শেষ আপডেট: 25th April 2023 11:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বর্তমানে তাঁকে দেশের সেরা সঙ্গীতশিল্পী বলা হলে বিন্দুমাত্র অত্যুক্তি করা হবে না। যদিও তিনি নিজেকে কোনওদিনই সেরার আসনে বসাতে চাননি। তবে অনুরাগীদের কাছে অরিজিৎ সিং (Arijit Singh) মানেই আবেগের বিস্ফোরণ। তাঁর লাইভ শো দেখতে এখনও উপচে পড়েন দর্শক। কলকাতা হোক বা মুম্বই (Bollywood), তাঁর অনুষ্ঠানের টিকিট বিক্রি হয় লাখ লাখ টাকায়। সেই অরিজিৎ আজ, ২৫ এপ্রিল পা দিলেন ৩৬ বছর বয়সে। জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল রাত বারোটার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে শিল্পীকে দেশ-বিদেশ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বহু অনুরাগী।
২০০৫ সালে 'ফেম গুরুকুল' রিয়্যালিটি শো থেকেই তাঁর জাতীয় স্তরে উত্থান এবং পরিচিতি। যদিও সেখানে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। কিন্তু অরিজিতের ট্যালেন্টকে আটকে রাখার সাধ্যি কারও ছিল না। নামী সঙ্গীত পরিচালক প্রীতমের হাত ধরে বলিউডে কাজ শুরু করেন তিনি। এবং তার বছরখানেক পরই বি টাউনে শুরু হয় অরিজিৎ-রাজ। মাঝে সলমন খানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পরেও কাজে ঘাটতি পড়েনি তাঁর।
'তুম হি হো', 'কলঙ্ক', 'ফির মহব্বত'-এর মতো অজস্র গান গেয়েছেন বলিউডে। 'বোঝে না সে বোঝে না', 'মন মাঝি রে', 'কী করে তোকে বলব'র মতো একাধিক হিট গান রয়েছে বাংলাতেও। বলিউডে শাহরুখ খান, রণবীর কাপুরের পাশাপাশি টলিউডের জিৎ, দেব, সোহমের কণ্ঠে অরিজিতের এক একটা গান যেন হট কেক।
সেই অরিজিৎই রাতারাতি বদলে গেলেন করোনার পর। লকডাউনের সময় মুম্বই ছেড়ে ফিরে আসেন মুর্শিদাবাদে নিজের বাড়িতে। তখন সিনেমার গানের কাজবাজ প্রায় নেই বললেই চলে। তবুও সেখানে বসেই টুকটাক করে নিজের অন্যান্য কাজ চালাতে থাকেন। বাড়িতেই বানালেন নিজের রেকর্ডিং স্টুডিও। এরমধ্যেই হঠাৎ করে করোনা আক্রান্ত হয়ে কো-মর্বিডিটির জেরে মারা যান তাঁর মা'ও। আর তারপরই আমূল বদল আসে সঙ্গীতশিল্পীর জীবনে।
অরিজিৎ নিজের বাড়িতে যে স্টুডিও বানিয়েছিলেন, সেখানেই কাজ করা শুরু করেন। বলিউড বা টলিউড, যে ইন্ডাস্ট্রিরই গান হোক না কেন, তা এখন নিজের বাড়িতেই রেকর্ড করেন অরিজিৎ। মুম্বইয়ে এখনও তাঁর নিজস্ব বাড়ি আছে। তবে খুব প্রয়োজন ছাড়া আর সে মুখো হন না। স্কুটি নিয়ে ঘুরে বেড়ান জিয়াগঞ্জের রাস্তায়, নিজের জন্মভূমিতে। আজও সেখানে কোনও পাড়ার চায়ের দোকানে গেলে হয়তো সান্ধ্যকালীন আড্ডায় দেখা মিলতে পারে সঙ্গীতশিল্পীর।
সর্বোপরি, বদল এসেছে তাঁর সাজপোশাক এবং আচরণেও। যে অরিজিৎকে আগে লাইভ শো চলাকালীন স্টেজে রাগে ফেটে পড়তে দেখা গিয়েছে, এখন সেই শান্ত, নম্র, বিনয়ী। এর পাশাপাশি তাঁর মাথায় উঠেছে টারবান, যা পাঞ্জাবীদের হামেশাই পরতে দেখা যায়। এখন যে কোনও লাইভ অনুষ্ঠান বা রাস্তাঘাটে বেরোলে অরিজিতের মাথায় নানা রঙের টারবান থাকবেই। এমনকী কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চেও মাথা ঢাকা অবস্থায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
গায়কের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৯ মে মা'কে হারানোর পরেই অরিজিতের জীবনে বদল আসতে শুরু করে। তাঁর মা মারা যাওয়ার পর ৬ জুন জিয়াগঞ্জে, নিজের শহরেই তাঁর প্রথম অনুষ্ঠান ছিল। সেখানেই প্রথমবার টারবান বাঁধা মাথা নিয়ে স্টেজে ওঠেন তিনি। সেই শুরু! প্রথমদিন প্রিয় গায়ককে নতুন সাজে দেখে ভক্তরাও বেশ মজা পেয়েছিলেন। এরপর থেকে সমস্ত জায়গায় সেই টারবান পরতে দেখা যায় তাঁকে।
এর পিছনে প্রধান কারণ হল অরিজিতের শিকড়। গায়কের মা বাঙালি হলেও তাঁর বাবা জাতিতে পাঞ্জাবী। আর পাঞ্জাবীরা যে পাগড়ি পরেন, তা তো সকলেরই জানা। অরিজিৎও বর্তমানে সেই রীতি মেনেই মাথায় টারবান বাঁধা শুরু করেছেন বলে মত তাঁর অনুরাগীদের। তবে নিজের ধর্ম পালন করার কারণে হোক বা শুধুমাত্র ফ্যাশনই হোক, টারবান বাঁধা অরিজিৎকে দেখতে যে অনবদ্য লাগে, তা স্বীকার করবেন সকলেই।
'দাদাগিরি' গাওয়া অরিজিৎ ধোনির পা ধরে নিলেন, বাংলার গায়ককে অন্য মেজাজে দেখল মোদী স্টেডিয়াম