Advertisement
কেএল সাইগল
Advertisement
শেষ আপডেট: 26 April 2025 17:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বলিউডে ‘সুপারস্টার’ শব্দটা পরে এলেও, আসল সুপারস্টাররা জন্মেছিলেন সিনেমার একেবারে শুরুর দিন থেকেই। যখন বম্বে (মুম্বই) ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কেন্দ্রও ছিল না, তখনও বড় বড় তারকারা দর্শকদের হৃদয়ে রাজত্ব করতেন। তাদের মধ্যে প্রথম যিনি, তিনি এমনভাবে মন জয় করেছিলেন, যেটার ধারে কাছে আজও কেউ যেতে পারেননি। তবে দুঃখজনকভাবে তার জার্নি ছিল খুবই ছোট।
বলিউডের প্রথম সুপারস্টার
কুন্দনলাল সাইগল, যিনি কেএল সাইগল নামে খ্যাত, তিন-চারের দশকে হিন্দি সিনেমার প্রথম সুপারস্টার হয়ে ওঠেন। জম্মুর এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া সাইগল ছোট থেকেই সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। মা'র সঙ্গে ভজন ও কীর্তনে যাওয়া থেকেই তার সুরের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। কেরিয়ার শুরু হয়েছিল কলকাতায়, গায়ক হিসেবে। ১৯৩২ সালে ‘মহব্বত কে আঁসু’ ছবিতে অভিনয় করে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন, তখন নিজের নাম ব্যবহার করতেন 'সাইগল কাশ্মীরি'। তবে শুরুতে তার সিনেমাগুলো খুব একটা চলেনি।
১৯৩৩ সালে পুরাণ ভগত সিনেমা দিয়ে সাইগলের ভাগ্য খুলে যায়। সিনেমার ভজনগুলো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছায়। এরপর চণ্ডীদাস, ইহুদি কি লড়কি সিনেমাগুলো তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ১৯৩৫ সালে দেবদাস চরিত্রে তার অভিনয় তাকে কিংবদন্তির আসনে বসিয়ে দেয়। পিসি বরুয়ার পরিচালনায় দেবদাস তখনকার এক বিশাল হিট সিনেমা হয়ে ওঠে। ৩০-এর দশকের শেষদিকে তিনি প্রেসিডেন্ট, ‘ধরতি মাতা’, ‘স্ট্রিট সিঙ্গার’, ও ‘দুশমন’–এর মতো সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করেন। এমনকি কিছু বাংলা ছবিতেও দেখা যায় তাকে।
মুম্বই সফর আর পতনের শুরু
১৯৪১ সালে সাইগল মুম্বই পাড়ি জমান এবং সেখানে ‘তানসেন’, ‘মাই সিস্টার’সহ বেশ কিছু হিট ছবিতে অভিনয় করেন। তবে তখন থেকেই মদের প্রতি তার আসক্তি প্রবল হয়ে ওঠে। সমসাময়িক রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি নাকি মদ না খেয়ে শুটিং ফ্লোরে আসতেই পারতেন না। তবুও তিনি ‘শাহজাহান’, ‘ওমর খৈয়াম’ (১৯৪৬) এবং ‘পরওয়ানা’ (১৯৪৭)-র মতো সফল সিনেমা উপহার দেন। ‘পরওয়ানা’ ছিল তাঁর শেষ ছবি, যেটি মুক্তি পায় তার মৃত্যুর পরে। ১৯৪৭ সালের শুরুতে তিনি জলন্ধরে ফিরে যান এবং সেখানেই লিভার ফেলিউরের কারণে মাত্র ৪২ বছর বয়সে মৃত্যু হয় এই মহান শিল্পীর।
সাইগলের চিরস্থায়ী ছাপ
নিজের সময়ের সবচেয়ে বড় তারকা ছিলেন কেএল সাইগল। তার মৃত্যুর পর ইন্ডিয়ান সিনেমায় এক বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়, যেটি কয়েক বছর পর দিলীপ কুমাররা এসে পূরণ করেন। সাইগল তার ক্যারিয়ারে মোট ২৬টি ছবিতে অভিনয় করেন, যার মধ্যে ২৮টি হিন্দি ভাষার (তৎকালীন বাংলা-হিন্দির মিশ্র মাধ্যমের জন্য)। অর্ধেকেরও বেশি ছবি ছিল ব্লকবাস্টার হিট—এমন রেকর্ড আজও শাহরুখ খান বা অমিতাভ বচ্চনের পক্ষেও ভাঙা সম্ভব হয়নি। শুধু অভিনেতারাই নন, সংগীতশিল্পীরাও তাকে গুরু মানতেন। কিশোর কুমার, মোহাম্মদ রফি, লতা মঙ্গেশকর, মুকেশ—সবাই সাইগলকে তাদের সংগীতের অনুপ্রেরণা বলে স্বীকার করেছেন। আজও তাঁর গান শোনা মানে, যেন হিন্দি সিনেমার সোনালী দিনের স্বাদ পাওয়া।
Advertisement
Advertisement