শেষ আপডেট: 7th February 2025 21:05
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পরিচালকদের গিল্ডের সদস্যপদ থেকে গত বছরই সাসপেন্ড হয়েছিলেন অরিন্দম শীল। অভিযোগ উঠেছিল টলি অভিনেত্রীকে যৌন হেনস্থার। এর পরই টলিউড থেকে কার্যত উধাও ছিলেন পরিচালক অরিন্দম শীল। এই মুহূর্তে ফেডারেশন বনাম পরিচালকদের ঝামেলায় যখন সরগরম টলিপাড়া, ঠিক তখনই বোমা ফাটালেন অরিন্দম। দ্য ওয়ালের কাছে পরিচালকদের একাংশের বিরুদ্ধে এই প্রথম উগরে দিলেন এতদিনের জমে থাকা ক্ষোভ। অন্যদিকে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের প্রসঙ্গ আসতেই সুর নরম তাঁর। কার্যত বুঝিয়ে দিলেন, এই মুহূর্তে তাঁর অবস্থান কোথায়!
অরিন্দমের কথায়, "বনধ ডাকলেই তো আর বনধ হয়ে যায় না। একদিকে ডিরেক্টরস গিল্ডের তথাকথিত আধিকারিকরা নিজেই বলেন যে শুটিং বন্ধ করা উচিৎ নয় মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এদিকে তাঁরাই শুটিং বন্ধ করে দিচ্ছেন। বারবার কাজ বন্ধ করে নিজেদের ইগো চরিতার্থ করছে গুটিকয়েক পরিচালক। আর তাদের সিদ্ধান্তই পরিচালকদের সংগঠনের ৪০০ জন পরিচালকের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমি এই পরিচালকদের সংগঠনের সদস্য নই। এদের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।" এখানেই শেষ নয়। অরিন্দমের দাবি, পরিচালকদের সংগঠনের অন্দরে নিয়মকানুন কিচ্ছু নেই। তাঁর কথায়, "শুধু একটা কমিটি বানিয়ে রেখে দিয়েছে সেখানে কয়েকজন নিজেদের মতো করে গল্প বলছে এবং বাকি সদস্যদের উপর তা চাপিয়ে রেখে দিয়েছে।"
এ দিন সকাল থেকেই টলিপাড়ায় থমকে শুটিং। পরিচালকদের একটা বড় অংশ জানিয়েছেন ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের কাজ থেকে প্রত্যাহার করছেন তাঁরা। তাতেও আপত্তি জানিয়েছেন অরিন্দম। তাঁর কথায়, "পরিচালকেরা কাজে যাবে না মানে কী? কাজ করতে বারণ করা হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এই সব হিপোক্রেসি ছাড়া আর কী? আজকে ৭৫ শতাংশ কাজ হচ্ছে। মানুষ কাজ করতে চায়।"
গত বছর দীপাবলির আগে টলিপাড়ার এক অভিনেত্রী অরিন্দমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সিন বোঝানোর নামে তাঁকে চুমু খেয়েছেন অরিন্দম। এই নিয়ে জল গড়ায় বহুদূর। আজ সেই প্রসঙ্গ টেনে অরিন্দমের গলাতেও বিষাদের সুর। তিনি বলেন, "এই পরিচালক গিল্ডই আমার কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। আমার সদস্যপদ কেড়ে নিয়েছে। এবং মজার কথা কাগজে-কলমে সব জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হল অরিন্দম শীলকে আমরা সাসপেন্ড করেছি। একবারও এরা বলল না যে অরিন্দম শীলের কাজের অধিকার কেড়ে নিচ্ছি না। ভাবটা এমন যেন আমায় ব্যান করা হয়েছে। তা কিন্তু নয়। তখন কেউই পাশে দাঁড়ায়নি। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি।"
তবে শুধু পরিচালকদের গিল্ডই যে অরিন্দমকে সাসপেন্ড করে তা নয়। সে সময় ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসও বলেন, "আমি শুনেছি, বাংলার বিনোদন দুনিয়ায় যৌন হেনস্থার যে সকল অভিযোগ উঠছে তাঁর মধ্যে ষাট শতাংশই হলেন ছবির পরিচালকগণ।" ক্ষুব্ধ হন পরিচালক ও প্রযোজকরা। পৃথক-পৃথকভাবে ২৩৩ জন ডিরেক্টর মানহানির মামলা করেন স্বরূপের বিরুদ্ধে। তবে স্বরূপের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমে নেই অরিন্দমের মনে। তিনি বলেন, "স্বরূপ বিশ্বাস বলেছিলেন, আমি শুনেছি। একটা শুনেছি আর বলেছির মধ্যে ফারাক আছে। ভিতরের সত্যি অনেক গভীর। এখানে যে কত যে সাবপ্লট হয়েছে তা গুণে শেষ করা যাবে না।"
এর পরেই প্রসঙ্গ বদলে ফের পরিচালকদের উদ্দেশে তিনি যোগ করেন, "পরিচালকদের ঐক্য কথায়? একা রাজ (চক্রবর্তী) সব জায়গায় দৌড়ছে। রাহুল মুখোপাধ্যায়ের সময় যারা সব লড়েছিল তারা আজ মুখ লুকিয়ে বসে আছে কেন? আমিও গিয়েছিলাম। মুখে বলব যে বসতে চাই, ওদিকে কাজে দেখাব আমরা আন্দোলনের মাস্টার, এই সব করলে হবে না। দেবের একটা খাদান দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি চালানো যাবে না। পরিচালকদের নিজেদের মধ্যেই ঐক্য নেই।" গলায় ক্ষোভ ঝরে পড়ে তাঁর। একদিকে অরিন্দম যখন এ কথা বলছেন, তখন আজ অর্থাৎ শুক্রবার টলিপাড়ায় চলছে হাফ লকডাউন। সৃজিত মুখোপাধ্যায় শুটিং করলেও বন্ধ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবির শুটিং। জগদ্ধাত্রীর শুটিং চললেও পরিণীতার পরিচালক আসেননি কাজে। বাংলা ছবির অবস্থা সত্যিই ভাল নয়। ইন্ডাস্ট্রি আয়তন কমছে। এমতাবস্থায় এ হেন ঝামেলা যে অভিপ্রেত নয় তা প্রায় স্বীকার করে নিয়েছেন সব পক্ষই। কিন্তু সমাধান? সে উত্তর যদিও বিশ বাঁও জলে।