শেষ আপডেট: 22nd July 2024 16:38
কেচ্ছার কালি একটু একটু করে গ্রাস করছে সেনগুপ্ত পরিবারকে।
চারিদিকে কান পাতা দায়। সেলিব্রিটি দম্পতির বিয়ে ভাঙা নিয়ে অনেকদিনই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এবার হঠাৎই যেন বেআব্রু হয়ে গেছে তাঁদের সংসার জীবন। শহরের সবথেকে বড় খবর--ঘর ভাঙছে অভিনেতা যিশু সেনগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী নীলাঞ্জনা সেনগুপ্তর।
সত্যিই কী তাই?
যা রটে তা কিছু তো ঘটেই। বিয়ে ভেঙে যাওয়া কারও জীবনেই সুখের ঘটনা নয়। কিন্তু তাঁরা যখন তারকা পরিবার, তাঁদের খবর তো চাউর হতে বেশি সময় লাগে না।
২০ বছরের বিয়ের জীবন এবং তার আগের প্রেম কি এত সহজেই ভেঙে যেতে পারে কোনও তৃতীয় ব্যক্তির জন্য? এখনও যেন যিশু-নীলাঞ্জনার বন্ধুরা এই ভাঙনের খবর কিছুতেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না।
কিন্তু নীলাঞ্জনার অসুস্থতার খবর নাকি শুধুমাত্র শরীরে জলশূন্যতা নয়। সম্ভবত যিশুর সঙ্গে দূরত্বতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নীলাঞ্জনা। সমাজমাধ্যমে নিজের প্রোফাইল থেকে সেনগুপ্ত পদবি ইতিমধ্যেই মুছে ফেলেছেন যিশু-পত্নী। টলিপাড়ার অন্দরের খবর, দূরত্ব বেড়েছে তাঁদের মধ্যে। এবং, তা নাকি অনেকটাই। জোর গুঞ্জন, তাঁদের সম্পর্কে 'দূরত্ব' বেড়ে যাওয়ার পিছনে নাকি হাত রয়েছে এক তৃতীয় ব্যক্তির।
কিন্তু এমন সুখের সংসার ভাঙল কী করে? তবে কি পরকীয়ার অভিযোগ উঠছে যিশুর বিরুদ্ধে? অথচ যিশু সেনগুপ্তর উত্থানে তাঁর স্ত্রী নীলাঞ্জনার অবদান সবথেকে বেশি। কীভাবে মন বিনিময় হয়েছিল দু জনের?
যিশু প্রথম টার্নিং পয়েন্ট: 'মহাপ্রভু' ধারাবহিক
অভিনেতা উজ্জ্বল সেনগুপ্তর ছেলে যিশু দেবাংশু সেনগুপ্তর 'মহাপ্রভু' সিরিয়াল দিয়ে ডেবিউ করেছিলেন। যে সিরিয়াল দিয়ে শ্রীচৈতন্য রূপে যিশু কার্যত সকলের প্রাণের মানুষ হয়ে ওঠেন। কিন্তু দেবত্ব প্রাপ্তি যতটা কঠিন, সেই খোলস ছেড়ে বেরনোও ততোধিক কঠিন। মহাপ্রভু সিরিয়ালের পর বড় পর্দায় নায়ক রূপে সাফল্য পেতে যিশুকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। বিখ্যাত পরিচালক দীনেন গুপ্তর শেষ ছবি 'ঋণমুক্তি' র নায়ক হয়ে বাংলা ছবিতে অভিষেক ঘটে যিশু সেনগুপ্তর। তারকাখচিত পারিবারিক গল্পের ছবি। কিন্তু তাতেও ফ্লপ করে। সেই সময় যিশুকে নায়কের চরিত্রে লগ্নি করার কথা আর কোনও প্রযোজকই ভাবেননি। সিরিয়াল বা টেলিফিল্মে যিশু নায়ক বা নায়কের সহকারীর ভূমিকায় কাজ করলেও বড় পর্দাতে তাঁর রাস্তা সহজ ছিল না। মিঠুন চক্রবর্তীর শেষ যুগ তখন। এদিকে প্রসেনজিৎ মধ্য গগনে। মিঠুন আর প্রসেনজিতের সব ছবিতেই যিশু কাজের সুযোগ পেতেন সহ অভিনেতা হিসেবে।
