
প্রেমের কোনও বয়স নেই, পুজোয় অন্তরঙ্গ লাঞ্চ-ডেটে দোলন-দীপঙ্কর
শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বরের বয়স ৭৭ আর বউয়ের ৫১। তবে তাতে কীই বা এসে গেল? জীবনে প্রেম কমেনি একটুও। নবমীর মধ্যাহ্ন ভোজ সারতে বেরিয়ে পরলেন দীপঙ্কর-দোলন (Dipankar-Dolon)।
বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে করোনা আসার আগেই ২০২০ সালের শুরুতেই সাতপাকে বাঁধা পড়েছিলেন অভিনেতা দীপঙ্কর দে ও অভিনেত্রী দোলন রায়। তাঁদের অসমবয়সী বিয়ে নিয়ে কম বিদ্রুপ হয়নি। কিন্তু সমাজের তোয়াক্কা না করেই তাঁরা দুজন বিয়ে সেরে একসঙ্গে দিব্য পথ চলছেন। দীর্ঘ সময় লিভ-ইন করার পরে গত বছর রেজিস্ট্রি, মালাবদল, সিঁদুর দান করে বিয়ে করেন দে-রায় জুটি।
দীপঙ্কর দে-র প্রথম সংসারের স্ত্রী ডিভোর্স দিয়েছেন বর্তমানে। তার বহু আগে, সেই নব্বই দশকেই মেয়ের বিয়েও দেন দীপঙ্কর। তার পরই দোলনের সঙ্গে দীপঙ্করের আলাপ। রবি ঘোষের দলে নাটক করতেন দোলন। দোলন তখন নবাগতা। দোলনের কাছে দীপঙ্কর দে বিশাল স্টার। দোলনের কথায় “উত্তম কুমার কে কোনদিনই আমার রক্ত মাংসের মানুষ মনে হয়নি। তিনি সুপারস্টার, দেবতা স্বরূপ। সৌমিত্রদার সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁকেও কখনও নিজের নায়ক ভাবিনি। কিন্তু দীপঙ্কর দেকে বেশ লাগত। কে জানত পরে তাঁরই আমাকে ভাল লাগবে, আমরা একসঙ্গে সংসার করব!”রুপোলি পর্দার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জীবনে প্রেম, সম্পর্ক, পরকীয়া বহুবার আসে। কিন্তু সেই সম্পর্ককে সমাজের চোখে স্বীকৃতি দিতে সবাই পারে না। দীপঙ্কর দে, দোলনকে সেই সামাজিক স্বীকৃতি দিয়েছেন। হাইল্যান্ড পার্কের সুবিশাল ফ্ল্যাট দীপঙ্কর দিয়েছেন দোলনকে। সেখানেই তাঁদের সংসার। দোলনের কোনও আক্ষেপ নেই দীপঙ্কর ওরফে তাঁর টিটোকে স্বামী রূপে পেয়ে। বয়স কোন বাধাই নয় তাঁদের প্রেমে।
অভিষেকের বাড়িতে জমজমাট দুর্গাপুজো, হাজির শতাব্দী, রচনা, লাবণী
দীপঙ্করও তাঁদের বিয়ে নিয়ে সোজাসুজি বলেন, “আমরা বিয়ে করেছি আমাদের ইচ্ছে। তোদের তাতে কা। যারা আমাদের কটূক্তি করেন তাঁদের দেখাই কাঁচকলা।” তবে মনে তরুণ থাকলেও তাঁর বয়স তো থেমে নেই। মাঝেমধ্যেই শরীরে আসে জরার স্পর্শ। সে সব অসুস্থতাতেই দীপঙ্করের পাশে থাকেন দোলন।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে প্রথম বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করেছেন দীপঙ্কর এবং দোলন। বাড়িতেই কেক কেটে হয়েছে নবদম্পতির প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর সেলিব্রেশন। দীপঙ্করকে তার পছন্দের খাবারও রেঁধে খাওয়ান দোলন।দোলন বলেন, “ও আমিষ খাবার বেশি পছন্দ করে। মটন তো নিজেই রাঁধে। আমার হাতের চিতল মুইঠ্যা ওর বিশেষ পছন্দের। তবে আগে যেমন নিরামিষকে শাকপাতা বলত, আজকাল নিরামিষ খাবার শরীর ভাল রাখতে খাচ্ছে। কন্টিনেন্টালও রেঁধে খাওয়াই।”
