Latest News

গণপতি বাপ্পার দাপটে বিরল বাংলার লাল গণেশের পুজো, রঞ্জিত মল্লিকের বাড়িতে কিন্তু ম্লান হয়নি ঐতিহ্য

শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

‘গণেশ দাদা, পেটটি নাদা, ক্ষীর খেয়েছে গাদাগাদা’, এই ছড়া একসময় বাঙালির মুখেমুখে ফিরত। যে ছড়া দিয়ে ভুঁড়িদার বাঙালি গণেশের চিত্র ফুটে উঠত। কিন্তু গণেশ (Bengali Ganesh Worship) ঠাকুরের এই আদুরে বাঙালি রূপ যেন বিলীন হয়ে গেল ‘গণেশ চতুর্থী’র পরাক্রমশালী গণপতির দৌলতে। অনুকরণপ্রিয় বাঙালি জাতি নিজের ঐতিহ্য বিসর্জন দিয়ে অন্যের যা কিছু নকল করতে পারলেই নিজেদের বিত্তবান মনে করে।

তাই এ যুগের নতুন প্রজন্ম জানে গণেশ পুজো মানেই গণেশ চতুর্থী। অথচ এই গণেশ চতুর্থীর ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’ বাঙালির নিজস্ব পুজোর স্লোগানই নয়। একেবারেই অন্য প্রদেশের পুজোকে বাংলায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে দিনকেদিন। এখন তো কুমোরটুলি পাড়ায় শীতলা, ষষ্ঠী, বিশ্বকর্মাদের চাহিদা আর নেই। লক্ষ্মী-সরস্বতীদের থেকেও বেশী এখন চাহিদা গণপতি কেনার। মুম্বইয়ের গণপতি উৎসবই আজকাল প্রতিটি বাঙালির অন্দরমহলের পুজো হয়ে উঠেছে, আর ততই ব্রাত্য হচ্ছে আদি বাংলার গণেশ পুজো।

Image - গণপতি বাপ্পার দাপটে বিরল বাংলার লাল গণেশের পুজো, রঞ্জিত মল্লিকের বাড়িতে কিন্তু ম্লান হয়নি ঐতিহ্য

বাঙালির আসল লাল গণেশ পুজো হয় মাঘ মাসে, ঠিক সরস্বতী পুজোর আগের দিন। অথচ এই বাংলার গণেশ পুজো সম্পর্কে এযুগের বেশিরভাগ বাঙালিই জানে না। অথচ গণেশ পুজো করেই তো সব উৎসবের শুরু হয়। পয়লা বৈশাখে বাঙালির গণেশ পুজো হলেও এই মাঘ মাসের গণেশ বাঙালির ঘরের পুজো, যা বেশিরভাগ বাঙালি জানেই না।

তবে কলকাতা শহরের বুকে ভবানীপুরের মল্লিক বাড়িতে (Mallick Family) আজও হয় এই বাংলার লাল গণেশের পুজো। বিখ্যাত অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের এই বাড়ি অবশ্য চিরকালই সংস্কৃতিমনস্ক, শিক্ষিত, রুচিশীল পরিবার। পুরীর মন্দিরে জগন্নাথদেবের রান্নাঘরের আইডিয়া নিয়েই ইন্দুমাধব মল্লিক আবিষ্কার করেন ইকমিক কুকার। আর রঞ্জিত মল্লিক ফিল্মে আসার পরে এই বাড়ির দুর্গা পুজো তো গ্ল্যামারে প্রচারে প্রথমসারির বনেদি বাড়ির পুজোর তালিকায় চলে আসে। রঞ্জিত তনয়া কোয়েল মল্লিকের হাত ধরে নতুন প্রজন্মের মধ্যেও এই বাড়ির পুজো সবার কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

Image - গণপতি বাপ্পার দাপটে বিরল বাংলার লাল গণেশের পুজো, রঞ্জিত মল্লিকের বাড়িতে কিন্তু ম্লান হয়নি ঐতিহ্য
ইন্দুমাধব মল্লিক ও ইকমিক কুকার।

