Date : 14th Jul, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
স্বামী-স্ত্রীর গোপনে রেকর্ড করা ফোনালাপ, ডিভোর্স মামলায় গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ: সুপ্রিম কোর্টঝাড়গ্রামের জঙ্গল ফিরিয়ে আনছে প্রাণ, বাড়ছে হাতি-নেকড়ে-হরিণ, বনবিভাগে স্বস্তির হাওয়াEng vs Ind: চতুর্থ ইনিংসে ঋষভ পন্থের গড় ৫২, জাদেজা-সুন্দরদের পরিসংখ্যান কিন্তু ভীতিকরদু’বার বদলানো হয়েছিল ফুয়েল কন্ট্রোল ইউনিট, তাও ড্রিমলাইনার ভেঙে পড়ল কেন, উঠছে প্রশ্ন'ওরাই দেশটা শেষ করেছে!' কানাডায় আবর্জনা ফেলার ভিডিও ভাইরাল হতেই সমালোচনার মুখে ভারতীয়রানিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড রদ একপ্রকার অসম্ভব, সুপ্রিম কোর্টে জানাল কেন্দ্র১৮ জুলাই মোদীর সভায় আমন্ত্রিত দিলীপ, শমীকের হাত ধরে মঞ্চে ফিরছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিসোনার গয়না বা রুপোর বাসন বন্ধক রেখে কী আর ঋণ নেওয়া যাবে না? নতুন ব্যাখ্যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরসৌদি যাওয়ার টোপ! ১২ বছরের পাত্রী, ২০ বছরের বর, গোপন বিয়ের আসরে পুলিশের হানা‘তুমিই আমায় পূর্ণ করেছ!’ আলকারাজ-সিনারের দ্বৈরথের আড়ালে রয়েছে তীব্র প্যাশন, অটুট শ্রদ্ধা
Jaya Ahsan

নীল নবঘনে জাতিকা জয়া, ‘আবর্ত’ থেকে ‘অর্ধাঙ্গিনী ২’, পদ্মাপারের 'দেবী' কলকাতায় প্রথমা

সোশ্যাল মিডিয়ায় জয়ার ছবিতে উঠেছে বিতর্কের ঝড়, উত্তেজক যৌন কমেন্টের প্লাবন। তবু সমালোচনার পাহাড় সরিয়ে জয়া পেয়েছেন অকুণ্ঠ ভালবাসা। পর্দায় তিনি এলে চোখ ফেরাবে কার সাধ্যি! 

নীল নবঘনে জাতিকা জয়া, ‘আবর্ত’ থেকে ‘অর্ধাঙ্গিনী ২’, পদ্মাপারের 'দেবী' কলকাতায় প্রথমা

গ্রাফিক্স - দিব্যেন্দু দাস

শেষ আপডেট: 1 July 2025 10:00

শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়


‘এমন দিনে তারে বলা যায়/ এমন ঘনঘোর বরিষায়/ এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরঝরে/ তপনহীন ঘন তমসায়।’


বাদলমুখর বর্ষায় জন্ম এই মোহময়ীর। বাংলাদেশে সুন্দরী নায়িকাদের অভাব কোনওদিনই ছিল না। ববিতা, কবরী, শাবানা, রোজিনা, অঞ্জু, শবনূর থেকে মৌসুমী, পূর্ণিমা হয়ে আজকের অপু, মিথিলা, বিদ্যা, পরী মণি। পদ্মাপারে যতই ঝিকিমিকি করুক এমন সব তারার আলো, চাঁদ কিন্তু একটাই হয়। তিনি জয়া আহসান। তিনি আজ শুধু বাংলাদেশের নায়িকা নন, কলকাতার রীতিমতো প্রথম সারির নায়িকাও। এক দশক জয়া সফলতার সঙ্গে কাটিয়ে ফেললেন টালিগঞ্জ পাড়ায়। দশ বছর পার করে একইরকম জনপ্রিয়তার সঙ্গে নায়িকার আসনে টিকে থাকার নজির গড়লেন জয়া, যা ঢালিউডের আর কোনও নায়িকা টলিউডে এসে গড়তে পারেননি।

