Advertisement
রূপম ইসলাম
Advertisement
শেষ আপডেট: 21 April 2025 13:54
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একটি ঘরে তখন রিহার্সাল করছে ছেলেটা। বাংলা রক সংগীতের চলন, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কাটাছেঁড়া চালাচ্ছে। ঠিক তখনই ভেতরের ঘর থেকে ডাক এল: বাবা অসুস্থ। দেখে যাও একবার।
তক্ষুনি সবকিছু ছেড়ে ছুটে গিয়েছিল সে। যাওয়ার পর দেখেছিল বাবা বিছানায় শুয়ে৷ চোখমুখ বিষণ্ণ, মলিন। কাছে ডেকে, হাতে হাত রেখে শুধু বলেছিলেন, ‘আমি ঠিক আছি। তুই গিয়ে নিজের কাজ কর।’
ঠিক ছিলেন না তিনি। সেটা খানিক বাদেই বোঝা যায়। শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু। কারও কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা যান নুরুল ইসলাম৷
বাবার মৃত্যুই কি খুলে দিল রূপমের চোখ? যে রাস্তা তিনি হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন, ব্যক্তিগত শোক কি সেই আঁধারপথের যষ্টি হয়ে উঠল? ‘বাংলা রক সংগীত’ নামক যে-বেদীতলে নিজেকে নিবেদন করবেন, হয়ে উঠবেন আস্ত একটি প্রতিষ্ঠান, গড়ে তুলবেন গোষ্ঠী, যারা শুধু গানবাজানা নয়, বাংলার উঠতি প্রজন্মের মুখের ভাষা জোগাবে, মেটাবে মনের আশ—একটি মৃত্যু ও তজ্জনিত শোকের ‘অবদান’ তাতে কতখানি?
এমনই টুকরো টুকরো বিষয়ে আলো ফেলেছেন স্বয়ং রূপম ইসলাম। আয়োজনের নাম: ‘রকবাজ’। নিবেদনে: দ্য ওয়াল৷ অনুষ্ঠানের প্রথম এপিসোড প্রকাশিত হয়েছে গত শুক্রবার৷ মুক্ত মঞ্চে গান গাইতে সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ যিনি, উদাত্ত সুর, উদ্দাম তালছন্দে দর্শক-শ্রোতার শোণিতে ঝড় তোলেন যে ঝাঁকড়া চুলের বিদ্রোহী রূপম, সেই তিনিই ভিডিও পডকাস্টের আসরে অনেকটাই ‘অচেনা’ মেজাজে। শিল্পী এখানে একক। তবে একাকি নন। চারপাশে যন্ত্রশিল্পী, সহশিল্পীদের ভিড় নেই ঠিকই। কিন্তু রয়েছে সেই গ্যালারি-ছাপানো শ্রোতার অদৃশ্য উপস্থিতি। নিরালা স্টুডিওতে ক্যামেরার দিকে চোখ পেতে হয়তো তাদের দিকে চেয়েই বলে গেছেন নিজের ‘হয়ে ওঠা’র কথা। সেই সূত্রে এসেছে গানের প্রসঙ্গও৷
পডকাস্ট মানেই তো তাই। কথা, গান মিলিয়ে-মিশিয়ে সংগীতশিল্পীর ব্যক্তিগত ‘মনোলগ’। রকবাজের প্রথম এপিসোড পডকাস্ট হিসেবে তার চরিত্রধর্ম অক্ষুণ্ণ রেখেছে। বাংলা নববর্ষের আবহে রিলিজ করেছে ফার্স্ট এপিসোড। তাই অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলার নতুন বছর, হালখাতা নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতির অতলে ডুব মেরেছেন রূপম। বাংলার সংস্কৃতি কী ছিল, এখন কোথায় দাঁড়িয়েছে—এই নিয়ে বিলাপ না গাইলেও রুচিবদলের প্রসঙ্গটুকু তুলে ধরেছেন তিনি৷
পডকাস্ট, সেটাও সঞ্চালক ছাড়া স্রেফ আত্মকথনের মেজাজে যখন আয়োজিত হচ্ছে, তখন তাতে কথার পিঠোপিঠি কথা, সুরের পিছুপিছু সুর আসবে, এটাই স্বাভাবিক৷ তাই রূপক যখন গেয়ে ওঠেন, ‘আমি কোন প্রত্যয়-পর্বতে আমার ধ্রুবক রাখি/ এখনও তোমায় দেখানো বাকি।’ তখন তাতে অগ্নিশুদ্ধ ব্যক্তিগত শোক, বাবাকে হারানোর যন্ত্রণা, তাঁকে সাফল্যের নিশান দেখাতে না পারার হতাশা আর সবকিছু ছাপিয়ে যায়।
এখানেই কথা-গানে সাজানো পডকাস্টের মজা। পর্দার আড়ালে একটি গানের গান হয়ে ওঠার রহস্য জানা যায়৷ সেটাও স্রষ্টার মুখে। ফলে লিরিক ‘খাঁটি’ অর্থস্তর নিয়ে, সুর ‘নিখাদ’ দরদ নিয়ে হাজির হয়। কোন মানসিক অবস্থায় গান রচিত হল—সবটুকুর সত্য মেলে ধরেন গায়ক।
কিন্তু শিল্পীর জীবন তো শুধুই বিয়োগব্যথায় জারিত নয়। তাতে ছাপ ফেলেন এমন অনেকে যাঁদের হয়তো আসার কথাই ছিল না। রূপমের জীবনে তেমনই একজন মাকসুদুল হক৷ বাংলাদেশের গায়ক। ‘ফিডব্যাক’ ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য। তাঁর কিছু কথা, যেমন: ‘রবীন্দ্রনাথ আজ বেঁচে থাকলে আমাদের পথেই চলতেন’, রূপমকে আশ্বাস জোগায়। বুকে বল পান তিনি। তাহলে রকসংগীতের যে অভিসারে নেমেছেন সদলবলে, তার পথ পিচ্ছিল হলেও অন্তহীন, আঁধার-মলিন নয়!
এভাবেই মাকসুদুলের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ-পরিচয়, সাক্ষাৎকার নেওয়া, উপমহাদেশের গানবাজনা নিয়ে ধারাবাহিক কলাম রচনা বাউন্ডুলে কিশোর রূপমকে কখন রূপম ইসলাম নামক কালচারাল আইকনে পরিণত করল, কীভাবে গান ছাড়াও সংস্কৃতির অন্যান্য অলিন্দে অন্তর্ঘাত হানলেন তিনি, উত্তর জানা যাবে ‘রকবাজে’র পরের পর্বে৷ প্রকাশিত হবে আগামী শুক্রবার৷
Advertisement
Advertisement