

সৃজিত: ভালো আছি (হেসে)।
অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’। এই ছবিকে ঘিরে পরিচালক হিসেবে আপনার প্রত্যাশা কতখানি?
সৃজিত: দেখুন, মূলত বাচ্চাদের জন্য এই ছবিটা আমি তৈরি করেছি। আর সেই সব বাচ্চাদের কথা ভেবেই ছবি তৈরি করা, যারা চাঁদের পাহাড় পড়ে এবং ‘লায়ন কিং’ দেখে বড় হয়েছে। আমার মেয়ে আইরাকে উৎসর্গ করেছি ছবিটা। বাচ্চাদের জন্য ছবি তৈরি করলে সব সময় একটা বাড়তি প্রত্যাশা তো থাকেই। করোনার অতিমারির দাপটে প্রায় বছর দুয়েক আমরা সকলেই বাড়িতে আটকে পড়েছি, বেরোতে পারছি না। সেই অবস্থায় যদি আফ্রিকা ঘুরে আসা যায় তবে ব্যাপারটা মন্দ হয় না। সেই সবকিছু মিলিয়ে এই ছবি নিয়ে আমার প্রচুর প্রত্যাশা রয়েছে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সিরিজের উপন্যাস ‘জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল’ অবলম্বনে এই ছবি, হঠাৎ এই গল্পকে বাছলেন কেন?
সৃজিত: দেখুন আমার বরাবর ইচ্ছে ছিল কাকাবাবুকে নিয়ে একটা ট্রিলজি করার। প্রথমেই আমি নির্বাচন করেছিলাম মরুভূমি, পরে পাহাড় আর এই তৃতীয়বার জঙ্গল। কাকাবাবুর অনেকগুলো গল্প আছে ঠিকই। তবে আফ্রিকার জঙ্গলের তো কোনও বিকল্প হয় না। আর আমি নিজেও জন্তু-জানোয়ার খুবই ভালোবাসি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাসাইমারা দুর্ধর্ষ একটা জায়গা। আর গল্পটাও খুব থ্রিলিং। সবদিক ভেবেই এই গল্প নির্বাচন করা।চিত্রনাট্যের স্বার্থে মূল গল্প অবিকল এক রেখেছেন কি?
সৃজিত: না,না। অনেক পরিবর্তন করতে হয়েছে।
এবারে আপনার ছবির প্রেক্ষাপট কেনিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার জঙ্গলে শ্যুটিং-এর অভিজ্ঞতা কেমন?
সৃজিত: ও বাবা, সে তো ভয়ঙ্কর এবং রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা। দক্ষিণ আফ্রিকায় মাসাইমারা অরণ্যের গভীরে শ্যুটিং করাও আমার কাছে অনেকটা স্বপ্নের মতো ছিল। আর সেখানে শ্যুটিং করা সত্যিই দুঃসাহসিক ব্যাপার। হায়না আর গণ্ডার সামলানোর মতো প্রফেশনাল হ্যান্ডলার কেউ ছিল না। ফলে পেশাদার হ্যান্ডলার ছাড়া জন্তুরা কখন কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে তা ছিল আমাদের অজানা। সেই সব দায়িত্ব কখনও শ্যুটিং কর্ডিনেটর নেন না। হায়না তো ভীষণ হিংস্র। এই হায়না আর গণ্ডারের সঙ্গে শ্যুটিং করা খুবই বিপজ্জনক ছিল। এছাড়া একটা সিকোয়েন্স ছিল হাতি নিয়ে। মূল গল্পে সেই দৃশ্যের উল্লেখ রয়েছে যে, হাতি আর গণ্ডারের মধ্যে কাকাবাবু আটকে পড়েন। সেই দৃশ্যের শ্যুটিং করার সময় হঠাৎই হাতি মেজাজ খারাপ করে বুম্বাদার দিকে চার্জ করে। সাপের দৃশ্যের শ্যুটিংও ছিল। বুম্বাদা কীভাবে সাপটা ধরবেন এবং সাপের মেজাজ কেমন থাকবে সব মিলিয়ে খুবই উৎকণ্ঠার একটা ব্যাপার ছিল। আর আমরা কিন্তু সত্যিকারে জন্তু নিয়েই শ্যুট করেছি। বাংলা ছবির ইতিহাসে এর আগে এত রিয়্যাল জন্তু নিয়ে কখনও শ্যুট হয়নি।একজন পরিচালক হিসেবে বন্য জন্তুদের সঙ্গে শ্যুটিং করার ঝুঁকিও তো ছিল অনেক?
