
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক অতনু ঘোষের আগামী ছবি (Bengali Movie) ‘আরও এক পৃথিবী‘ (Aro Ek Prithibi) ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে। এসকে মুভিজ প্রযোজিত এই ছবি মুক্তির আগেই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারের জন্য ‘দ্য ওয়াল’-এর মুখোমুখি হলেন পরিচালক অতনু ঘোষ (Atanu Ghosh)। কথোপকথনে চৈতালি দত্ত।
আপনার আগামী ছবির নাম ‘আরও এক পৃথিবী’। আপনি কোন পৃথিবীর কথা বলতে চেয়েছেন?
মূল পৃথিবীর মধ্যে বাস করেও বিভিন্ন ঘটনার সূত্র ধরে নানান আলাদা আলাদা পৃথিবীর মধ্যে আমাদের ঢুকতে হয়। এইরকমই একটা পৃথিবী বিদেশ। যা আমাদের থেকে বহুদূর। নিজের জায়গা ছেড়ে বহু দূরে যখন মানুষ যায় তখন তার কাছে তা আরেকটা পৃথিবীরই কাছে যাওয়ার সামিল। ছবির বিষয়বস্তু হল বিদেশে বিপদজনকভাবে বেঁচে থাকেন বহু মানুষ। আর এই বেঁচে থাকাটা এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে তাঁদের পরবর্তী ধাপ হল মাথার উপর থেকে ছাদ সরে যাওয়া অর্থাৎ গৃহহীন হয়ে পড়া। গৃহহীন মানুষের জীবন আমরা কমবেশি সকলেই জানি, তার রূপ আমাদের দেখা। প্রতীক্ষা, শ্রীকান্ত, আয়েশা, অরিত্র এই চারজনের জীবন কোথাও একটা সুতোয় ঝুলে আছে। যার পরের ধাপই হল তাঁরা গৃহহীন হয়ে পড়বেন। ছবির গল্প সাত দিনের। আর এই সাতদিনে ঘটনাগুলোর যে আতঙ্ক, ভয়াবহতা পাশাপাশি আবার মায়া, দরদ, সহমর্মিতা, সহানুভূতি এই সব কিছু মিলিয়ে মিশিয়ে একটা জার্নি হচ্ছে আমার এই ছবি।
এই ছবির কাহিনি লেখার সময় বাস্তব জীবনের কোনও ঘটনা থেকে কি আপনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন?
টামসেন কোর্টনি র লেখা প্রবন্ধ ‘ফোর ফিট আন্ডার’ বইটি আমি পড়েছিলাম। যেখানে ৩০ জন মানুষ, যাঁরা লন্ডনে গৃহহীন তাঁদের সাক্ষাৎকার উনি নিয়েছেন। যা আমার পড়া। এইসব মানুষের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন পেশার এবং বয়সের মানুষ। যাঁরা শেষ পর্যন্ত লন্ডনের রাস্তায় বাসবাস করেন। আমি এই বইটা পড়তে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। আজকের দিনে মানুষ কত অদ্ভুত কারণে গৃহহীন হয়ে পড়েন। আমার মনে হল এক অদ্ভুত সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা চলছি। ভবিষ্যতে এই ধরনের সঙ্কট আরও ভয়াবহ রূপ নেবে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এর ভেতরেও একটা আলো আঁধারি রয়েছে। সেই আলো-আঁধারিকে খোঁজার চেষ্টাই হচ্ছে ‘আরও এক পৃথিবী’।

আপনার অন্যান্য ছবি থেকে এই ছবির বিষয়বস্তু কতটা আলাদা?
এই ছবির বিষয়বস্তু আমার অন্যান্য ছবির বিষয় থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথমত, আমি দেশের বাইরে কোনওদিন কোনও ছবি তৈরি করিনি। এই প্রথম বিদেশে শ্যুটিং করলাম। যেহেতু ছবির প্রেক্ষাপট লন্ডন সেদিক দিয়ে আমার সুবিধা হয়েছে। কারণ আমি এর আগে এক-দু’বার লন্ডনে গেছি। রাস্তায় থাকা মানুষজনদের আমি দেখেছি। সেই অভিজ্ঞতাগুলোকেই কাজে লাগানোর একটা দিশা পেলাম। অপরাধ, হিংসা কিন্তু আর সিনেমা বা গল্পের বিষয় নয়। এগুলো আমাদের জীবনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। ফলে সেটা নিয়ে কাজ করার অতিরিক্ত আকর্ষণ বা আগ্রহ আমার তৈরি হল।

