শেষ আপডেট: 14th August 2024 12:40
সুখেন দাস বাংলা ছবি 'দাদামণি' করেছিলেন এক সময়ে। এবার নতুন বাংলা ছবি 'দাদাভাই' মুক্তি পেল গত শুক্রবার, ৯ই অগস্ট ২০২৪। কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ, পরিচালনা ও প্রযোজনায় দিগ্বিজয় চৌধুরী।
পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর সহকারী সঙ্গী দিগ্বিজয় চৌধুরী তাঁর ছবি বানিয়েছেন একদম অঞ্জন চৌধুরী ঘরানায়। শুধুমাত্র ফ্যামিলি ড্রামা 'দাদাভাই' ছবির উপজীব্য বিষয় নয়, দুর্নীতি, অপরাধ, চোরা কারবার পেরিয়ে যে সমাজকে শুভবার্তা দেওয়া যায়. তাই দেখায় এই ছবি। ঠিক যেমন অঞ্জন চৌধুরীর 'মুখ্যমন্ত্রী', 'জীবন নিয়ে খেলা', 'শত্রু' ছবিতে একটা সামাজিক বার্তা থাকত, তা এই নতুন ছবিতেও দেখা গেল। ছবিটির নিবেদনে প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়।
দাদাভাই ছবিটি দাদা আর বোনের জীবনকে ঘিরে। বোন পাঁচ বছর বয়সেই হারিয়ে যায় দাদার সঙ্গে কলকাতায় ঠাকুর দেখতে এসে। তাদের বাড়ি ছিল বাংলাদেশের বাগেরহাটে। ২০ বছর পেরিয়ে যায় এরই মাঝে। সম্পূর্ণ অবস্থান পাল্টে যায় দাদা আর বোনের। সময়ের স্রোত বয়ে গেলেও দু'জনের মনে ছেলেবেলার ভাইফোঁটা থেকে খেলাধূলার স্মৃতি রয়েই যায়। দু'জনের জীবন দু'প্রান্তে বেড়ে ওঠে। বোন হয় প্রতিবাদী মেয়ে, যার পেশা রেডিও জকি আর দাদা বাংলাদেশের সুপারস্টার নায়ক।
আদৌ কি দেখা হয় এই দাদা বোনের? সমাজের পরতে পরতে কত দুর্নীতি লুকিয়ে থাকে যা আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোতে আঘাত হানতে পারে। তেমনই গল্প লিখেছেন দিগ্বিজয় চৌধুরী।
দাদাভাই ছবিতে নায়িকা বোনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সোলাঙ্কি ভৌমিক। চরিত্রের নাম রূপসা। সোলাঙ্কি ইতিমধ্যে ওড়িশার ছবিতে জনপ্রিয় অভিনেত্রী। 'দাদাভাই' ছবির হাত ধরে বাংলা ছবিতে প্রথম পা রাখলেন সোলাঙ্কি। সোলাঙ্কির বিপরীতে নায়কের ভূমিকায় রয়েছেন মেঘমল্লার প্রতীক সেন, যিনি অতীতে 'ডামাডোল' ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকাতেও দেখা গেছিল তাঁকে। 'দাদাভাই' ছবিতে এক সাংবাদিকের চরিত্রে মেঘমল্লার বেশ নায়কোচিত। সোলাঙ্কি আর মেঘমল্লারের জুটি বেশ মানিয়েছে।
দাদাভাইয়ের চরিত্র করেছেন লোকেশ ঘোষ। লোকেশকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে হিরো বানান অঞ্জন চৌধুরী। সেই 'লোফার' ছবির নায়ক লোকেশ ঘোষ বহু বছর পর অঞ্জন সহকারী দিগ্বিজয়ের 'দাদাভাই' ছবির হাত ধরে বড় পর্দায় কামব্যাক করলেন। যদিও এখানে তিনি অতিথি চরিত্র। তবু তাঁকে ঘিরেই সমগ্র গল্প, নামভূমিকায় তিনিই।
পার্শ্বচরিত্রে রয়েছেন বহু শিল্পী। সংলাপের দাপটে সবথেকে জমিয়ে দিলেন কুসুম চৌধুরী, যিনি বাস্তবে পরিচালক দিগ্বিজয়ের সহধর্মিনী। কুসুম প্রথম বড় পর্দায় পা রেখেই চমকে দিলেন। ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ মহিলা পুলিশের চরিত্রে তিনি দুরন্ত কমেডি অভিনয় করেছেন। তাঁর মুখে 'সাল্টে দেব' সংলাপ শুনে হাততালি পড়েছে হলে। এছাড়াও প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়, অস্মি বিশ্বাস, মনোজিৎ বাপ্পা, ধৃতিকণা, শিবনাথ আচার্য, ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য, অনসূয়া, সুদীপ দে, সমীরণ সরকার, উষাণ মুখার্জী, ভবিষ্যত চৌধুরী, ঝুমঝুমি-- সকলের অভিনয় সুন্দর।
একটা ভাল গল্প বলার দৌলতে সকলের অভিনয়ে ছবিটি দেখতে আগ্রহ জাগে। দেড় ঘন্টার মধ্যেই শেষ নির্মেদ ছবি। এ জন্য দিগ্বিজয় তুলনাতীত। তবে ছবির টাইটেল কার্ড আর একটু সংক্ষেপে দেখানো যেত বা গতি বাড়ানো যেত।
দাদাভাই ছবির বড় সম্পদ এই ছবির গান। বেহালা ইউনিক পার্কের চৌধুরী পরিবারের হোম প্রোডাকশন 'দাদাভাই'। যে চৌধুরী পরিবার হল আদি স্বর্ণযুগের গীতিকার মোহিনী চৌধুরীর পরিবার। যিনি লিখেছিলেন 'মুক্তির মন্দির সোপান তলে', 'পৃথিবী আমারে চায়'-এর মতো গান। মোহিনী চৌধুরীর মেজ ছেলের দিগ্বিজয় বাবার তিনটি গান নতুন মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টে নবরূপে ব্যবহার করেছেন ছবিতে, যা বড্ড শ্রুতিমধুর। 'মার মমতা এ কোন দেশী', 'এনেছি আমার শতজনমের প্রেম', 'হাসিতে যার জগৎ আলো'-- এই তিনটি গানের দারুণ প্রয়োগ ছবিতে।
শুধু তাই নয়, মোহিনী চৌধুরীর বড় ছেলে ভবিষ্যৎ চৌধুরী ও দিগ্বিজয়ের পুত্র উৎসব চৌধুরীও দুটি গান লিখেছেন এই ছবিতে। এক পরিবারের তিন প্রজন্মের তিন গীতিকার এক ছবিতে, যা বেশ বিরল। উৎসব সহকারী পরিচালক হিসেবে বাবাকে সাহায্য করেছেন। তবে দৃশ্যায়নে ছবির ক্যামেরাম্যানের সিনেমাটোগ্রাফি অতুলনীয়।