শেষ আপডেট: 2nd December 2024 17:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বলিউডের ঝাঁ চকচকে ব্যক্তিত্বদের দেখে মুগ্ধ হয়ে যান অনেকেই। অনেকেই আবার ভাবেন, আহা, যদি অমন জীবন আমিও পেতাম! অনেকে আবার পর্দার চরিত্রদের দেখেই একাত্মবোধ করেন সেই অভিনেতার সঙ্গে, অনুপ্রেরণা পান জীবনের। কিন্তু এমন অনেক ঝাঁ চকচকে জীবনের পিছনেই যে সংগ্রাম থাকে, সেখানেই লুকিয়ে থাকে আসল অনুপ্রেরণার কাহিনি। ঠিক যেমন বোমান ইরানি (Boman Irani)। শূন্য থেকে শুরু করে সাফল্যের চুড়োয় পৌঁছনোর যে যাত্রা তিনি করেছেন, তা যেন ঠিক রূপকথা।
আজ, ২ ডিসেম্বর বোমান ইরানির (Boman Irani) জন্মদিন। ১৯৫৯ সালের এই তারিখেই মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণ কেন তিনি। এই দিন জেনে নেওয়া যাক বোমানের জীবনের গল্প।
বোমানের শৈশব কাটে আর্থিক টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে। মাত্র ছ’মাস বয়সেই পিতৃহীন হন বোমান। তিন বোন ও বোমানকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নামেন তাঁদের মা। বোমান ছোটবেলায় ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত হলেও, তাঁর মায়ের ইচ্ছা ছিল, ছেলে যেন উচ্চশিক্ষিত হয়।
বোমানের বাবার একটা কনফেকশনারি দোকান ছিল, সেটিই ছিল পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। সেই দোকানে কাজ করতে করতেই স্কুল পাশ করেন বোমান। উচ্চমাধ্যমিকের পরে তিনি ওয়েটার হিসেবে কাজ করবেন বলে ভাবেন। পাশাপাশি অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থাকায় বিভিন্ন নাটকেও অংশগ্রহণ করতেন।
শেষমেশ জীবিকার তাগিদে মুম্বইয়ের একটি বড় হোটেলে কাজ শুরু করেন বোমান। প্রথমে ঘর পরিষ্কার করার দায়িত্ব পেলেও পরে প্রধান রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশনের কাজ পান। এই সময় ফোটোগ্রাফি নিয়েও কাজ শুরু করেন বোমান। ক্রিকেট ও ফুটবল ম্যাচের ছবি তুলে তা ২০-৩০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন তিনি।
আলোকচিত্রশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও ভাগ্যের চাকা ঘোরে ইন্ডিয়ান বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কাজ করার সময়। বিভিন্ন বক্সিং প্রতিযোগিতায় ছবি তুলে ধীরে ধীরে পরিচিতি পান তিনি।
সেই সূত্রেই অভিনয় জগতে তাঁর প্রবেশ ঘটে এক বন্ধুর উৎসাহে। বন্ধুর কথাতেই বিজ্ঞাপনের জন্য অডিশন দেন বোমান। নির্বাচিতও হন। একের পর এক, মোট ১৮০টি বিজ্ঞাপনে কাজ করেন তিনি। এই অভিজ্ঞতাই তাঁকে বড় পর্দার দিকে নিয়ে যায়।
বোমান ইরানির প্রথম বড় ব্রেক আসে বিধুবিনোদ চোপড়ার হাত ধরে। রাজকুমার হিরানির পরিচালিত ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবিতে ডঃ আস্তানা চরিত্রে তাঁর অভিনয় সবার মন জয় করে নেয়। এই ছবিটি ছিল তাঁর কেরিয়ারের প্রথম বড় সাফল্য। বলিপাড়ায় শোনা যায়, এই চরিত্রটি প্রথমে অমরীশ পুরীর জন্য ভাবা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুযোগ পান বোমান।
এরপর একাধিক হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘খোসলা কা ঘোসলা’, ‘ডন’, ‘ম্যায় হুঁ না’, ‘লগে রহো মুন্নাভাই’ থেকে শুরু করে ‘হাউসফুল’-এর মতো জনপ্রিয় ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে।
সম্প্রতি শাহরুখ খান, তাপসী পান্নু এবং ভিকি কৌশলের সঙ্গে ‘ডানকি’ ছবিতে অভিনয় করেছেন বোমান। প্রতিটি চরিত্রে তাঁর অভিনয় দক্ষতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিচ্ছে তাঁকে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বোমান বলেছিলেন, ছোটবেলায় কখনও ঘরের ভিতরে ঘুমানোর জায়গা না পেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়েও রাত কাটাতে হয়েছে। এমনকি ৪৭ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর নিজের নামে কোনও বাড়ি ছিল না। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি।
বোমান ইরানির সংগ্রামমুখর শৈশব থেকে শুরু করে বলিউডের অন্যতম সফল কৌতুকাভিনেতা হয়ে ওঠার গল্পের প্রতিটি অধ্যায়ই প্রমাণ করে, কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে জীবনের যে কোনও বাধাই জয় করা সম্ভব। তাই তাঁর জীবন কেবল এক গল্প নয়, জীবনের এক উজ্জ্বল উদাহরণও।