Date : 15th Jul, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
মর্নিংওয়াকে বেরিয়েছিলেন হায়দরাবাদের সিপিআই নেতা, চোখে লঙ্কাগুঁড়ো ছুড়ে গুলি করে মারল আততায়ীরাপ্রেমিকের সঙ্গে মিলে হবু বরকে খুন করেন তরুণী! 'ভুল' সংশোধনে আশার আলো দেখাল সুপ্রিম কোর্টছোট পর্দায় ফিরছেন সন্দীপ্তা, এবার হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকা রূপে নিজেকে প্রমাণ করবেন 'দুর্গা' পণের জন্য মারধর, শ্বশুরের যৌন হেনস্থায় সায় ছিল স্বামীর! শেষমেশ মেয়েকে নিয়ে আত্মঘাতী বধূ'মমতার মতো প্রধানমন্ত্রী পার্টি আর সরকারি সভাকে গুলিয়ে ফেলেন না', খোঁচা দিলীপেরআত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন আগেই! ওড়িশায় ছাত্রী-মৃত্যুতে 'প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা' বলছেন বিরোধীরা খেজুরির মেলায় দু'জনের মৃত্যুতে রাজনৈতিক তরজা, দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে পরিবারভারতে ঢুকল টেসলা, এসইউভি ওয়াই মডেল দিয়ে শুরু, দামের পুরো তালিকা দিল মাস্কের কোম্পানিমৃত্যু হয়েছিল অন্তত ১০ বছর আগে! হায়দরাবাদের কঙ্কাল কাণ্ডে মোড় ঘোরাল পুরনো ফোন, বাতিল নোটভারতে 'এন্ট্রি' নিল টেসলা, মুম্বইয়ে প্রথম শোরুম খুলল ইলন মাস্কের কোম্পানি
Oti Uttam Cinema

অতি উত্তম-ছবিতে একা উত্তম অসহায়, শ্রদ্ধার নামে ব্যবসা, চ্যাংড়ামি বন্ধ হোক: ভাস্কর

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'অতি উত্তম' ছবি দেখে বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিলেন অভিনেতা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা বললেন শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। 

অতি উত্তম-ছবিতে একা উত্তম অসহায়, শ্রদ্ধার নামে ব্যবসা, চ্যাংড়ামি বন্ধ হোক: ভাস্কর

'অতি উত্তম' সিনেমা পোস্টার । অভিনেতা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: 28 March 2024 15:43

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'অতি উত্তম' ছবি দেখে বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিলেন অভিনেতা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা বললেন শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। 

গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'অতি উত্তম' ছায়াছবি। প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের সাহায্যে নতুন ভাবে উত্তম কুমারকে পর্দায় নিয়ে এলেন সৃজিত। উত্তম কুমারের অভিনয় করে যাওয়া ছবির ফুটেজ নিয়ে একটি আস্ত ছবি বানিয়ে ফেলা হয়েছে, যা একটু অন্য রকম ভাবনা তো বটেই। কিন্তু পর্দায় উত্তম কুমারের আবির্ভাব কতটা যুক্তিযুক্ত? 'অতি উত্তম' ছবি উত্তম কুমারকে শ্রদ্ধা জানানোর নামে ব্যবসা করছেন পরিচালক প্রযোজক। ছবি দেখে নিজের মতামত জানালেন অভিনেতা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। 