নীলাঞ্জনার বাংলা ছবিতে ডেবিউ হয় সুব্রত সেনের 'স্বপ্নের ফেরিওয়ালা' ছবি দিয়ে। সুদর্শন যিশু নিজে লম্বা বলে ওঁর পছন্দ ছিল লম্বা মেয়ে। আকর্ষণের আরো একটি কারণ ছিল নীলাঞ্জনার মা। তিনি মহানায়ক উত্তমকুমারের নায়িকা, 'নায়িকা সংবাদ' এর অঞ্জনা ভৌমিক। 'স্বপ্নের ফেরিওয়ালা' চলেনি। কিন্তু যিশু-নীলাঞ্জনার প্রেমের গাড়ি চলতে শুরু করল।
বেশ কয়েকটি টেলিফিল্মে জুটি বেঁধে কাজ করেন যিশু-নীলাঞ্জনা। কিন্তু টলিউডে অঞ্জনা ভৌমিক কন্যার উত্থান একেবারেই জমেনি। সেভাবে নায়িকা হবার ফর্মুলায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেননি নীলাঞ্জনা। তাঁর অভিনীত ছবি 'তিন এক্কে তিন' সাময়িক হিট করলেও নীলাঞ্জনা কোনও স্টারডম পাননি। এরপর মুম্বইতে ধারাবাহিকের কাজ নিয়ে চলে যান নীলাঞ্জনা।
২০০৪ সালে বিয়ে হয়ে গেল যিশু-নীলাঞ্জনার। যিশু তখন পর্দায় একেবারেই পার্শ্ব অভিনেতা। ঠিক অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের কেরিয়ার গ্রাফের নীল নকশাই যেন আঁকা হচ্ছিল যিশুর জন্য। কখনও তাঁকে বিগ বাজেটের ছবির নায়ক করা হয়নি। বাদবাকি কম বাজেটের ছবিতে যিশু কাজ করলেও সেসব ছবি হাওয়ায় মিলিয়ে যেত। নায়কের ভাই বা ছেলের ভূমিকাতেই যিশুকে বারবার কাস্ট করা হত।
'তারকা' যিশুর জীবনের দুই তারা
অভিষেকের মতো পরিণতি যিশুর হয়নি। তার প্রথম কারণ অবশ্যই তাঁর স্ত্রী নীলাঞ্জনা। দ্বিতীয় জন--ঋতুপর্ণ ঘোষ।
ঋতুপর্ণের একাধিক ছবিতে নায়ক রূপে কাজ করে প্রায় নতুন প্রতিষ্ঠা পান যিশু। আদতে তিনি যে অভিনেতা হিসেবে কতটা শক্তিশালী, ক্রমশ তা বুঝিয়ে দিতে থাকেন। 'নৌকাডুবি', 'সব চরিত্র কাল্পনিক', 'আবহমান', 'দ্য লাস্ট লিয়ার' থেকে 'চিত্রাঙ্গদা', একের পর এক ছবি করতে থাকেন যিশু। ঘরে-বাইরে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। আসে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