May be an image of 1 person and flower

বাংলাদেশের ববিতা কলকাতায় এসে করেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের 'অশনি সংকেত' ছবি। ববিতার জীবনে কলকাতার ছবিতে একমাত্র আইকনিক কাজ। এরপর আর কলকাতার দর্শক ববিতাকে পায়নি।

কবরী করেছিলেন এপারের একমাত্র ছবি, ঋত্বিক ঘটকের 'তিতাস একটি নদীর নাম'।

এরপর যে নায়িকা সর্বাধিক ছবি করেছেন কলকাতায়, তিনি 'বেদের মেয়ে জোসনা' অঞ্জু ঘোষ। বাংলাদেশের এই ছবি কলকাতায় আবার হয়েছিল। এই ছবি দিয়েই কলকাতায় পাকাপাকি রয়ে যান অঞ্জু। কিন্তু অঞ্জু জোসনার গ্রাম্য দর্শক চাহিদা ছেড়ে কোনওদিনই বেরতে পারেননি। 'স্ত্রীর মর্যাদা' থেকে 'কালী আমার মা'-- পশ্চিমবঙ্গে অঞ্জুর মেগাহিট ছবি হলেও এসব ছবি কখনও এলিট ক্লাসে ওঠেনি। নয়ের দশকের হিট মেশিন ছিলেন অঞ্জু। কিন্তু নিজেকে তিনি ভাঙেননি। তাই অঞ্জু এপার-ওপার কোনও পারেই আর লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হতে পারেননি।

বাংলাদেশের চম্পা কলকাতার আর্ট ফিল্মে গৌতম ঘোষ থেকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ছবিতে কাজ করলেও মূলধারার নায়িকা হতে পারেননি। এদিকে রোজিনা কলকাতার কমার্শিয়াল ছবি করলেও দু'একটা হিটের পরে ম্লান হয়ে গিয়েছেন এ শহরে।

May be an image of 1 person

কিন্তু ব্যতিক্রম জয়া আহসান। বাংলাদেশের অভিনেত্রীরা কলকাতায় কাজ করতে এলে তাঁদের ওপার বাংলার চড়া দাগের মেক আপ বা অভিনয়ে চড়া সুর রয়েই যেত। থেকে যেত ওপার বাংলার কথার টানও, যা তাঁদের এ শহরের সঙ্গে আত্মিক যোগ তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু জয়ার ক্ষেত্রে তা নয়। বাংলাদেশের মেয়ে হলেও তিনি যেন কলকাতারও কন্যা। দু'পারেই অন্যতমা। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে জয়া নিজেকে বারবার ভেঙেছেন ও প্রমাণ করেছেন।

জয়া বাংলাদেশের টেলিভিশন ও মূলধারার ছবি করলেও, সেখানে জনপ্রিয়তা পান বেশিরভাগ মননশীল ছবিতেই। বাংলাদেশে জয়ার উল্লেখযোগ্য 'গেরিলা', 'চোরাবালি', 'জিরো ডিগ্রি', 'দেবী'-র মতো ছবিতে। বাংলাদেশের সরকারের থেকে পাঁচ বার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন জয়া।

May be an image of 1 person

জয়ার কলকাতা সফর শুরু ২০১৩ সালে অরিন্দম শীলের ছবি, 'আবর্ত' দিয়ে। ২০২৩ সালে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের 'অর্ধাঙ্গিনী' দিয়ে জয়া টলিউডে তাঁর অভিনয় জীবনের দশ বছর পূর্ণ করলেন। এবার আসতে চলেছে কৌশিক-জয়ার 'অর্ধাঙ্গিনী ২'। যে ছবির শ্যুটিংয়েই এখন ব্যস্ত জয়া।  অন্যদিকে মুক্তি আসন্ন জয়ার 'ডিয়ার মা' ছবিটি। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর পরিচালনায় এই ছবির প্রচারের কাজে জয়া এখন কলকাতায়।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অতনু ঘোষ, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, বিরসা দাশগুপ্ত, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের মতো কলকাতার প্রথম সারির পরিচালকদের ছবির নায়িকা হয়েছেন জয়া।

