শেষ আপডেট: 10 January 2024 17:53
আটের দশক। তখন কলকাতা দূরদর্শনে 'সঙ্গীত সন্ধ্যা' নামে একটা অনুষ্ঠান হতো। অভিজিৎ দাশগুপ্ত করতেন। নানা ধরনের গানের উঠতি শিল্পীরা এই অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ পেতেন। আমি আর শাশ্বতী (গুহঠাকুরতা) এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতাম। রীতিমতো হল নিয়ে একেবারে সঙ্গীতানুষ্ঠানের মতো করে সঙ্গীত সন্ধ্যার শ্যুটিং হতো। একদিনে বেশ কয়েকজনের গান শ্যুট করিয়ে নিতেন অভিজিৎদা। কলকাতা দূরদর্শনের এই সঙ্গীত সন্ধ্যা তখন খুব জনপ্রিয় ছিল। গানের নানান ক্ষেত্রে অনেক নামী শিল্পীর জন্ম হয়েছে এখান থেকে।
গান গাওয়ার আগে ছোট করে শিল্পীর পরিচয় দেওয়া হতো। প্রত্যেকেই নতুন শিল্পী, তাই তাঁদের সম্বন্ধে কিছু জানা থাকত না। আমি বা শাশ্বতী মেকআপ রুমে গিয়ে তাঁদের থেকে জেনে নিতাম সবকিছু। তারপর পরিচয় করাতাম দর্শকদের সঙ্গে।
সেদিন ক্ল্যাসিকাল গানের অনুষ্ঠান। নতুন শিল্পীর পরিচয় জানতে মেকআপ রুমে গেলাম। কাউকে পেলাম না। চিন্তিত হয়ে খুঁজছি। এমন সময় ব্যাক স্টেজে দেখলাম রোগা পাতলা একটি ছেলে মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি খুব উত্তেজিত হয়ে ছেলেটিকে বললাম, 'ভাই এবার যিনি গাইবেন তাঁকে খুজে পাচ্ছি না। একটু দেখবে প্লিজ।'
ছেলেটি তাকাল আমার দিকে। শ্যামলা গায়ের রঙ, চোখদুটো ভারী উজ্জ্বল। আমি আবারও অনুরোধ করলাম, 'একটু দেখবে ভাই।' এবার ছেলেটি লাজুক হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, 'জি কহিয়ে'।
এইভাবেই রশিদ খানের সঙ্গে প্রথম দেখা আমার। আমি দর্শকদের সঙ্গে ওর পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর গান শুরু করল রশিদ। কী উদাত্ত কণ্ঠ! বিভোর হয়ে সুরবিস্তার করছিল রশিদ। আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। ওই রোগা পাতলা তরুণের গলায় যে এমন মায়া এমন সুরের জাদু রয়েছে তা ভাবতেও পারিনি।
ধীরে ধীরে সেদিনের সেই রোগা শ্যামলা ছেলেটি হয়ে উঠেছিল অসামান্য সঙ্গীতশিল্পী। কি নম্র আর অমায়িক ব্যবহার! যখন যেখানেই দেখা হতো আমাদের সেই প্রথম সাক্ষাতের দিনের ঘটনা নিয়ে হাসাহাসি করত। এমন গুণী শিল্পীর অকালমৃত্যু কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু বিধির বিধান এমনই যে মন না মানলেও মেনে নিতে বাধ্য আমরা। রশিদ যেখানেই থাকুক সুর যেন ওকে ঘিরে থাকে, এই কামনা করি।