শেষ আপডেট: 24th September 2024 20:32
পুজোর সময় কোনও বছরই কলকাতায় থাকেন না তিনি। ষষ্ঠীর সকাল হতে না হতেই কলকাতা ছেড়ে রওনা দেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে চার দিন ধরে মহাসমারোহে চলে দুর্গাপুজো। ছোটবেলার স্মৃতি আর আভিজাত্যকে আঁকড়ে ধরে পুজোর কয়েকটা দিন সেখানেই কাটে তাঁর। হাজার কাজ থাকলেও গ্রামের বাড়ির পুজো ছেড়ে মোটেই কোথাও যেতে চান না তিনি। আসলে কথা হচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের স্বনামধন্য কৌতুক অভিনেতা তথা সঞ্চালক বিশ্বনাথ বসুর বাড়ির পুজোর।
প্রতিবছর নিষ্ঠার সঙ্গে উমার বোধন হয় বিশ্বনাথের গ্রামের বাড়ি বসিরহাটের আড়বেলিয়ায়। এই বছরও তার অন্যথা হচ্ছে না। তবে অভিনেতার কাছে এবছর যেন সবটাই বড্ড ফ্যাকাশে। পুজো পুজো গন্ধ নেই। শহরের মন খারাপেই মন পড়ে রয়েছে তাঁর। কেমনভাবে কাটবে এবারের পুজো? একগুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে যোগাযোগ করা হয় দ্য ওয়ালের পক্ষ থেকে।
দ্য ওয়ালকে বিশ্বনাথ জানালেন, 'মনটা একেবারেই ভাল নেই। কেউ যেন খুশি নেই। রাস্তায় প্রতিবাদের ছায়া। ছাতিম ফুলের গন্ধতেও মন ভাল হতে চাইছে না। বাড়ির ছোটরা আবার এসব বোঝে না। তাদের হইহই করা, নতুন জামা কেনা দেখে মনটা মাঝে মাঝেই ভাল হচ্ছে। আমি ষষ্ঠীর দিন সকাল সকাল গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। আর দশমী পর্যন্ত ওখানেই থাকি। ষষ্ঠী থেকে দশমীর সকাল কীভাবে মজা করে কেটে যায়, বুঝতেই পারি না।'
পুজোর তোড়জোড় কী তবে মোটামুটি শুরু? উত্তরে অভিনেতা বলেন, 'এবারের মন খারাপের আঁচ পড়েছে আমার বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিতেও। কীভাবে বুঝতে পারলাম জানেন? পুজো আসছে এটা ভেবেই কতদিন আগে থেকে মনটা খুশি হয়ে যেত। পুজোর আগে আমার প্রথম কাজ থাকে, আত্মীয়-পরিজনদের ফোন করা। এবারেও তাই করেছি। প্রতিবছর তাঁরাও কত আনন্দে থাকেন। এবার কিন্তু সেটা নেই। ফোন করছি, কিন্তু তেমন কোনও উৎসাহ কারও মধ্যেই দেখছি না।'
তিনি আরও বলেন, 'এবার যে প্রতিবারের মতো সব কিছু অতটা উজ্জ্বল থাকবে, তা বলছি না। তবে আমাদের বাড়িতে রোজই ফল-মিষ্টি-প্রসাদ দিয়ে পুজো দেওয়া হয়। এছাড়াও রোজ নিরামিষ ভোগ হয়। তাই এসব রীতিনীতির কোনও পরিবর্তন হবে না। শুনেছি ১৬৭০ থেকে আমাদের বাড়ির পুজো শুরু হয়। এবার ৩৫৪ বছরে পা দিল আমাদের পুজো। কিন্তু কোথাও গিয়ে উৎসাহটা কিছুটা কম।'
ছোটবেলার স্মৃতিতে ভেসে গিয়ে বিশ্বনাথ বলতে থাকেন, 'আমার ছোটবেলার পুজো ছিল একদম অন্যরকম। নিয়মের দিক থেকে নয়। আসলে সেই সময় আমাদের গ্রামটা বেশ প্রত্যন্ত ছিল। এখনও মনে পড়লেই আলো ঝলমলে গ্রামের ছবিটাই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ষষ্ঠীর দিন জ্যাঠা-কাকারা আসতেন। বাড়িটা যেন জমজমাট হয়ে উঠত। এখনও পুজোয় আমার বাড়ির কচিকাঁচারা ছোট্ট করে অনুষ্ঠান করে। সেই সব নিয়ে পুজোর আগে থেকেই মত্ত থাকে সবাই। এবারেও এসব হবে। কারণ ওদের এখনও বোঝার ক্ষমতা হয়নি। ওদের কাছে পুজোর চারটে দিন মানে শুধুই আনন্দ।'
তবে কি আয়োজন এবারে কিছুটা ম্লান? প্রসঙ্গ উঠতেই বিশ্বনাথ বলেন, 'নিয়মরীতিতে কোনও খামতি থাকবে না। প্রতিপদে ঘট বসে যায় ঠাকুরদালানে। তখনও যদিও আমি গিয়ে পৌঁছাই না। পাঁচ দিন ধরে চলে সেই ঘটপুজো। ষষ্ঠীর দিন ঠাকুরদালানে প্রবেশ করানো হয় দুর্গা মাকে। সেদিনই ঠাকুরদালানের সামনে বেলতলায় বোধন শুরু হয় উমার। এসব কিছুই নিয়ম মেনে হবে এবারেও। উমাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতির কোনও খামতি রাখা হবে না।'
চারিদিকে ঘটে যাওয়া একের পর এক খারাপ ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে অভিনেতা কিছুটা মন খারাপের সুরেই বলেন, 'প্রতিমার নিরঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গে সব খারাপের যেন নাশ হয়ে যায়। এই বাংলা সম্পর্কে ভাল কথা শুনলে যেমন আমার গর্ব হয়, খারাপ কিছু দেখতে একেবারেই ভাল লাগে না। তাই সব খারাপের বিসর্জন হোক।'