সৃজিত: প্রচন্ড ঝুঁকি ছিল। আমাদের ১১ দিনের শেডিউল ছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ছবির শ্যুটিং করতে হয়েছে। চিতা বাঘের সঙ্গে শ্যুটের দৃশ্যে তো আমি নিজেই ক্যামেরা করেছি। ওখানে শ্যুটিংয়ের নিজস্ব কিছু নিয়মাবলী ছিল। সেই নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করে শ্যুটিং করতে হয়েছে।
ছবিতে কী ধরনের রহস্য অ্যাডভেঞ্চার দেখা যাবে?
সৃজিত: সেটা জানতে হলে তো ছবিটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমি বলে দিলে কেউ আর ছবি দেখতে যাবে না (হেসে)।এই ছবিতে কাকাবাবু-সন্তু জুটির কেমন রসায়ন দেখবে দর্শক?
সৃজিত: সন্তু ক্রমশ বড় হচ্ছে। ‘মিশর রহস্য’ ২০১৩ তে, ‘ইয়েতি অভিযান’ ২০১৭ তে মুক্তি পেয়েছে।’ কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ ২০২২-এ রিলিজ করতে চলেছে। ফলে সন্তুর বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাকাবাবু আর সন্তুর সম্পর্কের গতিশীলতা ও সমীকরণ বদলেছে।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি মানেই দর্শকদের বাড়তি উন্মাদনা। এই ছবিতে আপনাদের দুজনের কী ধরনের কেমিস্ট্রি চোখে পড়বে?
সৃজিত: এত বছর ধরে আমরা দুজনে একসঙ্গে কাজ করেছি, সেই কেমিস্ট্রি দর্শক নিশ্চয়ই ছবি দেখে উপলব্ধি করতে পারবেন। সেই বিশেষ ধরনের কেমিস্ট্রি আমাদের দুজনের মধ্যে যদি না থাকত, তবে এত বড় স্কেলে এবং ক্যানভাসে এই ছবি করা যেত না। সেই কেমিস্ট্রিটা আমাদের মধ্যে আছে বলেই এই ক্যানভাসটা করতে আমরা সফল হয়েছি।এই ছবি কি বিশেষ কোনও শ্রেণির জন্য তৈরি?
সৃজিত: আগেই বলেছি এই ছবি বাচ্চাদের জন্য। তবে জন্তু-জানোয়ারের প্রতি ভালোবাসা, আগ্রহ যদি থাকে তবে বড়দের কাছেও যথেষ্ট উপভোগ্য হবে এই ছবি।
এই ছবিকে ঘিরে আপনার মেয়ে আইরা কতটা উত্তেজিত?
সৃজিত: (হেসে) আইরা ভীষণ উত্তেজিত। আমরা সপরিবারে ছবিটা একসঙ্গে দেখব (আবার হাসি)।একই দিনে উইন্ডোজ প্রোডাকশনের ‘বাবা বেবি ও’ এবং এস ভি এফ প্রযোজনা সংস্থার ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ দুটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। পরিচালক হিসেবে আপনার কাছে এটা কি বাড়তি চাপ?
সৃজিত: এটা আমার কাছে কোনও বাড়তি চাপ একেবারেই নয়। এটা সম্পূর্ণ প্রযোজকদের ব্যাপার। ছবি তাঁরা কবে, কীভাবে, কার সঙ্গে রিলিজ করবেন সম্পূর্ণটাই প্রযোজকদের ওপর নির্ভর করে। এ ব্যাপারে আমি কোনওদিন মাথা ঘামাইনি। আমি শুধুমাত্র ছবিতেই মনোনিবেশ করতে পছন্দ করি।
এখন তো সিনেমা হলে দর্শক সংখ্যা পঞ্চাশ শতাংশ বেড়ে পঁচাত্তর শতাংশ করা হয়েছে। দর্শকদের আসা নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
সৃজিত: পঞ্চাশ শতাংশ দর্শকাসন থাকাকালীন ডেফিনেটলি অনেক পরিবারই সিনেমাহলে আসতে পারতেন না। কারণ পরিবারের সকলেই একসঙ্গে বসে ছবি দেখতে চান। সেক্ষেত্রে পরিবার যদি আসতে না পারে, তবে বাচ্চারাও আসতে পারত না। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে আসনসংখ্যা বাড়ায় এখন বাচ্চারা পরিবারের সঙ্গে এই ছবি দেখতে আসতে পারবে। সরকারের এই ঘোষণা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে খুবই আনন্দের ব্যাপার।
আপনি তো এখন বলিউড-টলিউড দু জায়গায় কাজ করছেন। ফারাক বুঝছেন কিছু?
সৃজিত: কিছু পার্থক্য তো থাকেই। বিনিয়োগ সংক্রান্ত কিছু ফারাক রয়েছে। অন্যথায় মোটামুটি একই।