শেষ আপডেট: 19th February 2025 15:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আশা ভোঁসলে। বয়স ৯১। সুরের জগতে তিনি কিংবদন্তি। আট দশকেরও বেশি সময় ধরে সঙ্গীত জগতে তাঁর অবাধ বিচরণ, যা খুব কম শিল্পীর জীবনেই সম্ভব হয়। সরস্বতী পুজোর দিনে নিজের দীর্ঘ সংগীত সফর নিয়ে মুখ খুললেন পদ্মবিভূষণপ্রাপ্ত আশা ভোঁসলে। মাত্র ১০ বছর বয়সে গানের যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। ৮১ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুরের দুনিয়ায় রাজত্ব করছেন।
মহাগায়িকা এই প্রথমবার অংশ নিলেন এক পডকাস্ট অনুষ্ঠানে। ‘কাপল অফ থিংস উইথ আরজে আনমোল এবং অমৃতা রাও’। অনুষ্ঠানে প্রয়াত স্বামী এবং সঙ্গীতিল্পী আর.ডি. বর্মণের সঙ্গে তাঁর প্রেম, সংসার এবং সঙ্গীতজীবন নিয়ে নির্ভেজাল এক আড্ডায় মাতেন গায়িকা।
আরডি ছিলেন একেবারে বিনয়ী এক মানুষ। সাদামাটা। খানিক উদাসীনও। আশা বলেন, ‘উনি জানতেন না, যে তিনি কত বড় সঙ্গীতস্রষ্টা! তাঁর রচিত সঙ্গীত নিয়ে তাঁর কোনও অহংকার কোনওদিনও ছিল না। অর্থের অভাবে কত মানুষের মৃত্যু হয়, কিন্তু আমি যদি তাঁকে একটি হিরে উপহারে দিতাম, উনি বলতেন, 'এটা কী? পাথর? পরিবর্তে, একটি ভালো গান রেকর্ড করো।' ওঁর কাছে গানের রেকর্ডটি, হিরের চেয়েও মূল্যবান।’ এখানেই থামেননি, আশা, বলে চলেন, ‘আমি ওঁকে পঞ্চম বলে ডাকতাম, এবং ‘বাবুয়া’ গানটি গাওয়ার পর, ও আমাকে ওই নামে ডাকতে শুরু করে। পরে অবশ্য, আমি ওটাকে ছোট করে 'বাব' করে ফেলি। কিন্তু জনসমক্ষে, ও আমার নাম ধরেই ডাকত।’
মঞ্চে আরডি বর্মনের এমন গান, যা অনুভূতিকে বারবার নাড়া দেয়, তেমন গান গাইতে গিয়ে আজ গলা ধরে আসে, কিংবদন্তি গায়িকার, বললেন, ‘স্টুডিওতে, সঙ্গীত পরিচালক নিজে উপস্থিত থাকতেন, সবকিছু সহজ হয়ে যায়। কিন্তু এখন, তিনি যখন নেই। মঞ্চে, গান গাওয়ার সময় আবেগ দখল করে। গলা বন্ধ হয়ে আসে, কণ্ঠস্বর কাঁপে। স্মৃতি ভর করে—সেই রাতগুলো, সেই চিঠিগুলো, বালিশের পাশে রাখা সেই গোলাপ। শ্রোতারাও যেন, তাঁদের নিজস্ব অতীতটাকে ফিরিয়ে আনেন, যোগাযোগ স্থাপন করে।’
৯১ বছর বয়সী আশার ভোঁসলের ঠোঁটে ফুটে ওঠে জীবনের শেষ ইচ্ছের কথাও। পডকাস্টে তিনি বলেন, ‘একজন মায়ের অন্তিম ইচ্ছে কী হতে পারে? তাঁর সন্তানরা ভালো থাকুক। একজন দিদার ইচ্ছে? তাঁর নাতি-নাতনিরা সুখী থাকুক। আমার একমাত্র ইচ্ছে এটাই, যে আমি গান গাইতে-গাইতেই বিদায় নিতে পারি। আমার শেখার আর কিছুই বাকি নেই। আমি আমার গোটা জীবন সঙ্গীতেই কাটিয়েছি। তিন বছর বয়সে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখা শুরু। প্লেব্যাক গান গাওয়ার ৮২ বছর হয়ে গিয়েছে। এখন এটাই ইচ্ছে, গান গাইতে-গাইতে দম ফুরিয়ে আসুক। এতেই আমার সর্বসুখ!’
পডকাস্টে আশা ভোঁসলে হাসিমুখে বলেন, ‘আমি গান গাওয়া ছাড়া বাঁচতে পারব না।’