স্বরূপের অভিযোগে উঠে এসেছিল বাংলা ছবির কিছু প্রযোজকদের কথাও। নাম না করেই তিনি একাধিকবার বলেছেন, ‘অনেকেই এমন রয়েছেন, যাঁরা পরিচালকদের সঙ্গে হাতে হাত রেখে, টেকনিশিয়ানদের ক্ষতি করে চলেছেন। কিন্তু তাঁরা এটা ভুলে যাচ্ছেন, ফেডারেশনের ঐক্যতাকে এত সহজে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। সব কিছু মনে রাখা হবে!’
অসহযোগিতার মুখে প্রযোজকরা?
শেষ আপডেট: 13 May 2025 17:55
শুভঙ্কর চক্রবর্তী
ফেডারেশন-পরিচালকদের দ্বৈরথ। পরিচালকদের আজীবন অসহযোগিতা। শুটিং বন্ধ। টলিপাড়ার অভ্যন্তরীণ ডামাডোল নিয়ে যদি কখনও সিনেমা অথবা ওয়েব সিরিজ তৈরি হয়, তার ছত্রে ছত্রে এমন সব কাহিনি যে প্রকট হয়ে উঠবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মে মাসের প্রথম তারিখে ‘ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র অন্তর্ভুক্ত সমস্ত গিল্ড এবং নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে মেগা মিটিংয়ে মাইক হাতে যখন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বক্তব্য রাখছেন, তখন উপরোক্ত কোনও ঘটনাবলীই বাদ দেননি তিনি।
তাঁর অভিযোগে উঠে এসেছিল বাংলা ছবির কিছু প্রযোজকদের কথাও। নাম না করেই তিনি একাধিকবার বলেছেন, ‘অনেকেই এমন রয়েছেন, যাঁরা পরিচালকদের সঙ্গে হাতে হাত রেখে, টেকনিশিয়ানদের ক্ষতি করে চলেছেন। কিন্তু তাঁরা এটা ভুলে যাচ্ছেন, ফেডারেশনের ঐক্যতাকে এত সহজে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। সব কিছু মনে রাখা হবে!’
শ্রমিক দিবসের সেই বক্তব্য যে ‘হাতেকলমে’ দাওয়াই হতে পারে, তা খানিকটা আন্দাজ করা গিয়েছিল। তবে তা মাত্র ১৩ দিনে এমন এক রূপ নেবে তা আশাপ্রদ ছিল না। কেন? আজ সকালে ‘ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র পেজ থেকে একটি পোস্ট করা হয়। যার বাংলা অনুবাদ যা দাঁড়ায় তা হল এরকম—
১৪ই মে, ২০২৫ তারিখে, দক্ষিণ ভারতের ফিল্ম এমপ্লয়িজ ফেডারেশন (FEFSI) একদিনের অসহযোগ আন্দোলনের আয়োজন করছে, যা কিছু তামিল চলচ্চিত্র প্রযোজকের অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। গর্বের বিষয়, এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমাদের ইস্টার্ন ইন্ডিয়া ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স-এর সভাপতি, শ্রী স্বরূপ বিশ্বাস প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন। এই আমন্ত্রণ শুধুমাত্র আমাদের সভাপতির প্রতি নয়, বরং সমস্ত ফেডারেশনের মধ্যে ঐক্য এবং সংহতির একটি স্পষ্ট প্রতীক, যা অল ইন্ডিয়া ফিল্ম এমপ্লয়িজ কনফেডারেশন (AIFEC)-এর অধীনে পরিচালিত হয়। এটি আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকারকে আবারও মনে করিয়ে দেয়—চলচ্চিত্র শিল্পে কর্মীদের অধিকার, মর্যাদা ও ন্যায্যতা রক্ষার জন্য একসাথে দাঁড়ানোই আমাদের লক্ষ্য।’
আগামীকাল অর্থাৎ ১৪ মে, চেন্নাইতে ‘অল ইন্ডিয়া ফিল্ম এমপ্লয়িজ কনফেডারেশন’-এর বিরাট আন্দোলন শুরু হতে চলেছে। আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথিদের তালিকায় রয়েছে ‘ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের নাম। সূত্রের খবর, বাংলার প্রযোজকদের ‘অনৈতিক কার্যকলাপ’ নিয়েও বক্তব্য রাখতে চলেছেন ফেডারেশন সভাপতি।
‘দ্য ওয়াল’-এর পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন চেন্নাইয়ের পথেই রয়েছি। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সিনে ফেডারেশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরাও রয়েছেন...’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, পরিচালকদের শুটিং বন্ধ হচ্ছে, অসহযোগিতার মুখে হচ্ছেন প্রোডাকশন ডিজাইনার, এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে এই আলোচনা কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?
তিনি বলেন, ‘অনেক কিছু বিষয়ের কারণে বাংলাতেও এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র বাংলায় নয়, দক্ষিণেও পরিস্থিতিও একই রকম। প্রযোজকদের বিরুদ্ধে আজীবন অসহযোগিতার আন্দোলন শুরু হতে পারে গোটা দেশ জুড়ে। আমি পূর্ব ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করছি, বাংলাতেও একইভাবে প্রযোজকদের একাংশ টেকনিশিয়ানদের দিনের পর দিন, বছরের পর বছর বঞ্চিত করে চলেছেন, প্রাপ্য পারিশ্রমিক থেকে সম্মান কোনওটাই তাঁরা দিচ্ছেন না। বাংলার এই সমস্যাগুলো সর্বভারতীয় আমাদের যে সংগঠন অল ইন্ডিয়া ফিল্ম এমপ্লয়িজ কনফেডারেশন (AIFEC)-তাঁদের কাছেও তুলে ধরা বিশেষ প্রয়োজন বলে আমি মনে করি’।
পরের প্রশ্ন ছিল, দক্ষিণ ভারতের ফিল্ম এমপ্লয়িজ ফেডারেশন বিভিন্ন প্রযোজকদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার পথে নেমেছে। আপনার বক্তব্য অনুযায়ী বাংলায় যে সকল প্রযোজকরা টেকনিশিয়ানদের রিরুদ্ধে ‘অনৈতিক কার্যকলাপ‘ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্য কিংবা সর্বভারতীয় স্তরে কি অসহযোগিতার পথে হাঁটতে পারে ফেডারেশন? তিনি বলেন, ‘উত্তর তো সময় দেবে। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, যা-ই ঘটুক আমাদের সর্বভারতীয় যে সংগঠন অল ইন্ডিয়া ফিল্ম এমপ্লয়িজ কনফেডারেশনের (AIFEC) অন্তর্ভূক্ত সমস্ত ফেডারেশনের সম্মিলিতভাবে সেই সিদ্ধান্তেই নেওয়া হবে। ধৈর্য ধরুন।’