এই ছবি কি কোনও সম্পর্কের কথা বলে? নাকি অন্য কোনও সম্পর্ক উঠে এসেছে?
সম্পর্ক তো আছে, আবার নেই। এই সাত দিনের মধ্যে চারজন মানুষের জীবন একটা আরেকটার উপরে চলে আসছে। কখনও সেখানে নানা ধরনের সমীকরণ তৈরি হচ্ছে, আবার ভেঙেও যাচ্ছে। সম্পর্ক ছাড়া তো আর কোনও কাহিনি তৈরি হয় না। তবে আলাদা করে কোনও সম্পর্কের গল্প এটা নয়।
লন্ডনের প্রেক্ষাপটে মূলত সাত দিনের গল্প নিয়ে ছবির কাহিনি আবর্তিত। ছবির গল্প যদি সংক্ষেপে একটু বলেন?
চারজন মানুষ যার মধ্যে প্রতীক্ষা নামে একটি মেয়ে কেরালা থেকে ফিজিওথেরাপি একটা কোর্স করে বিয়ের তিন মাস পর লন্ডনে গেছে। শ্রীকান্ত মুন্সি ওদেশে বেশ কিছুদিন যাবত রয়েছেন। ওখানের রাস্তায় সে বেহালা বাজায়। আয়েশা নামের আর একজন পেশায় স্টুডেন্ট কাউন্সিলর। অরিত্র একজন পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। যাঁর একটা অতীত আছে। এই চারটে মানুষের চারটে গল্প সাত দিনের ব্যবধানে মিলেমিশে যাচ্ছে। এই চারজন এমন একটা অবস্থায় রয়েছেন যে কোনও মুহূর্তে ওঁদের রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হতে পারে।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ছবির অন্যতম অভিনেতা। পরিচালক হিসেবে আপনার কাছে সেটা কতটা বাড়তি চাপ ছিল?
(হেসে ফেলে) আমার মতে কাজটা আরও সহজ হয়েছে। কারণ কৌশিকের মধ্যে অভিনেতা সত্ত্বা এতটাই প্রবল যে আমার কখনওই মনে হয়নি ও একজন পরিচালক। এটাও ঠিক আমার গল্পের যে চলন, গল্পের এক একটা দৃশ্যের ভেতরে যে নানা স্তর রয়েছে সেটা বোঝানোর জন্য আমাকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়নি। কারণ আমি জানি যে ওঁর বোধের জায়গা থেকে কৌশিক খুব সহজেই সেটা বুঝতে পারবেন। ফলে আমাকে অনেক কম খাটতে হয়েছে। শ্যুটিংয়ের সময় আমরা দুজনে প্রচুর গল্প করতাম। সেই গল্পের ভেতর থেকে আমরা চরিত্রগুলোর মনের যে অবস্থান, তা বোঝার চেষ্টা করতাম।

এসকে মুভিজের সঙ্গে এটি আপনার প্রথম কাজ। ওঁদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আমার অসাধারণ অভিজ্ঞতা। প্রথমত, এই ছবিতে আমাকে যে ওঁরা সুযোগ দিয়েছেন তার জন্য প্রযোজক অশোক ধানুকা, হিমাংশু ধানুকার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কারন আমি যে ধরনের এবং বাজেটের ছবি তৈরি করি সেখানে দাঁড়িয়ে এই ছবি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। আমার এই ছবিতে শুধুমাত্র বিদেশের দৃশ্য নয়, উপরন্তু ১২ জন বিদেশি অভিনেতা ও অভিনেত্রী বড় ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ চাইনিজ, কেউ কোরিয়ান, আবার কেউ ব্রিটিশ। বিভিন্ন ভাষাভাষীর এই অভিনেতা অভিনেত্রীরা লন্ডন শহরে এসেছেন। সুতরাং একটা প্রোডাকশনের পক্ষে এত ভাষাভাষীর অভিনেতা-অভিনেত্রীকে আমাকে ছবির জন্য দেওয়া বিরাট ব্যাপার। লন্ডনের এমন সব জায়গায় শ্যুটিং হয়েছে যেখানে যাওয়া ছিল দুরুহ ব্যাপার। প্রযোজনা সংস্থা আমায় ভীষণ ভাল টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছে।
ছবিতে কারা কারা অভিনয় করেছেন?
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অনিন্দিতা বোস, সাহেব ভট্টাচার্য রয়েছেন ছবিতে। এছাড়াও, বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিনকে প্রতীক্ষার ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাবে। ছবির সুরারোপ করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র।
মেকআপের জাদুতে চঞ্চল যেন অবিকল মৃণাল সেন! প্রকাশ্যে ছবির ফার্স্ট লুক