শেষ আপডেট: 9th December 2024 10:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ততক্ষণে দু-তিনটে গান হয়ে গেছে। ‘এইট্টিন টিল আই ডাই!’, ‘শাইন আ লাইট.. শাইন আ লাইট এভ্রিহোয়্যার ইউ গো’। অ্যাকোয়াটিকায় তার আগে হাল্কা একটা শীতের আমেজ ছিল। গায়ে জ্যাকেট ছিল। বা একটা ফ্লিস। কারও কারও মাথায় টুপিও। সন্ধে নামতেই মাথায় হিম পড়তে পারে। পরদিন আবার সোমবার।
অথচ দুটো গান হতে না হতেই কোথায় কী! ঘাম ঝরছে। প্রতিটা গানের সঙ্গে সমস্বরে গাইছে হাজার দশেক মানুষ। শুধু গাইছে বললে কম বলা হবে, গলার শিরা ফুলিয়ে গাইছে। হাতে পায়ে তাল ঠুকছে। অনেকে যেন ভাবতেই পারছে না ছেলেবেলায় যে মানুষটার গান আচ্ছন্ন করে রাখত, তাঁকে সামনে থেকে দেখছে। যেন পুরোটাই স্বপ্নের মতো।
এমন একটা পরিবেশ যে কাউকে আবেগ তাড়িত করে তুলতে পারে। আশি ফুট চওড়া মঞ্চের এক্কেবারে সামনে এবার গিটার হাতে এসে দাঁড়ালেন ব্রায়ান অ্যাডামস (Bryan Adams)। বললেন, “টেল মি সামথিং.. ইজ এভ্রি কনসার্ট ইন দিজ টাউন লাইক দিজ? উইল ইট বি অলওয়েজ লাইক দিজ হোয়েন আই কাম অ্যান্ড প্লে ইন কলকাতা? শুড আই কাম অ্যান্ড প্লে মোর অফেন?”
বলুন তো, এই শহরে প্রতিটি কনসার্ট কি এমনই হয়? আমি কলকাতায় এলে প্রতিবারই কি এমনই দেখব! আরও কি ঘন ঘন কলকাতায় আসা উচিত?
ব্রায়ানের এ প্রশ্নের উত্তর কলকাতা কী দিয়েছে, তা সহজে অনুমেয়। এই নিয়ে ষষ্ঠবার এ দেশে এলেন ব্রায়ান অ্যাডামস। তবে কলকাতায় এই প্রথম। ‘সো হ্যাপি ইট হার্টস’ ট্যুরে আসার আগেই সংবাদমাধ্যমে ব্রায়ান বলেছিলেন, “ভারতে আমার কনসার্টগুলো সবসময়েই আলাদা হয়। কারণ, এখানকার দর্শকদের সঙ্গে অসামান্য কানেক্ট তৈরি হয়। তারা প্রতিটি গানের সঙ্গে গেয়ে ওঠে, তাতে এমন একটা যাদুকরী পরিবেশ গড়ে ওঠে যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না”।
ব্রায়ান অ্যাডামসের অনেক জনপ্রিয় গানই পাওয়ার ব্যালাড। তাঁর অন্যতম সেরা অ্যালবাম ‘রেকলেসের’ ৪০ বছর হয়ে গেল। সামার অফ সিক্সটি নাইন, হেভেনের মতো গানগুলো গত কয়েক দশক ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষের মনে সাড়া ফেলেছে। ব্রায়ানও বুঝি সে সব কিছু হদিশ রাখেন। বললেন, ‘আমি শুনেছি ইন্ডিয়াতে আমার এই গানটা খুব জনপ্রিয়—‘হিয়ার আই অ্যাম।’
শুধু এই গানটি কেন, এ দেশে কয়েক প্রজন্মের কাছে অ্যাডামসের বহু গান জনপ্রিয়। এটা ঠিক যে আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই ক্যানাডিয়ান গায়কের ‘সামার অফ সিক্সটি’ নাইন যখন মুক্তি পাচ্ছে, বা নয়ের দশকের গোড়ায় যখন তিনি গাইছেন ‘এভ্রি থিং আই ডু’, বাঙালির কাছে তখনই তা এসে পৌঁছয়নি। কলকাতা শহর বা একেবারে লাগোয়া কিছু শহরতলিতে তাঁর অ্যালবাম পাওয়া যেত। বাকিদের কাছে ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বিশ্বায়ন ক্রমশ সেই দরজা খুলে দিয়েছে। তার পর প্রজন্মের পর প্রজন্ম মজে গিয়েছে ব্রায়ানের গানে। কলকাতা যে অ্যাডামসের সব গানের হদিশ রাখে রবিবারের অ্যাকোয়াটিকা যেন তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছে বার বার। তাঁর সাম্প্রতিকতম অ্যালবাম থেকে যখন গান ধরেছেন আড্যামস, কলকাতাও গেয়ে উঠেছে, ‘সো হ্যাপি ইট হার্টস, আই’ম সো হ্যাপি ইট হার্টস’।