এবার আবার নতুন এক বয়কটের ডাক। অফিসিয়াল সিনে আর্ট ডিরেক্টরস গিল্ডের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে আসে একটি মেসেজ...
শুভার্থীকে ‘বয়কট’!
শেষ আপডেট: 12 May 2025 15:29
শুভঙ্কর চক্রবর্তী
টলিউডে বয়কট কালচার নতুন নয়। অতীতে পরিচালককে কখনও ‘বয়কট’ করে federation of cine technicians & workers of eastern India আবার কখনও গোটা শুটিং ফ্লোরকেই বয়কট করেছেন পরিচালকদের একাংশ।
এবার আবার নতুন এক বয়কটের ডাক। অফিসিয়াল সিনে আর্ট ডিরেক্টরস গিল্ডের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে আসে একটি মেসেজ।
‘ইনি শুভার্থী বা তিতলি (ডাকনাম)। ইনি আমাদের কোন মেম্বার নয়। এর সাথে আমাদের কোন সদস্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কাজ করবেন না। যদি একে কোথাও কাজ করতে দেখেন তৎক্ষণাৎ গিল্ডকে জানান।’
এই নির্দেশটি দেন আর্ট ডিরেক্টরস গিল্ডের সেক্রেটারি মানস ভট্টাচার্য।
কী কারণে এই বয়কটের ডাক? কী কারণে বাধা? এবং কী কারণে ‘একে অর্থাৎ শুভার্থীকে কোথাও কাজ করতে দেখেন তৎক্ষণাৎ গিল্ডকে জানাতে হবে?
এমন কিছু প্রশ্ন নিয়ে ‘দ্য ওয়াল’-এর পক্ষ থেকে ফোন করা হয় মানসবাবুকে। তিনি বলেন, ‘শুভার্থী সম্প্রতি যে কাজটি করেছেন, সেখানে আর্ট গিল্ডের কোনও সদস্যকেই নেওয়া হয়নি। তাই এই নির্দেশ!’
পাল্টা প্রশ্ন ছিল, এমন কোনও বিধি বা নীতি বা আইন রয়েছে কি যেখানে একজন প্রোডাকশন ডিজাইনারকে গিল্ডের সদস্যদের নিয়েই কাজ করতে হবে? প্রশ্নের উত্তরে খানিক সুর চড়ালেন মানসবাবু, বললেন, ‘আমি শুভার্থীকে কিছু বলিনি সেই অধিকার আমার নেই। কিন্তু, গিল্ডের সদস্যদের নির্দেশ দেওয়ার অধিকার আমার আছে,’
সেই একই সুরে তিনি বলেন, ‘ভারতবর্ষের আইনের সঙ্গে আমার-আপনার বাড়ির আইনের মিল নেই। আপনার বাড়িতে কে জুতো পরে ঢুকবে কি ঢুকবে না, সেটা আপনি ঠিক করেন, ভারতবর্ষের আইন নয়।’ খানিক সুর নামিয়ে বললেন ‘আমাদের এত সংখ্যক সদস্য, ৩৬৫ দিন আমরা কাজ করি, আর কাজ করি বলেই, একজন পরিচালকের স্বপ্ন সত্যি হয়। কিন্তু আমাদের সদস্যদের না নিয়ে যদি দিনের পর দিন কাজ করা হয়, সেক্ষেত্রে এক আর্থিক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়, সে বিষয় নিয়ে একজন সিনেকর্মী কেন ভাববেন না?’
ঘটনার সূত্রপাত এক সর্বভারতীয় সংস্থার বিজ্ঞাপনের শুটিংকে কেন্দ্র করে। সূত্রের খবর দিন কয়েক আগে, বড় পরিসরে একটি ন্যাশনাল বিজ্ঞাপনের শুটিং হয় এই শহরে। বিভিন্ন গিল্ডের সদস্যদের নিয়ে সেই কাজ হয়নি। উপস্থিত ছিলেন না প্রতি গিল্ডের সদস্যরা। এবং সেই খবর পেয়ে, শুটিং লোকেশনে পৌঁছয় বিভিন্ন গিল্ডের পদাধিকার সদস্যরা। কিন্তু সেই শুটিং বন্ধ করা যায়নি। শুটিং শেষ হয় স্বাভাবিকভাবে। সূত্রের আরও খবর, এর পর থেকেই একের পর এক সিনেকর্মীদের বয়কটের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিভিন্ন গিল্ড। শুভার্থী বিশ্বাস ছিলেন সেই শুটিংয়ের প্রোডাকশন ডিজাইনার।
‘দ্য ওয়াল’-এর পক্ষ থেকে ফোন করা হয় যাঁর বিরুদ্ধে এই বয়কটের ডাক, সেই শুভার্থী বিশ্বাসকে। ‘আমি কোনও গিল্ডের সদস্য নই। এর কারণ প্রোডাকশন ডিজাইনার-এর জন্য কোনও গিল্ডের অস্তিত্ব নেই। আমি প্রোডাকশন ডিজাইন করি। ইন্ডিপেনডেন্ট কাজ করি। কিছু ক্ষেত্রে গিল্ডের সদস্যদের নিতেই হবে, এমন কোনও নিয়মবিধি নেই। দ্বিতীয়ত যে কাজটি নিয়ে এই অভিযোগ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে বলি, আমি সেই কাজটিতে আর্ট সেটিং এমনকি কারপেন্টার নিয়েই কাজ করেছি।’
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মানসবাবুর যে মেসেজটি করেন, তাতে ছিল শুভার্থী বিশ্বাসের কিছু ছবি। সে প্রসঙ্গে শুভার্থী বলেন, ‘আমার প্রাইভেসি হ্যাম্পার করা হয়েছে, দ্বিতীয়ত এইভাবে হুমকি, ‘কোন সদস্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কাজ করবেন না’ এবং যদি একে কোথাও কাজ করতে দেখেন তৎক্ষণাৎ গিল্ডকে জানাতে হবে, এমন বক্তব্য কোনও গিল্ডের সম্পাদক নির্দেশ জারি করতে পারেন না!’
প্রসঙ্গত, আগামী ১৪ মে, এসভিএফ প্রযোজিত অনির্বাণ ভট্টাচার্যর বাংলা ব্যান্ড ‘হুলিগানিজম’-এর তৃতীয় মিউজিক ভিডিওর শুটিং হতে চলেছে। প্রোডাকশন ডিজাইনিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন শুভার্থী বিশ্বাস। কিন্তু তাঁকে জানানো হয়েছে, শুভার্থী এই কাজটির সঙ্গে যুক্ত হলে, একাধিক সিনেকর্মী বিরত থাকবেন। এই প্রসঙ্গে শুভার্থীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি চাই অনির্বাণদাদের কাজটা শেষ হোক। আমি কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারলেও চাই, সেটা শেষ হোক।’