নন্দা
শেষ আপডেট: 2 May 2025 18:22
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বলিউডের এক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নন্দা। মিষ্টি হাসি। কোমল চোখ। অভিনয়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ ছিলেন সহস্র দর্শক। কিন্তু পর্দার পেছনে লুকিয়ে ছিল এক গভীর বেদনা— বিয়ের আগেই হারিয়েছিলেন প্রেমিককে, আর সেই শোকেই কেটেছে তাঁর জীবন।
‘শোর’-এর নায়িকা, ৭০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয়
১৯৭২ সালের ‘শোর’ ছবিতে মনোজ কুমারের বিপরীতে তাঁর অভিনয় আজও দর্শকদের মনে গেঁথে আছে। ৭০টিরও বেশি হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন নন্দা, আর প্রতিবারই তিনি প্রমাণ করেছেন, শুধু সৌন্দর্য নয়, অভিনয়েই তিনি একজন দুর্দান্ত শিল্পী। তাঁর এতটাই আপন ছিলেন ইন্ডাস্ট্রির মানুষজন যে দিলীপ কুমারের স্ত্রী সায়রা বানু পর্যন্ত তাঁকে পরিবারের অন্যতম সদস্য মনে করতেন।
জন্ম থেকে সংগ্রাম, শিশুশিল্পী হিসেবে শুরু
১৯৩৯ সালের ৮ জানুয়ারি, মারাঠি পরিবারে জন্ম নেন নন্দা। আসল নাম ছিল নন্দিনী কারনাটকি। বাবা ছিলেন অভিনেতা ও পরিচালক, আর ভাই ক্যামেরাম্যান। বিখ্যাত পরিচালক ভি. শানতারামের ভাইঝি ছিলেন তিনি। মাত্র সাত বছর বয়সে বাবার মৃত্যু হয়। সংসারের দায় ঘাড়ে তুলে নেন ছোট্ট নন্দা। ১৯৪৮ সালে মন্দির ছবির মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ে পা রাখেন, আর থামেন ১৯৫৬-তে। ভি. শানতারাম তাঁকে ‘তুফান অউর দিয়া’- তে ভাই-বোনের সম্পর্কের এক মর্মস্পর্শী গল্পে কাস্ট করেন, যা তাঁর কেরিয়ারে বড় বাঁক আনে।
সাফল্যের শিখরে থাকা এক নায়িকা
‘ভাবী’ (১৯৫৭), ‘ছোটী বেহন’ (১৯৫৯), ‘কানুন’ (১৯৬০), ‘হম দোনো’ (১৯৬১), ‘আশিক’ (১৯৬২), ‘জব জব ফুল খিলে’ (১৯৬৫), ‘ইত্তেফাক’ (১৯৬৯), ‘দ্য ট্রেন’ (১৯৭০), এবং ‘প্রেম রোগ’ (১৯৮২)-এর মতো বহু হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন নন্দা। ‘ভাবী’ ছবির জন্য পান ফিল্মফেয়ার সাপোর্টিং অ্যাকট্রেস হিসেবে মনোনয়ন। ‘জব জব ফুল খিলে’-তে শশী কাপুরের সঙ্গে তাঁর রসায়ন আজও স্মরণীয়। এক সময় তিনি ছিলেন বলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নায়িকাদের মধ্যে একজন — একইসঙ্গে দৃঢ় আর কোমল নারীর চরিত্রে ছিলেন সাবলীল।
এক প্রেম, যা ভেঙে দিল হৃদয়
সত্তরের দশকে পরিচয় হয় বিখ্যাত পরিচালক ও প্রযোজক মনমোহন দেসাইয়ের সঙ্গে। বন্ধুত্ব গড়িয়ে প্রেমে রূপ নেয়। ১৯৭৯-এ স্ত্রী হারানো দেসাই অবশেষে নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, যার পেছনে উৎসাহ ছিল তাঁদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অভিনেত্রী ওয়াহিদা রেহমানের। নন্দা রাজি হন, বাগদানও হয়। কিন্তু নিয়তির নির্মম খেলায়, মাত্র দু’বছরের মধ্যেই ১৯৯২ সালে এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মনমোহন দেসাই। সেই শোক আর কোনওদিন কাটিয়ে উঠতে পারেননি নন্দা।
এক নিঃসঙ্গ জীবনের সূচনা
প্রেমিকের মৃত্যুর পর থেকেই একেবারে গুটিয়ে নেন নিজেকে। সাদা কাপড় ছাড়া আর কিছু পরতেন না, প্রিয় হীরের গয়নাও ত্যাগ করেন। সমাজের আড়ম্বর থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলেন চিরতরে। ভাই জয়প্রকাশের কথায়, ‘জীবনের অর্থ নিয়েই প্রশ্ন তুলতেন, আর যেন এক সন্ন্যাসিনীর মতো জীবন কাটাতেন।’
নীরবতায় শেষ, কিন্তু স্মৃতিতে চিরসবুজ
২০১৪ সালের ২৫ মার্চ মুম্বাইয়ে ৭৫ বছর বয়সে না-ফেরা দেশে পাড়ি দেন নন্দা। কিন্তু তাঁর ছবি, তাঁর অভিনয় আর তাঁর চিরন্তন সৌন্দর্য আজও রয়ে গেছে বলিউডের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা। নন্দার জীবন যেন এক মেলোড্রামার বাস্তব রূপ — তারকা খ্যাতির শিখরে থাকা এক নারীর নিঃসঙ্গতার করুণ গল্প।