শেষ আপডেট: 9th January 2025 21:04
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঠিক কতক্ষণ কাজ করলে কর্মী বলা যায়! কেউ বলছেন ৫০। কেউ ৭০। আবার কেউ ৮০-র পক্ষে। ফি-সপ্তাহে ঠিক কত ঘণ্টা করে কাজ করলে সংস্থার উৎপাদন অভীষ্ট লক্ষ্য ছুঁতে পারবে, এমন এক তর্ক নিয়ে দেশে শোরগোল!
দেশের অন্যতম বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা লারসেন অ্যান্ড টুব্রো-র চেয়ারম্যান এসএম সুব্রহ্মণ্যমের বক্তব্যে পড়ল ধুনো। বাড়িতে বউয়ের মুখের দিকে চেয়ে থাকাটা কোনও কাজের কথা নয়। তার চেয়ে অফিসে সময় দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের। কর্মীদের প্রতি সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা বিনিয়োগ করা জরুরি। শুধু তাই নয়, রবিবার অর্থাৎ ছুটির দিনে কর্মীদের আসার আহ্বান জানাতেই জন্ম নিয়েছে বিতর্ক। এমন এক বক্তব্যের পর পক্ষে এবং বিপক্ষের দল তৈরি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া যেন অদৃশ্য রণক্ষেত্র! অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন, যিনি নিজেও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছেন, তিনিও এবার মুখ খুললেন।
কী লিখলেন দীপিকা?
তিনি সাংবাদিক ফায়ে ডি'সুজার (যিনি এই বিষয়ে রিপোর্টটি করেন) পোস্টটি শেয়ার করে লেখেন, ‘এত বড় পদে থাকা ব্যক্তিদের এই ধরনের মন্তব্য দেখে অবাক লাগছে!’ হ্যাশট্যাগে জুড়ে দেন #MentalHealthMatters।’
কী বলেছেন এসএম সুব্রহ্মণ্যম?
কোম্পানির এক ভিডিও মিটিং-এ তিনি কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘বাড়িতে থেকে কী কাজ করো তোমরা? কতক্ষণ বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে? এর থেকে বাড়িতে কম, অফিসে বেশি সময় থাকো, কাজ করো।’ সুব্রহ্মণ্যম আরও বলেন, ‘আমি নিজে রবিবার কাজ করি। চাই, কর্মীরাও তাই করুক। কিন্তু আমি এটাও জানি রবিবার তাদের অফিস আসতে আমি বাধ্য করতে পারব না। এটাই আমার দুঃখ। যদি পারতাম, তাহলে সবাইকে অফিসে বসিয়ে কাজ করাতাম।’ সুব্রহ্মণ্যমের দাবি, চিন আমেরিকাকে ছাপিয়ে যেতে চলেছে কারণ তাঁরা সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করে। আর আমেরিকা ৫০ ঘণ্টা। তাই ভারতকে দ্রুত উন্নতি করতে গেলে ৯০ ঘণ্টা প্রতি সপ্তাহে কাজ করতেই হবে।
'রেডিট'-এ সুব্রহ্মণ্যমের ভিডিও বার্তাটি ভাইরাল হয়েছে। তা নিয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়। নারায়ণ মূর্তির মতোই তিনিও কটাক্ষের শিকার হচ্ছেন। আবারও প্রশ্ন উঠছে 'ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স' নিয়ে। যদিও সুব্রহ্মণ্যম হোক কী নারায়ণ মূর্তি, তাঁদের একই মত, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে এইভাবে কাজ করা বাধ্যতামূলক।
সুব্রহ্মণ্যম ভিডিও বার্তাও পারতপক্ষে এই কথাই বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, 'বিশ্বের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছতে গেলে, এক নম্বর হতে গেলে, ৯০ ঘণ্টা বা তার বেশিও কাজ করতে হবে।' তাই বাড়ি বা ব্যক্তিগত জীবন ভুলে শুধুই অফিস করার ডাক দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগে, দীপিকা তাঁর জীবনের সাহসী মুহূর্ত নিয়ে মুখ খোলেন। হতাশার সঙ্গে তাঁর জীবনযুদ্ধের কথাও তুলে ধরেন। অভিনেত্রী মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে লাইভ লাভ লাফ ফাউন্ডেশন স্থাপনও করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনও গুরুতর কারণ ছাড়াই ভেঙে পড়তাম। এমন কিছু দিনও ছিল যখন আমি ঘুম থেকে উঠতে চাইতাম না। আমি কেবল ঘুমিয়ে থাকতাম। কারণ, ঘুম আসত না চোখে। আমি জেগেই থাকতাম।' স্বাভাবিকভাবে যেই মানুষ নিজে এমন অসহায় অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন, তিনি আদপে বুঝতে পেরেছেন মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক কতটা জরুরি, এবং নেটিজেনদের মতে, এই কারণেই দীপিকা এর পাল্টা উত্তর দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারেননি।