শেষ আপডেট: 14th December 2024 18:56
ফেলুদা বলে কথা! একটু কাল্টিভেট তো করে দেখতেই হচ্ছে। বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা তিনি। তাই প্রদোষচন্দ্র মিত্র পর্দায় হাজির হলে তা নিয়ে দর্শকদের বাড়তি কৌতূহল থাকেই। তাছাড়া ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলেই এতদিন শোনা যেত, পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় তাঁর পরবর্তী ফেলুদার ওয়েব সিরিজের কাজে হাত দিতে প্রস্তুত। এবার আর তা হবে না। হ্যাঁ, এক্কেবারে ঠিক শুনছেন। সৃজিত আর ফেলুদা নিয়ে কাজ করবেন না। এমনটাই জানালেন ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ ওয়েব সিরিজের ট্রেলার লঞ্চের দিন।
আজ ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’-এর ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৃজিতের ফেলুদা টিমের টোটা রায়চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী এবং কল্পন মিত্র, ঋদ্ধি সেন, রজতাভ দত্ত। ‘ভূস্বর্গ’ যতই ‘ভয়ঙ্কর’ হোক না কেন, টোটাকে দেখা যায় ফেলুদার মেজাজে। তবে এবার ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানে তাঁর চোখে জল আসতে দেখা গেল। নেপথ্যে ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ই সৃজিতের শেষ সিরিজ হতে চলেছে। এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই সৃজিতের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে টোটার চোখে জল চলে আসে।
মন খারাপের খবর শোনাতে গিয়ে সৃজিত বলেন, 'যখনই আমি শুটিং করি, একটা চোদ্দ বছরের সৃজিত মুখোপাধ্যায় আমার মনিটরের পাশে বসে থাকে। সে সব সময় আমাকে বলে যে তুমি এই ভুলটা করতে পারো না। এই দৃশ্যটা পাল্টে দাও। এটা করো, ওটা করো। তাই ফেলুদা নিয়ে কাজ করাটা আমার কাছে সব সময়ই খুবই আনন্দের। ৪টে ফেলুদা করে এখন আপাতত টাটা বাই বাই করে চললাম। আমি মনে করি এতদিনের এই যাত্রাটা সবার জন্যই খুব আনন্দের। তবে ফেলুদা থামলে চলবে না। সেটা যেন সিজনের পর সিজন চলতে থাকে। আমি আপাতত দূরে যাচ্ছি ফেলুদা বানানোর থেকে।'
যখন সৃজিত এই ঘোষণায় ব্যস্ত, তখনই চোখে জল টোটার। তারপরেই অনির্বান বলেন, 'আমি মনে করি সৃজিতের সঙ্গে কাজ করতে সবার ভাললাগে। আমিও খুব খুশি এই চরিত্র করায়। এর আগে যাঁরা ফেলুদার গল্পে অভিনয় করতেন, তাঁদের সঙ্গে যে আমাদের তুলনা হবে, সেটা জেনেও আমরা ঝাঁপিয়ে পড়েছি সবাই মিলে সৃজিতের সঙ্গে কাজ করতে। আমার কাছে খুব ভাল একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে। সেই সঙ্গে অনেক কিছু শিখতেও পেরেছি।'
মন খারাপের মুহূর্তে হঠাৎই হাসি মুখে বলতে শুরু করলেন রজতাভ দত্ত। তিনি অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন, 'আমি যতবারই কাজ করতে যাই, মনে হয় প্রতিবারই নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি করছি। এটা আমার তিন নম্বর ফেলুদা তিনজনের সঙ্গে। সৃজিতের সঙ্গে দ্বিতীয় কাজ। কাশ্মীরে এই নিয়ে আমি দু'বার গেলাম কাজের জন্য। যখন আমার কেরিয়ার শুরু হচ্ছে, অর্থাৎ ২০০২, তারপরে ২০১৪, আর এখন ২০২৪, ফলে গোটা জার্নিটাকে আমি উপভোগ করেছি। সবাই ফেলুদা পড়তে পড়তে বড় হয়েছে, আমি ফেলুদা করতে করতে বড় হয়েছি (হাসি)। ফলে এই অভিজ্ঞতা আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বলে বোঝানো যায় না।'
তারপরেই ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সৃজিত বলেন, 'আপনারা ভিজ্যুয়াল দেখলেই বুঝতে পারবেন, কাশ্মীরের সে সব পরিস্থিতিতে শুটিং করতে কতটা ম্যানেজ করতে হয়েছে। আমি সব সময়ই এমন জায়গায় শুট করতে চেয়েছিলাম। তবে কাশ্মীরে শুট করলেও, সেখানে এমন কিছু জায়গা রয়েছে, যা অপুর্ব সুন্দর। কিন্তু আমাদের খরচের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখনও বাংলা ওয়েব সিরিজ বানাতে গিয়ে আমরা ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারি না। ফলে সেই সব জায়গায় শুট করা হয় না। কিন্তু তারপরেও ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’-এ যে সব দৃশ্য রয়েছে, যা নজর কাড়তে বাধ্য।'
'এটাই আমার শেষ ফেলুদা' #SrijitMukherjee #Feluda #banglaentertainment #thewallnews pic.twitter.com/4zI98344gm
— The Wall (@TheWallTweets) December 14, 2024
ছোটবেলা থেকেই সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার ভক্ত সৃজিত মুখোপাধ্যায়। একথা তিনি নিজেই শেয়ার করেছেন বহু সাক্ষাৎকারে। ২০২০ সালে প্রথম ‘ফেলুদা ফেরত’ তৈরি করেন তিনি। দর্শকদের প্রশংসা পায় ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’। তার পর হইচই ওয়েব প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সৃজিত আনেন ‘দার্জিলিং জমজমাট’।
এবার পালা ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’-এর। ফেলুদা নিয়ে সৃজিতের এটাই শেষ কাজ। ফলে নন্দনে হবে এর স্পেশাল স্ক্রিনিং হবে ১৯ ডিসেম্বর। এই হইচই স্পেশাল ওয়েব সিরিজে রয়েছেন রজতাভ দত্ত, ঋদ্ধি সেন, শাওন চক্রবর্তী, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, অনিরূদ্ধ গুপ্ত। জটায়ুর ভূমিকায় আবারও নজর কেড়েছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। ২০ ডিসেম্বর থেকে ওয়েব প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর।’