আজ এত বছর পেরিয়ে এসেও তাঁরা সুখী দম্পতি। টলি-বলিতে আজকাল কান পাতলে শুধুই বিবাহ বিচ্ছেদের খবর শোনা যায়। সেখানে দীপঙ্কর দে এবং দোলন রায়ের সম্পর্কের এই মূল্যবোধে সত্যিই টলিউড সম্পর্কে মানুষের চিন্তা-ধারা বদলায়।
দু’জনেই আজও ভীষণ ব্যস্ত শিল্পী। দোলন রায় তো বিভিন্ন সিরিয়ালের চেনা মুখ। দীপঙ্কর দেকে বর্তমানে অনেক দিন পর দেখা যাচ্ছে ‘সর্বজয়া’ সিরিয়ালে। সর্বজয়া দেবশ্রী রায়ের বগলা মামার মজার চরিত্রে অভিনয় করছেন দীপঙ্কর। দোলন-দীপঙ্কর তাই আজকাল নিজেদের জন্য একান্ত মুহূর্ত খুবই কম সময় পান।পুজো কেমন করে কাটান এই যুগল? নব-দম্পতিদের মতোই তাঁরা প্রাণবন্ত। নিজেদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে আজও লাগেনি এতটুকু প্রবীনত্বের ছোঁওয়া। পুজোর প্ল্যান নিয়ে দোলন কথা কথায় বলছিলেন, “আমাদের কমপ্লেক্সে বেশ ভালই বড় পুজোই হয়। সেখানে অঞ্জলি দেওয়া, ঠাকুর বরণ করতে যাই।
আমার বাপের বাড়ির পাড়ার পুজোতেও জয়েন করি। যাদবপুরে আমাদের পাড়ার মেয়েরা সব আসে, সবাই অপেক্ষা করে থাকে সকলের সঙ্গে সকলের দেখা হবে। এমনিতেও তো আমরা মণ্ডপে মণ্ডপে ঢুকে ঠাকুর দেখতে পারি না। আমাদের যাত্রার শো যখন থাকত সেগুলো দশমীর পর থেকে শিডিউল থাকত। একবার খালি নবমীতে একটা প্রত্যন্ত গ্রামে শো ছিল। সেবার খুব মিস করেছিলাম কলকাতার পুজো। তারপর থেকে পুজোয় কাজ, শো রাখি না আমরা।
এ বছর করোনা সতর্কতায় সবাই যেমন শুধু গাড়ি করে ঘুরবে আমরা প্রতিবছর সেটাই করি। আমরা দুজনে গাড়িতে উঠে সারা কলকাতা ঘুরে নিলাম ব্যস। বাইরে কোথাও একটা খেয়ে নিলাম। প্ল্যান থাকে কোথাও একটা খেতে যাব।”
গত বছর ছিল তাঁদের বিয়ের পর প্রথম পুজো। কিন্তু সেই পুজো করোনা আবহে খুবই খারাপ কেটেছিল দোলন-দীপঙ্করের। কোথাও সেভাবে বেরোতে পারেননি। তাই এবছর পুজোতে চুটিয়ে মজা করলেন দোলন-দীপঙ্কর। এবার গাড়ি করেই ঠাকুর দেখা সেরে ফেললেন তাঁরা।
তারপর গতকাল মহানবমীর দুপুরে যুগলে লাঞ্চ খেতে গেলেন ‘আইটিসি সোনার বাংলা’ হোটেলে। দোলন পরলেন গোলাপী শাড়ি ও ঘটিহাতা সাবেকি ব্লাউজ। হাতে শাঁখা, পলা সঙ্গে সিঁথিতে সিঁদুর আর কপালে গুঁড়ো সিঁদুরের টিপ। পুজোর মেজাজে একদম খাঁটি বাঙালি বউয়ের সাজে দোলন সাজলেন দীপঙ্করের জন্য। আর দীপঙ্কর ব্লু প্রিন্টের টি শার্ট।এভাবেই নবমীর দুপুরে একান্তে আইটিসি সোনার বাংলায় মধ্যাহ্ণভোজ সারলেন যুগলে। তবে বাঙালি ভোজ নয়। চাইনিজ পদ আর অল্প সুরা পানে জমে উঠল লাঞ্চ। হাতে-হাত, চোখে-চোখ আর অন্তরঙ্গ দুপুর। দীপঙ্করের থেকে দোলন ২৬ বছরের ছোট! কিন্তু তাতে কী! অসম বয়সী প্রেমে নেই কোন ভালবাসার খামতি। বিয়ের তারিখ, পুজো, এমনকি ভ্যালেন্টাইন ডেতেও দোলন আজও উপহার পান দীপঙ্করের থেকে, যা সত্যি ভালবাসার নতুন সংজ্ঞা তৈরি করে। দীপঙ্করের প্রাণভ্রমরা দোলন।
‘হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়, সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়।’– এটাই যেন প্রমাণ করেছেন দীপঙ্কর-দোলন।