তবে শুধু দুর্গা পুজো নয়, বারো মাসে তেরো পার্বণই পালিত হয় এই বাড়ির লাল মেঝের ঠাকুর দালানে। লক্ষ্মী, সরস্বতী, জগদ্ধাত্রী– প্রতিটি পুজো হয় এই বাড়িতে। ঠিক সেভাবেই আজও বাংলার গণেশের পুজো করা হয় মল্লিকবাড়িতে সরস্বতী পুজোর আগের দিন, যা এ কালের গণপতি যুগে এক বিরল ঘটনা। চিরকালের হয়ে আসা নিয়ম মেনেই পাঁজি দেখে এই গণেশ পুজো করা হয় মল্লিক বাড়িতে। মাড়োয়ারিদের গণপতির থেকে এই লাল গণেশ অনেক বেশি কাছের। যার সাজ একদম নিরাভরণ কিন্তু ভীষণ মিষ্টি। দেখে মনে হয়, বাংলার কোন নাদুসনুদুস পুরুষ। এই গণেশের গায়ের রং রাঙা লাল আর পরনে সাদা তাঁতের ধুতি এবং সে পৈতেধারী।

মল্লিকবাড়ির মেয়ে পিউ মল্লিক সেন জানালেন, ‘আমাদের মল্লিক বাড়ির এসব ঠাকুর কিন্তু কুমোরটুলি থেকে আনা হয় না। ভবানীপুরের মল্লিকবাড়ির পাশে একটা শীতলা মন্দির আছে, তার পাশে পটোরা ঠাকুর তৈরি করেন। গণেশ, সরস্বতী– সব ঠাকুর সেখানে তৈরি করে পটুয়ারা দিয়ে যান। পাঁজি দেখেই এই গণেশ পুজো হয়। অনেক বছর ধরে এই রীতি চলে আসছে। গণেশ পুজোর ভোগে হয় লুচি, ফুলকপির তরকারি, ছোলার ডাল, চাটনি। একই ভোগ পরের দিন মা সরস্বতীকেও দেওয়া হয়। পরের দিন আমাদের ঠাকুর দালানেই গণেশের পাশে সরস্বতী পুজো হয়। সরস্বতী পুজোর ভোগে বাঁধাকপির পাঁচমিশেলি তরকারিও হয়। সন্ধ্যেতে লুচি তরকারি হয় মায়ের ভোগে। তাছাড়া আমাদের বাড়িতে নিজস্ব নাড়ুও তৈরি হয়। ঠাকুরের ভোগের আলাদা নৈবেদ্য ঘর আছে। সেখানেই এসব ভোগ আর নাড়ু তৈরি হয়। সব জায়গাতেই দেখি গণেশ চতুর্থীর হিড়িক। কিন্তু এই লাল গণেশের পুজো আমরা ছোট থেকেই দেখে আসছি। আমাদের বাড়ির আদি পুজো এটাই।’

Image - গণপতি বাপ্পার দাপটে বিরল বাংলার লাল গণেশের পুজো, রঞ্জিত মল্লিকের বাড়িতে কিন্তু ম্লান হয়নি ঐতিহ্য

ভবানীপুর চত্বরে বাঙালিদের বসবাস কমে এলেও মল্লিকবাড়িতে বাড়ি আজও খাঁটি বাঙালি রীতিনীতি বজায় রেখে চলেছে। এই পরিবারের মেয়ে কোয়েল মল্লিকেরই তো বিয়ে হয়েছে নিশপাল সিং পরিবারে। কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতি কোয়েল ছাড়েননি। সরস্বতী পুজোর সকালে বাসন্তী শাড়ি পরে কোয়েল হাজির হলেন মল্লিক বাড়িতে। গণেশ আর সরস্বতী ঠাকুরের মাঝে বসে ছবিও তুললেন। হারাতে বসা বাঙালির পুজো পার্বণ আজও বহমান, যা দেখে চোখ জুড়োয়। এটাই তো বাংলার গণেশ, তাঁর পুজোতে এত আয়োজন এ যুগের বাঙালিদের শেখার মতো।

বাসন্তী সাজে রানি, সরস্বতী পুজোর ছবি দেখে মুগ্ধ সকলে! ‘মিসেস চ্যাটার্জী’ রূপে আসছেন মার্চে

You might also like