ভাস্কর 'দ্য ওয়াল'কে বললেন, "ছবিটা টেকনিক্যালি ভাল। সৃজিত মুখোপাধ্যায় নতুন একটা ভাবনা ভেবে ছবিটা করেছেন। কিন্তু ছবি শুরুর পর যত এগোতে থাকে ততই যেন বিরক্ত লাগতে থাকে। ছবিতে কী এমন গল্প রয়েছে যাতে উত্তমকুমারের মতো ব্যক্তিত্বকে আনা যায়? এই ট্রেন্ড যদি শুরু হয়ে যায় তাহলে তো কোনও দিন চার্লি চ্যাপলিন, রাজ কাপুর, নার্গিসকে এভাবে এনে ছবি বানানো শুরু হবে। এদের বাবা মায়ের চরিত্রে দেখিয়ে দেওয়া হবে। কপি পেস্ট হচ্ছে এগুলো। সিনেমার চিত্রনাট্যে একটু শরৎচন্দ্র, একটু শেক্সপিয়র, একটু বঙ্কিমচন্দ্র ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো ব্যাপার। এটা তো ক্ষতিকর। উত্তমকুমারকে এখনকার ছবিতে আনা এটা করা কিন্তু সহজ  ব্যাপার নয়। কিন্তু এই সিনেমার গল্পে যেভাবে উত্তমকুমারকে দেখানো হচ্ছে সেটা চ্যাংড়ামি হয়ে গেছে। সৃজিত মুখোপাধ্যায় তো নামী ডিরেক্টর। কিন্তু অনেক উঠতি অকালপক্ক ডিরেক্টরও তো  আছেন। তাঁরাও যদি এভাবে পুরনো দিনের আর্টিস্টদের কপি পেস্ট করে ছবি বানানো শুরু করেন সেগুলো বাংলা ছবির আরও  ক্ষতি করবে। 

উত্তমকুমারের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সিরিয়াল করা হয়েছিল। এবার যদি উত্তমকুমারকেই পর্দায় এনে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন দেখানো হয়, তা অত্যন্ত  বিকৃত ব্যাপার হবে! 
তাছাড়া 'অতি উত্তম' ছবিতে একা উত্তমকুমার অসহায়। সেই মাপের গল্প নেই, গান নেই, বাকিদের অভিনয় জোরালো নয় কিছুই দাঁড়ায়নি। উত্তমকুমার  স্বীকার করতেন,তিনি একার জোরে মহানায়ক হননি। পাহাড়ী  সান্যাল, ছবি বিশ্বাস, সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক অজয় কর, বিভূতি লাহা, সরোজ দে, এমনকী সত্যজিৎ রায়ের  মতো ব্যক্তিত্বরা ছিলেন। সর্বোপরি উত্তমকুমারের ছবিতে ক্যামেরার পিছনে যারা কাজ করেছেন সেই টেকনিশিয়ানরাও ছিলেন অসামান্য। এদের ছাড়া তিনি মহানায়ক হতেন না। আর সৃজিতবাবুকে ছবিতে সেইসব অতীতের পরিচালক টেকনিশিয়ানদের উপরই নির্ভর করতে হয়েছে। গানের কথা তো বলতেই হবে। হেমন্ত সন্ধ্যা মান্না শ্যামল না থাকলে একা উত্তমকুমার কী করতেন? ভাল স্ট্রাইকার কিন্তু ভাল ডিফেন্ডার না হলে খেলা জমে? ছবি বিশ্বাসের মতো একটা স্তম্ভও চাই ছবিতে। 

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে একা উত্তমকুমার ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভাল গানও নেই, বাকিদের ভাল অভিনয়ও নেই। উত্তমকুমার বলছেন "আমি তো আছি"। "আমি তো আছি" বলা উত্তমকুমারকে দেখতে হলে সত্যজিৎ রায়ের 'নায়ক' দেখব। আমার মনে হয়েছে এটা উত্তমকুমারকে নিয়ে চ্যাংড়ামি হচ্ছে। বালখিল্য ব্যাপার। এতে উত্তমকুমারের কিছু ক্ষতি হবে না। বাংলা ছবি আরো অধঃপতনে যাবে। উত্তমকুমার কেন ভাই আরো তো অনেক লেজেন্ড আছে তাঁদের নিয়েও কর। বারবার উত্তম। আসলে উত্তমকুমার এখনও  সবথেকে বেশি বিক্রয়যোগ্য বস্তু।" 

'অতি উত্তম' ছবিতে অভিনয় করেছেন উত্তমকুমারের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়। ছবির স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ে হাজির ছিল উত্তমকুমারের পুরো পরিবার। বৌমারা,নাতি,নাতনি সবাই। ছবিটি  তাঁরা কেন ছবিটির প্রমোশন করছেন প্রতিবাদের পরিবর্তে?

ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব "আগেই বললাম উত্তমকুমার হলেন চিরকালের 'Saleable Item'। সেটা ওঁনার পরিবার ভাল করেই জানেন। তাই কেন উত্তমকুমারের পরিবার প্রতিবাদ করবে? এতে দোষের কিছু নয়। আগেও যখন 'মহানায়ক' নামে কদর্য সিরিয়ালটা  হয়েছিল তখনও তো উত্তমকুমারের পরিবার প্রতিবাদ করেনি। উত্তমকুমারকে নিয়ে ভাল ব্যবসা হয়। সিনেমা মানে যদিও ব্যবসা। পত্রিকায় 'উত্তম সংখ্যা' করলে  এখনও বিক্রি হয়। কিন্তু মানুষটাকে ছোট করে ব্যবসা করা ঠিক  নয়। আজ থেকে ২০ বছর পর লোকে কী ভাববে, উত্তমকুমার কার কার সঙ্গে শুয়ে পড়েছিলেন বিছানায়? কার সঙ্গে চ্যাংড়ামি করেছিলেন?-এগুলো তো ঠিক নয়। ছবির টেকনিক্যাল দিক বাদ দিয়ে একেবারেই খেলো ছবি 'অতি উত্তম'।

'আমার আমি' উত্তমকুমারের আত্মজীবনী। ছবি করুক উত্তমকুমারকে পর্দায় এনে তাও একটা ডকুমেন্ট হবে।" 

২০০২-০৩ সালে তৎকালীন ইটিভি বাংলা চ্যানেলে 'অতি উত্তম' নামে একটি টেলিফিল্ম সিরিজ হয়েছিল। যাতে উত্তমকুমারের ছবিগুলোতে অভিনয় করেন নতুন শিল্পীরা। কুণাল মিত্র,অভিষেক চট্টোপাধ্যায়,ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ও উত্তমের  করা চরিত্রে অভিনয় করেন। ভাস্করকে তো বলাই হয় ছোটপর্দার উত্তম। সেই 'অতি উত্তম' নামটাতেও তাই সৃজিতের কৃতিত্ব নেই। যা আগেই ব্যবহৃত। ভাস্কর বললেন "আমি উত্তমকুমারের ছবির গল্পে টেলিফিল্মে অভিনয় বহুবার ফিরিয়ে দেওয়ার পর 'দেয়া-নেয়া' টা করেছিলাম। সেটা অনুসরণ মাত্র। কিন্তু সেটাকেও আমি বাজে বলব। জঘন্য বলব। শেওয়াগের স্ট্রোকে তেন্ডুলকরের সঙ্গে মিল আছে। কিন্তু  তেন্ডুলকর।  এখন যদি 'দেয়া-নেয়া' ছবি আবার হয় , শুধু উত্তমকুমারকে প্রযুক্তিতে আনা হল বাকি সব নতুন আর্টিস্ট। সেটা কী হবে সেটা? উত্তমকুমার ওখানে যে বলগুলো পেয়েছিলেন এখানে তো সেটা নেই। তনুজা নেই, পাহাড়ী সান্যাল নেই, কমল মিত্র নেই, শ্যামল মিত্রর গান নেই। উত্তমকুমার তো বেচারা অসহায়। সেরকমই লাগছে ছবিটি। উত্তমকুমার হাঁটছেন চলছেন, ওতো  এমনিও দেখা যায়, তার জন্য সিনেমা করার দরকার ছিল না। আইডিয়া ভাল কিন্তু ছানা কেটে গেল। সৃজিত মুখোপাধ্যায় কে দোষী বলছি না কিন্তু উত্তমকুমার অসহায় হয়ে গেছেন। আর এখন তো সব পরিচালক অভিনেতা সবাই নিজেদের ঈশ্বর মনে করেন আমি ভগবান আমি যা করব তাই ভাল। দর্শক গেল কী গেল না সেটা বিষয় নয়। একে অপরের পিঠ চাপড়ে ছবির প্রমোশন হলেই হল। 

আজকাল ছবির সাফল্য দিনে হিসেব হয়। ৭৫ দিন আবার কী ৭৫ সপ্তাহ গোনা হোক। উত্তমকুমারের সময় সপ্তাহে হত। রজত জয়ন্তী সপ্তাহ, স্বর্ণ জয়ন্তী সপ্তাহ। এখন সেটা দিনে একটা দুটো হলে একটা শোয়ে সাফল্য মাপছে। এমন প্রচুর ছবি আছে যা মাসের পর মাস হাউসফুল হতো। ম্যাটিনি ইভনিং,নাইট তিনটে শো রোজ হাউসফুল।"


ভিডিও স্টোরি