কিন্তু শুধুমাত্র কয়েকটি ভিন্নধারার আর্ট ফিল্ম করলেই সংসার চলে না। যিশুকে প্রযোজক বানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী নীলাঞ্জনা। অভিনেত্রী হিসেবে নীলাঞ্জনা আরো কাজ কমিয়ে দেন যিশুকে গড়ে তুলতে। স্ত্রীর বুদ্ধিতে স্ত্রী-ধন আসে কথাটা যিশুর জীবনে ভীষণ সত্যি। যিশুকে আর্থিক দিক থেকে বৈষয়িক করেন নীলাঞ্জনা। দুজনে একসঙ্গে তৈরি করেন প্রযোজনা সংস্থা।
অভিনয় আর সঞ্চালনার পাশাপাশি যৌথ প্রযোজনা
টেলিভিশনে যিশু-নীলাঞ্জনার প্রোডাকশনের অবদান অনেক। এটাও ঘটনা, তাঁদের বেশিরভাগ কাজ কিন্তু হিট। তাঁদের প্রথম সিরিয়াল 'অপরাজিত' বিশাল হিট করে। যাতে মূল চরিত্রে অভিনয়ও করেন যিশু।
দ্বিতীয় সিরিয়ালের গল্প মিষ্টির ময়রাকে নিয়ে। যার সাহচর্যে তাঁর স্ত্রী আইপিএস অফিসার হয়। এমন সিরিয়ালের নাম কী দেওয়া যায়? নাম ভেবে না পেয়ে যিশু-নীলাঞ্জনা ঋতুপর্ণ ঘোষের দ্বারস্থ হন। ঋতুপর্ণ এক নিমেষেই বলেন নাম রাখতে 'তোমায় আমায় মিলে'। যে সিরিয়াল আরো এক হিট। সেই সিরিয়ালের সিকোয়েল সিরিয়ালও করা হল 'হরগৌরী পাইস হোটেল'। 'সঙ্গে সৃজিত' টক-শোও ছিল বেশ অভিনব কাজ। তাঁদের প্রযোজনা সংস্থা এখন যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত।
সঙ্গীত প্রতিযোগিতার সঞ্চালনা করে বিশাল খ্যাতি পান যিশু। কিন্তু একটা সময়ের পর সেখান থেকেও তাঁকে সরে যেতে হয়। নিজের প্রযোজনা সংস্থা ছিল বলেই যিশু সামলে ওঠেন।
আর্থিক দিক থেকে সব রকম নিরাপত্তা যিশু পেয়েছিলেন নীলাঞ্জনার হাত ধরে। একা হাতে দুই কন্যাকে মানুষ করা, অসুস্থ মায়ের নিরন্তর সেবা থেকে যিশুকে আজ সর্বভারতীয় অভিনেতা হতে প্রেরণা দেওয়া সবটার কৃতিত্ব নীলাঞ্জনার। সেই নীলাঞ্জনা কেন ঘর ছাড়লেন যিশুর? কেন মুছে ফেললেন পদবি?
টলিপাড়ার অন্দরে কানাঘুষো, তাঁর জনৈক দক্ষিণী সহকর্মী বা আপ্ত সহায়িকার সঙ্গে নাম জড়াচ্ছে যিশুর। নায়ক যদিও নীরব। সরকারিভাবে তিনি বা নীলাঞ্জনা কেউই মুখ খোলেননি।
'তুমি কোন্ ভাঙনের পথে এলে সুপ্তরাতে'
যিশু কী ভুলে যাবেন নীলাঞ্জনার ঋণ? এত সহজেই কি ঋণমুক্তি ঘটবে যিশুর?
লেক গার্ডেসের বাড়িতে বড় করে গণেশ পুজো থেকে বালিগঞ্জের জনপ্রিয় ক্লাবের দুর্গাপুজোর আয়োজন, সবটা এতদিন করেছেন দু'জনে মিলেই। এখন তাঁদের সম্পর্কের সমীকরণ ঠিক কী, তা সময়ই বলবে।
বাইরে অনেক কথাই রটছে রটবে। নীলাঞ্জনার বুদ্ধিমত্তা যিশুকে এতটা পথ এগোতে ভরসা জুগিয়েছে। আশা করা যায় ঝড় ঝাপ্টা সামলে আবার দ্বৈত জীবন মধুময় হয়ে উঠবে। তাঁদের জুটি চিরন্তন হয়ে উঠুক শুধু এ টুকুই কামনা ।