
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কিছু ফ্রেম বাঙালির মননে অমলিন। যেমন সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’তে দাওয়ায় পা ছড়িয়ে ইন্দির ঠাকরুনের সেই গান—‘হরি দিন তো গেল, সন্ধে হল, পার করো আমারে।’ অনীক দত্ত তাঁর ‘অপরাজিত’তে (Aparajito) ‘পথের পাঁচালি’ তৈরির গল্প বুনেছেন। আর সেখানে যিনি ইন্দির ঠাকরুনের চরিত্র করেছেন, তিনি বৃদ্ধা নন। বীরভূমের এক নাম না জানা জনপদের বৃদ্ধ। হরকুমার গুপ্ত। বয়স ৮০ ছুঁইছুঁই।
সত্যজিৎ রায় ওই চরিত্রে অভিনয় করতে এনেছিলেন চুনিবালা দেবীকে। তাঁর কোঁচকানো চামড়া, ঝুলে যাওয়া গাল, আটপৌরে বিধবা বৃদ্ধার ছবিকে নিখুঁত করে ফুটিয়ে তুলতে চুনিবালার মতো একজনকে খুঁজতে মানিকবাবু অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছেন। অনীকবাবু তাঁর ছবির জন্য লিঙ্গের বেড়াজালও ভেঙে ফেলেছেন। ছবি দেখে অনেকে বলছেন, একেই বোধহয় বলে আবিষ্কার (Aparajito)।
ববি-ব্রাত্যর বিলেত সফর বাতিল, মমতা ঘোষণা করেছিলেন শিল্প সম্মেলনে
অনীক দত্তর নতুন ছবিতেও ‘হরি দিন তো গেল, সন্ধে হল, পার করো আমারে’ গানটিতে লিপ দিয়েছেন হরকুমার। একটা সময় লোটো গান গেয়ে আসর জমাতেন এই বৃদ্ধ। বীরভূমের মহম্মদ বাজারের খড়িয়া গ্রামের হরকুমারকে গোটা জেলা চেনে ‘লোটো সম্রাট’ নামে।
কিন্তু তাঁর কাছে ছবি করার প্রস্তাব গেল কী করে?
হরকুমার জানিয়েছেন, তাঁর ছবি নাকি কে তুলে পৌঁছে দিয়েছিলেন অনীক দত্তর কাছে। তারপর তাঁর কাছে একদিন ফোন আসে। সেই যে কথার শুরু তার সমাপতন একেবারে পর্দায়। গত ন’দিন ধরে যে ছবি বাঙালির আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
সিনেমা সমালোচকদের মতে, একজন বৃদ্ধকে ইন্দির ঠাকরুনের চরিত্রে দাঁড় করানো অনীক দত্তর সাহসী পদক্ষেপ। যদিও এই ছবিতে ইন্দির ঠাকরুন নাম নয় চরিত্রটির। এখানে তিনি ননীবালা দেবী। অনেকের মতে, চুনিবালা দেবীকে ট্রিবিউট দিতেই বোধহয় অনীক দত্ত এ হেন নামকরণ করেছেন।
যিনি গাঁয়ে গাঁয়ে লোটোগান গাইতেন তিনি জীবনের সায়াহ্নে এসে বড় পর্দায়। হরকুমার বলছেন, “কখনও ভাবিনি এমনটা হবে।” আর গ্রামের সকলে এখন ঢেঁড়া পেটাচ্ছে, আমাদের খড়িয়া এখন নিশ্চিন্দিপুর। যেখানে থাকেন এখনকার ইন্দির ঠাকরুন।