শেষ আপডেট: 12th March 2025 15:26
এর আগেও একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত পরিচালক রাজর্ষি দে। এক কালে বেসরকারি দুই চ্যানেলে ‘বড়’ পোস্টে ছিলেন। সূত্রের খবর, তখনও উঠেছিল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ। চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন রাজর্ষি দে। আবারও আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ পরিচালক রাজর্ষি দের বিরুদ্ধে। খবর, প্রথম সারির এক বেসরকারি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বিধাননগর ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় দায়ের করে এফআইআর।
গোটা ঘটনাটি খোলসা করেন, রাজর্ষির ছবি ‘ও মন ভ্রমণ’-এর অন্যতম প্রযোজক প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য। ‘দ্য ওয়াল’-এর তরফ থেকে ফোনে ধরা হলে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমি এবং আমার বন্ধু অরিন্দম ঘোষ ‘ও মন ভ্রমণ’ ছবির প্রযোজক। ছবির বাজেট ঠিক হয় মোট ১ কোটি ৭৫ লক্ষ। ঠিক ছিল, ছবির একাংশ শুট হবে কলকাতায়, এবং বাকিটা হবে বিদেশে। কলকাতায় প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এত অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে যায় জলের মতো। আমরা হিসেব চাই। রাজর্ষিদা সেই হিসেব দিতে পারেননি’।
হিসেব না পেয়ে, যথারীতি প্রযোজক জুটি ছবিতে টাকা বিনিয়োগ বন্ধ করে। এও শোনা যায়, শুটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা একাধিক কলাকুশলী পারিশ্রমিকটুকুও পাননি। এখানেই শেষ নয়। প্রিয়াঙ্কার আরও অভিযোগ, ‘রাজর্ষিদা আমাদের ওই প্রথম সারির বেসরকারি চ্যানেলের প্যাডের, একটি লেখা দেখায়। যেখানে সেই চ্যানেলের লোগোও রয়েছে। তাতে ‘ও মন ভ্রমণ’ ছাড়াও আরও চারটি ছবির নামও ছিল। তাতে লেখা ছিল এই পাঁচটি ছবি আগেভাগেই ওটিটি চ্যানেলে বিক্রি হয়ে গিয়েছে।’
এমন এক কাগজ দেখার পর, স্বভাবতই খানিক অবাক হয় দুই প্রযোজক। পরে এই সমস্যার উদ্ভব হলে, তাঁরা যোগাযোগ করেন, ওটিটি কর্তৃপক্ষর (মুম্বই) সঙ্গে। লিখিত মেলে এই ‘প্যাড’ এবং তাঁর লেখা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জানতে চায় প্রিয়াঙ্কা-অরিন্দম। উত্তর আসে, এমন কোনও লিখিত অনুমোদন কর্তৃপক্ষ দেননি। এও জানিয়ে দেন গোটাটই ‘জালিয়াতি’র ঘটনা।
এরপর প্রথম সারির ওটিটি কর্তৃপক্ষ (মুম্বই) বিধাননগর ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় এফআইআর দায়ের করে। সূত্রের খবর গত দু’দিন হাজিরাও দিয়েছেন পরিচালক রাজর্ষি দে। শুধু রাজর্ষি দে নয়, সুজয় কুট্টি এবং শুক্লা বি হাজরা নামক দুই জনৈক গোটা ঘটনায় জড়িত।
আজ ইম্পার অফিসে একটি বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন, রাজর্ষি দে, প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য, অরিন্দম ঘোষ ও পিয়া সেনগুপ্ত (সভাপতি, EIMPA)। সূত্রের খবর, 'আর্থিকভাবে গোটাটা মিটিয়ে ফেলতে চান রাজর্ষি। কিন্তু প্রযোজক জুটি ওই পথে যেতে চাননি। এটা করলে, পরে কোনও নতুন প্রযোজক ঠিক এভাবেই ওর ফাঁদে পা দেবে বলে আশঙ্কা তাঁদের।'
কাট টু ২০২৪
রাজর্ষি পরিচালিত ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ মুক্তি পায় ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রযোজক ছিলেন শ্রাবণী পাল, সুশান্ত সেনগুপ্ত এবং রাজর্ষি দে নিজে। সুশান্তের স্ত্রী, শ্রাবণী এক সময়ে রাজর্ষি দের সঙ্গে চাকরি করতেন। সুশান্ত-শ্রাবণী দু’জনই আমেরিকায় থাকেন। সুশান্ত চাইছিলেন বাংলা ছবির প্রযোজনায় যুক্ত হবেন। সুশান্তকে রাজর্ষির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন শ্রাবণী। তারপরে ঘটনা বললেন, সুশান্ত নিজেই, ‘রাজর্ষি আমায় বলেন, এটা খুব বড় প্রজেক্ট, বিজেপি সরকারের সমর্থিত এই ছবি, কাশীতে শুটিং হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদীর হোমগ্রাউন্ড, এছাড়াও আমাকে অনেক নথি পাঠায় সেখানে বিজেপি সংক্রান্ত লেখালিখি ছিল। এভাবেই আমার বিশ্বাস অর্জন করে রাজর্ষি।’
অভিযোগ, সুশান্তবাবুকে, পরিচালক রাজর্ষি দে বলেন, ‘সাদা রঙের পৃথিবী’—এই ছবি যখন রিলিজ করবে, তখন রাজভবন থেকে তাঁদের ডাক পাঠানো হবে। অভিযোগ, প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ছবির জন্য রাজর্ষিকে দিয়েছেন প্রযোজক। ‘আমাকে বলা হয়, ছবিটা আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সিনেমার খরচপাতির ৮৫ শতাংশ টাকা, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ দিয়ে দেবে। কিন্তু তা হয়নি। একটি টাকাও আমি পাইনি।’ বললেন সুশান্ত। প্রিয়াঙ্কার মতো সুশান্তও যোগাযোগ করেছিলেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষর সঙ্গে, তাঁরা জানান যে এই নথিপত্র ভুয়ো। সুশান্ত বলেন, ‘আমি ওর নামে এফআইআর করিনি, কিন্তু ওর বিষয়ে যে খবর পেলাম, এবার করব।’