ফ্যাগ এন্ড।
শেষ আপডেট: 2nd March 2025 20:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মাধ্যমে তাঁরা সন্তান নিতে চলেছেন। তবে এই চেনা গল্পে সুর কাটে মাদকদ্রব্যের প্রবেশের মাধ্যমে। এই নিয়েই এক সন্তানহীন দম্পতির গল্প 'ফ্যাগ এন্ড'।
আন্তর্জাতিক শর্টফিল্ম প্রতিযোগিতায় ছবিটি বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতে নিয়েছে। গুড মেসেজ, ছবির সাররিয়াল দিকের জন্য ছবিটি পুরস্কৃত হয়েছে। গোয়ার ডোনা পাওলা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বেস্ট সাররিয়াল শর্ট ফিল্মের জন্য। এছাড়া কলকাতার ইন্ডি সিনে টিউব অ্যাওয়ার্ডও ছবিটি পেয়েছে। পরিচালক ইন্দ্রজিৎ দাসের এটিই প্রথম ছবি নয়। আরও তিনটি শর্টফিল্ম তাঁর ঝুলিতে রয়েছে। উইঙ্কল রিঙ্কলস, আখরোট, টাইম ক্যান নেভার মেন্ড। আখরোট শর্টফিল্মটিও ২০২২ সালে ইন্ডি ফিল্ম হিসাবে বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতে নিয়েছিল।
যিনি সন্তান ধারণ করবেন, অর্থাৎ গল্পের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র তানিয়া অ্যালকোহলিক এবং চেন স্মোকার। ১৭ মিনিট ৭ সেকেন্ডের শর্টফিল্ম 'ফ্যাগ এন্ড'-এ অ্যালকোহল আর স্মোকিং গল্পের প্রোটাগনিস্ট। পরিচালক ইন্দ্রজিৎ দাস মদ্যপান ও ধূমপান কতটা ক্ষতিকারক তা ছবিতে বলতে চেয়েছেন।
নিঃসন্তান দম্পতি সন্তান নিতে চাইছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাদক সেবনের জন্য তা ব্যর্থ হচ্ছে। মাদককে প্রোটাগনিস্ট করলেও একজন অ্যালকোহলিকের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। গল্পে সেই অবকাশ ছিল। কিন্তু পরিচালক সেই পথে একদমই হাঁটেননি। মদ খেলে মিসকারেজ হতে পারে বা হয়। অকালে একটি প্রাণ ঝরে যেতে পারে, এই বলেই পরিচালক ক্ষান্ত হয়েছেন। গল্পে নিঃসন্তান দম্পতির সম্পর্কের জটিলতা, জটিল সম্পর্কে সন্তান নেওয়ার যৌক্তিকতা এবং একজন মাদক আসক্ত মহিলা বা পুরুষের সন্তান নেওয়ার আদৌ কোনও যৌক্তিকতা আছে কিনা এই বিষয়গুলো গল্পে পরিষ্কার হয়নি।
মুখ্য চরিত্র তানিয়া মাদকাসক্ত। সেই সঙ্গে তিনি সন্তানসম্ভবা। আইভিএফের মতো জটিল পদ্ধতিকে বেছে নিয়েছেন সন্তান ধারনের জন্য। সংলাপ থেকে জানা যাচ্ছে, তানিয়া লাস্ট ১৫ দিন মদ্যপান ও ধূমপান করেননি। কিন্তু তাঁর পার্টনার সবটা জানার পরও তাঁর সামনে ধূমপান করেছেন। এর ফল স্বরূপ তানিয়ার অ্যালকোহলিক টেন্ডেসি রিল্যাপ্স করে। এইটুকু ঠিকই ছিল। এরপর সংলাপে উঠে আসছে কিছু গতানুগতিক ধারণা। প্রোগ্রেসিভ সমীর যেন অল্প বয়সি কোনও নারীকে বিয়ে করে নেয় বা এই পরিস্থিতিতে বাচ্চা নিতে না চাওয়ার ইচ্ছা। গল্পটি সত্য ঘটনা বলে জানিয়েছেন পরিচালক। মদ্যপান যে আর পাঁচটা অসুখের মতোই একটি অসুখ এবং তার সঠিক চিকিৎসা হওয়া জরুরি, সে বিষয়টি এখানে উপেক্ষিত।
মাদকাসক্ত সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে সে নিয়ে অনেকের মধ্যে এখনও সচেতনতা তৈরি হয়নি। মাদকাসক্ত নারীর পক্ষে আইভিএফের মাধ্যমে সন্তান নেওয়া কি ঝুঁকিপূর্ণ নয়? একটি শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাঁরা কি উপযুক্ত পরিবেশ দিতে সমর্থ? এই সব প্রশ্নের উত্তর গল্পে অধরা। মাদকদ্রব্য খুব খারাপ এবং তার সেবনে সন্তানের ক্ষতি হয় এইটুকুই পরিচালক বলতে চেয়েছেন। গল্পের আরও অনেক শেড ছিল যা পরিচালক ধরার বা বলার চেষ্টা করেননি। সন্তানই সম্পর্কের মানদণ্ড এই চিরাচরিত ধারণা সংলাপের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। সংলাপের প্রয়োগ সিনেমায় বেশি না থাকলেও যা আছে তা খুবই চেনা।
গল্প বা সংলাপ বাদ দিলে সিনেমার প্রযুক্তিগত দিক অর্থাৎ এডিটিং, ক্যামেরার কাজ ভাল। পরিচালক চিত্রনাট্য, সংলাপ, ক্যামেরা, এডিটিং এবং লাইট একা হাতে দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। সাদা-কালো আর রঙের প্রয়োগ ছবিকে অন্যমাত্রা দিয়েছে। তবে কিছু দৃশ্য অতি নাটকীয় মনে হয়েছে। তানিয়া অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রের মিসকারেজ দৃশ্যের যন্ত্রণা বোঝাতে গিয়ে পুতুলের মাধ্যমে 'মা' ডাক মেলোড্রামাটিক। যন্ত্রণার দৃশ্যে অভিনেত্রী খুব একটা সাবলীলও নন। পরিচালক টুকরো টুকরো দৃশ্যের মাধ্যমে চরিত্রটির ব্ল্যাক শেড আর যন্ত্রণা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। আবহ সঙ্গীত গল্পকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে।
'ফ্যাগ এন্ড' অর্থাৎ দগ্ধাবশেষ সিগারেট। অর্ধদগ্ধ জীবন নাকি উত্তরণ, সেটা দর্শকের ওপরই ছেড়েছেন পরিচালক ইন্দ্রজিৎ দাস।