয়দীপ চক্রবর্তী, সুমন দাস, রীতম পাল ও তাপস রানা। হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করলেন অমিতাভ ঘোষ।
আসরটি জমে ওঠে যখন রূপক তালে ঠেকা দিয়ে শুরু করেই পরে উঠান, পেশকার, কায়দা, রেলা, গৎ, গৎকায়দা, টুকরা, চক্রধার, দমদার, তেহাই দিয়ে শেষ হয়। মনে রাখার মত বাদন। অনুষ্ঠানের শেষে প্রবীণ তবলিয়া বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় ও এই প্রজন্মের তবলিয়া সুমন কাঁড়ার দ্বৈত ভাবে কিছু রাজগ-শৈলী পরিবেশন করলেন।
অনুষ্ঠানের কৌলীন্য বাড়ালেন উত্তরপাড়া সঙ্গীত চক্রের সদস্য নৃপেন্দ্রনাথ বর্মণ, ইন্দ্রনাথ পাল, রমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ চক্রবর্তী, রঞ্জন সেনগুপ্ত, কুণাল বিশ্বাস প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। এ দিন শুরুতেই সমবেত রাগ-সঙ্গীতে অংশ নিয়েছিলেন সংস্থার সদস্যরা।
বিপ্লবকুমার ঘোষ
প্রভাতফেরি ও মৌলী

মৌলী'র মৌলিকত্ব এই দলের সাতজন সদস্য এবং সাতজনই মেয়ে, যারা অনায়াসে চার শতাধিক মানুষকে জড়ো করে ফেলতে পারে। না, কোনও রাজনৈতিক দাদা বা ধর্মীয় মাতাজি বা গুরুজির - 'ভালো থাকিবার উপায়' বাতলানোর জন্য নয়। শুধু মাত্র একটি দিন, সক্কাল বেলা ঘরের সব কাজ ফেলে, দল মত ধর্ম নির্বিশেষে মৌলী'র ডাকে সাড়া দিয়ে জুটে যান সবাই। আট থেকে আশি, আক্ষরিক অর্থেই।
দিনটা অবশ্যই বিশেষ। পয়লা বৈশাখ। বাঙালির আবেগের দিন। এই একটি দিনই বোধহয় আছে বাঙালির কাছে, যেদিনটিতে বাঙালি শিকড়ের খোঁজ করে। আর মৌলী এই কাজটাই করে আসছে ২০১৫ সাল থেকে। জন্মলগ্ন থেকে ২০১৯ এর পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত থামা নেই।
তাই এবারেও নববর্ষের সকালে চার শতাধিক মানুষ, চল্লিশটি দল, তার মধ্যে কুড়িটি দলের নানা বয়সের পুরুষ এবং মহিলা সদস্যের নাচ, গান, আবৃত্তি পরিবেশন এর মাধ্যমে প্রভাতফেরি আয়োজন করে উত্তরপাড়ার 'মৌলী'। সকাল ছ'টায় উত্তরপাড়া গৌরী সিনেমা হলের সামনে থেকে শুরু হয় চলা। শেষ হয় সিএ মাঠে। একটানা তিন ঘন্টা, শিল্প সংস্কৃতি জগতের মানুষ থেকে সব বয়সের সাধারণ মানুষের উজ্জ্বল বর্ণময় উপস্থিতি ও সক্রিয় যোগদানের কারণে এই প্রভাতফেরি মৌলী'র সাফল্যে নতুন মাত্রা যোগ করে।
স্মরণে সফদার

১২ এপ্রিল সফদার হাসমির ৬৫ তম জন্মদিনে তাঁকে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করলেন উত্তরপাড়া সম্মিলিত নাট্য সংসদ। কৃষ্ণকলি দাশের আবৃত্তি, খেয়াল খোলা উত্তরপাড়া ও ভদ্রকালী আর্ট এ্যন্ড কালচার এর দুটি ছোট্ট নাটকের পর কথা নাট্য সংস্থার সফদার হাসমির হত্যা এবং তার আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যেই সফদারের স্ত্রী মলয়াশ্রী হাসমির হাল্লা বোল নাটকটির পুনরায় মঞ্চস্থ করার ঘটনাটি দর্শকবৃন্দের কাছে উপস্থাপিত করেন একটি সংকলন পাঠের মাধ্যমে। পথ নাটক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সফদার হাসমির হত্যা যে ব্যক্তি সফদার হাসমি কে হত্যা করা, তাঁর কর্মকাণ্ড কে নয়, তা মনে করিয়ে দেন নাট্য সংসদের সভাপতি তপন দাস। উত্তরপাড়ার প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে পথ নাটককে সামাজিক অন্যায় ও অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী মাধ্যম করে তোলার অঙ্গীকার করেন নাট্য সংসদের সদস্যরা।
শুভাশিস দে