টলিপাড়ায় অচলাবস্থা!
শেষ আপডেট: 7th February 2025 15:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাস রাজনীতিক। চলচ্চিত্র বা সিরিয়ালের পরিচালক নন। কিন্তু স্বরূপ যেন পরিচালকের থেকে কমও নন!
ফেডারেশন ও পরিচালক গিল্ডের ঝামেলার জেরে বৃহস্পতিবার রাতেই পরিচালকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, শুক্রবার থেকে তাঁরা আর কাজ করবেন না। যত দিন না ঝঞ্ঝাট মেটে, ফ্লোরে যাবেন না। যার ফল শুক্রবার সকাল থেকে টলিপাড়ায় শ্যুট থমকে যায়। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন—পুরোপুরি বন্ধ।
ঠিক এমনই অবস্থায় মধুসূদন দাদার মতো অবতীর্ণ হন স্বরূপ বিশ্বাস। টলিপাড়ায় স্বরূপের নেতৃত্বে কর্মবন্টনের যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা গোটা সমস্যার মূলে বলে অনেকেরই অভিযোগ। তাতে অবশ্য স্বরূপের আসন এক মিলিমিটারও টলেনি। বরং পরিচালকদের হুঁশিয়ারি ফুৎকারে উড়িয়ে এদিন স্বমহিমায় দেখা যায় স্বরূপ বিশ্বাসকে। সকাল থেকেই তৎপর। ফ্লোরে ফ্লোরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোন শুটিং হচ্ছে না, তাও খতিয়ে দেখছেন। সহকারী পরিচালকদের দিয়ে কাজ চালানো যায় কিনা সেই চেষ্টাও স্বরূপ চালাচ্ছেন টলিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়ায়। অর্থাৎ গোটা টলিপাড়ার বর্তমান চিত্রনাট্যের এখন ‘পরিচালক’ যেন স্বরূপই।
টলিপাড়ার শিল্পীদের কাছে কলটাইম হাতে এসে পৌঁছেছিল বৃহস্পতিবার রাতেই। তাঁদের জানানো হয়েছিল, ঠিক কখন আসতে হবে শুক্রবার। সেই মতো সকাল সকাল ফ্লোরে চলে আসেন শ্বেতা ভট্টাচার্য, উদয় প্রতাপ সিংরা...। কিন্তু ক্যাপটেন অব দ্য শিপ অর্থাৎ পরিচালকরাই তো নেই! বন্ধ টেলিপাড়ার একগুচ্ছ ধারাবাহিকের শুটিং। সেই তালিকায় রয়েছে, 'পরিণীতা, গীতা এলএলবি, ফুলকি'র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকও!
এমনিতে হাতেগোনা বাংলা ছবি হিট, ভরসা ধারাবাহিকই। তার মধ্যে যদি কাজও বন্ধ থাকে তবে তো রুজিতেও টান পড়বে সকলের! দ্য ওয়ালকে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, "আলোচনা না করেই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিচালকরা। আমি সকাল থেকেই ফ্লোরে ফ্লোরে যাচ্ছি। গিয়ে পরিস্থিতি দেখব। তারপরেই সিদ্ধান্ত নেব।"
দ্য ওয়ালের তরফে যোগাযোগ করা হয় গত এক মাস ধরে টিআরপি তালিকায় প্রথম স্থানে দখল করে থাকা ধারাবাহিক ‘পরিণীতার’ কৃষ বসুর সঙ্গে। তিনি জানান, ফ্লোরে যাননি তিনি। শিল্পীরা এসেছেন। তবে তাঁরাও আতান্তরে। পরিচালকরা না এলে কাজ শুরু করবেন না তাঁরা। কৃষের কথায়, "কর্মবিরতি তো চাইনি কেউই। আলোচনাই চেয়েছি। তা হয়নি। তাই নিজেদের কাজ থেকে প্রত্যাহার করেছি। কেউ যদি মনে করেন সহকারী পরিচালকদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে তাহলে তাই করা হোক।" ফুলকিরও শুটিং বন্ধ, জানালেন পরিচালক রাজেন্দ্রপ্রসাদ। বললেন, "আমি যাইনি ফ্লোরে। তবে শিল্পীরা এসেছেন।"
ফেডারেশনের অন্তর্গত পরিচালকদের গিল্ড। রয়েছে সহকারী পরিচালকদের গিল্ডও। পরিচালকরা নিজেদের প্রত্যাহার করেছেন কাজ থেকে। সহকারীরা করেননি। ওদিকে অধিকাংশ শিল্পী আবার পরিচালকদের অনুপস্থিতিতে কাজ করতে নারাজ। এই যেমন অভিনেত্রী শ্বেতা ভট্টাচার্য। ছলছল চোখ, দ্য ওয়ালের সামনে কার্যত কেঁদে ফেললেন তিনি। বললেন, "সকাল থেকে এসে বসে আছি। শুটিং হচ্ছে না। পরিচালক নেই। দমবন্ধ লাগছে। এমনটা তো কেউই চাইনি।" ]
গত দু'দিন ধরেই পরিচালকদের গিল্ড জানিয়েছিল ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় তাঁরা। ফেডারেশনের তরফে সাড়া মেলেনি। সে কারণেই বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর ডিরেক্টর্স গিল্ড-এর সভাপতি সুব্রত সেন এবং সম্পাদক সুদেষ্ণা রায় জানান, শুক্রবার থেকে ফ্লোরে আসবেন না পরিচালকেরা।
স্বরূপের অবশ্য বক্তব্য, "আমরা যে কোনও সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমাদের কিছু না জানিয়েই পরিচালকেরা কর্মবিরতির ঘোষণা করেছেন।’’ কেন ফেডারেশনের কাজের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিচালকরা তা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। গত বছরও পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের এক ছবিকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয় টলিপাড়ায়। সে সময়ও সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকে শুটিং। পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান হলেও ফের একই কাণ্ড! এর শেষ কোথায়? উত্তর যদিও অজানা।