'ম্যাডাম সেনগুপ্ত' ছবির পোস্টারে আছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, যিনি এ ছবির নামভূমিকায়। টলিউডের একমাত্র হিরোইন তিনি, যাঁর নামভূমিকায় আজও ছবি হয়।
ম্যাডাম সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: 6 July 2025 06:58
ছবি: ম্যাডাম সেনগুপ্ত
নামভূমিকায়: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
চরিত্র চিত্রণে: অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, রাহুল বোস, কৌশিক সেন, সুব্রত দত্ত
পরিচালনা : সায়ন্তন ঘোষাল
প্রযোজনা: নন্দী মুভিজ
দ্য ওয়াল রেটিং ৭/১০
'ম্যাডাম সেনগুপ্ত' ছবির পোস্টারে আছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, যিনি এ ছবির নামভূমিকায়। টলিউডের একমাত্র হিরোইন তিনি, যাঁর নামভূমিকায় আজও ছবি হয়। আর পোস্টারে আছে রক্ত এবং সুকুমার রায়ের 'আবোল তাবোল' এর নানা মজার চরিত্ররা। রক্ত আর 'আবোল তাবোল' একেবারেই ভিন্ন কম্বিনেশন। কিন্তু সেটাকেই খুনের সূত্র হিসেবে মিলিয়েছেন পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল। কেমন হল তাঁর নতুন রহস্য রোমাঞ্চ ছবি 'ম্যাডাম সেনগুপ্ত'?
ছবির গল্পে ম্যাডাম সেনগুপ্তর সম্পূর্ণ নাম অনুরেখা সেনগুপ্ত। তিনি বিখ্যাত কার্টুনিস্ট। যার স্বামী হলেন নাট্যকার সাত্যকি সেন (কৌশিক সেন)। কিন্তু দুই শিল্পী একসঙ্গে থাকলে ইগোর সংঘাত লাগবেই, ফলত দু'জনে বহুদিন আলাদা। অনুরেখা একা হাতে মানুষ করেছে মেয়ে অনন্যাকে। অনন্যা বড় হবার পর বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্বর সঙ্গে দেখা করতে চায়। কিন্তু বাবার সঙ্গে কলকাতায় দেখা করতে এসে খুন হয় অনন্যা। তখন ম্যাডাম সেনগুপ্ত মেয়ের খুনি কে বার করতে কলকাতায় আসে। আর তাকে সাহায্য করে সাংবাদিক বন্ধু রঞ্জন (রাহুল বোস)। রহস্যের কিনারা করতে পরতে পরতে খুলতে থাকে আরও চরিত্ররা রঞ্জনের সাহিত্যিক স্ত্রী অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, ছেলে রৌনক দে বিশ্বাস। আবার এদিকে পুলিশ অফিসার সুব্রত দত্ত, কোটিপতি সুদীপ মুখোপাধ্যায় পরপর এরা সব খুন হতে থাকে। সব খুনের পর খুনি রেখে যায় 'আবোল তাবোল' এর এক একটি ছড়া। শেষ অবধি খুনি কে সেটা দর্শকও ভাবতে থাকে। প্রতিটি দর্শককে গোয়েন্দা করে দেওয়া, এই ছবির তুরুপের তাস।
সায়ন্তন ঘোষালের 'রবীন্দ্র কাব্য রহস্য' ছবিটি এক মাসও হয়নি মুক্তি পেয়েছে। সেই ছবি আর এই ছবিতে খুব একটা তফাত নেই। শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর সুকুমার রায়ের তফাত। সেখানেও একই ভাবে পরপর খুন হয় আর খুনি একটা করে রবীন্দ্রনাথের কবিতা লিখে রেখে যায়। আবার এখানেও খুনি সুকুমার রায়ের কবিতা লিখে রেখে যাচ্ছে। ওখানে ছিল লন্ডন আর এখানে কলকাতা। একই ধরণের গল্পে একই পরিচালকের পরপর দুটো ছবি বানানোর অর্থ কী? যে প্রহসন আগে ঘটেনি টলিউডে। এত অল্প সময়ের তফাতে একই ধরণের গল্প যারা প্রথমটা দেখেছেন তাদের কাছে দ্বিতীয় এটি বেশ ক্লান্তিকর। তবে 'ম্যাডাম সেনগুপ্ত' এই প্রথম হাসির 'আবোল তাবোল' কে সিরিয়াল খুনের কিনারায় কাজে লাগাল।
অভিনয়ে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এই ছবির প্রাণভ্রমরা। মেয়ের খুনের কিনারায় এক মায়ের লড়াই, তিনি দুর্দান্ত ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন। সারা ছবি জুড়ে ঋতুপর্ণাই ছবিটিকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। অন্যদিকে অনন্যা সেনগুপ্ত পার্শ্বচরিত্র হলেও তিনি ছবির শেষদিকে নিজের জাত বুঝিয়ে দিয়েছেন। ঋতুপর্ণা আর অনন্যার একসঙ্গে স্ক্রিনপ্রেজেন্স অসাধারণ। তবে রাহুল বোসের অভিনয় সে ভাবে দাগ কাটে না। তাঁর অভিনয়ে সাংবাদিকের ভূমিকাই ফুটে ওঠে না। অনন্যা যে খুন হয়, সেই ঋতুপর্ণার মেয়ের ভূমিকায় অভিনেত্রী বেশ দুর্বল। তবে এই ছবিতে ছোট রোলেও দাপট দেখিয়েছেন খরাজ মুখোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য সুব্রত দত্ত। পুলিশ অফিসারের চরিত্রে সুব্রত দত্তের ছোট্ট চরিত্রেও নানা শেড ফুটে ওঠে। আর সাত্যকি সেন এই রহস্য চরিত্রটিতে কৌশিক সেন দুরন্ত। কৌশিক-ঋতুপর্ণার বিয়ের পর ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্যগুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগে। দুই লুকে ঋতুপর্ণাকে লেগেছেও সুন্দর। আবার শাড়িতে অনন্যাকে দারুণ সাজিয়েছেন সাবর্ণী দাস। রৌনক দে ভৌমিক বড় পর্দায় সপ্রতিভ। সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের সুইমিং পুলের ভিতর খুন হবার দৃশ্যটি বেশ রোমাঞ্চকর। সবথেকে নজর কাড়লেন অভিনেতা মৃণাল মুখোপাধ্যায়ের পুত্র দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায়। দেবপ্রিয়কে আরও ব্যবহার করুক টলিউড।
ছবিতে অনুপম রায়ের একটি গান যথাযথ। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর আবহ সঙ্গীত ছবিটিকে আরও টানটান রাখে। কলেজ রাজনীতি, খুন থেকে সাহিত্য সব মিলে মিশে এই থ্রিলার গল্পের মন্দ লাগবে না। তবে সায়ন্তন ঘোষাল একটু সময় নিয়ে কম ছবি বানালে ছবির মান আরও উৎকৃষ্ট হবে।