জয়ার উল্লেখযোগ্য যেসব চরিত্র দর্শক মনে দাগ কেটে গিয়েছে তার মধ্যে প্রথমেই বলতে হয়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় 'বিজয়া' ও 'বিসর্জন' ছবির কথা। দু'টি ছবি আলাদা হলেও, সিকোয়েলের যোগসূত্র রয়েছে। আবির চ্যাটার্জীর বিপরীতে জয়াকে দু'টি ছবিতে বিধবা ও সধবা দুই রূপেই দেখতে পাই আমরা। বাংলাদেশের জয়াকে পর্দায় দেখতে সিনেমাহল হাউসফুল করেছিল দর্শক।

Jaya Ahsan on her upcoming film Ardhangini | Sangbad Pratidin


জয়ার চরিত্রগুলি বেশিরভাগই বাংলাদেশের মেয়ের চরিত্র। ঠিক যেমন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'এক যে ছিল রাজা' ছবিতে মৃন্ময়ী দেবীর চরিত্রে জয়া। সন্ন্যাসী রাজার বোনের চরিত্রে জয়াই এই ছবির মূল কাণ্ডারী। দুর্দান্ত অভিনয়ে জয়া এই ছবির রাশ যেন নিজ হাতে টেনে রেখেছিলেন। সবথেকে বড় কথা মৃন্ময়ী দেবীর বিভিন্ন বয়সের লুকে ও চরিত্রে ধরা দিয়েছেন জয়ার চেহারায়, যা এক বড় অভিনেত্রী বলেই জয়া সুচারু ভাবে করতে পেরেছেন। ঠিক এক রকম বিভিন্ন বয়সের লুকে বাংলাদেশের 'খাঁচা' ছবিতেও অনবদ্য অভিনয় করেন জয়া।

ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর 'ভালবাসার শহর' ছবিতেও ঋত্বিক চক্রবর্তীর বিপরীতে জয়ার অভিনয় মন ভরায়। সৃজিতের 'রাজকাহিনি'তেও জয়ার সাহসী চরিত্র বাদ দেওয়া যায় না। অতনু ঘোষের 'রবিবার'-এ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে আলোচনায় উঠে এলেন জয়া।

আবার অতনুর 'বিনি সুতোয়' ছবিতেও এক কঠিন চরিত্রে জয়ার অনবদ্য অভিনয় মন টানে। শিবপ্রসাদ-নন্দিতার 'কণ্ঠ' ছবিতে এক ডাক্তার হয়ে তিনি রোগীর জীবনের প্রেরণাদাত্রী হয়ে উঠলেন। ঐতিহাসিক জীবন নির্ভর চরিত্রেও অভিনয় করেছেন জয়া। সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়ের 'ঝরা পালক' ছবিতে কবি জীবনানন্দ দাশের স্ত্রী লাবণ্য প্রভা দাসের চরিত্রে জয়া আহসান যেন নজির গড়েছেন।

May be an image of 1 person and smiling

দশ বছর পার করে জয়া আবার কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিতে দাগ কাটলেন। 'অর্ধাঙ্গিনী'র মেঘনা। জয়া যখনই কলকাতার ছবিতে এসেছেন, বাংলাদেশের ছোঁয়া সেই চরিত্রে বেশিরভাগ ছবিতেই থেকেছে। যেমন অর্ধাঙ্গিনী'র মেঘনা মুস্তাফি, যার নাম বাংলাদেশের নদীর নামে। চরিত্রটি বাংলাদেশের এক গায়িকার। তাঁর প্রেমে পড়েন ডিভোর্সী সুমন চ্যাটার্জী। সুমন আগেই বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন স্ত্রী শুভ্রার সঙ্গে। সুমন হিন্দু হয়েও মুসলিম মেঘনাকে বিয়ে করেন সমাজের তোয়াক্কা না করে।

কিন্তু এত সহজেই কী জীবনের সব দেনা-পাওনা মিটে যায়? কলকাতায় এসে সুমনের হঠাৎ সেরিব্রাল অ্যাটাক আর মেঘনা একা মাঝসমুদ্রে দাঁড়িয়ে। এ শহরের কিছুই চেনেন না বাংলাদেশি বধূ। জানেন না স্বামীর ফিক্সড ডিপোজিট থেকে জীবনবিমার হিসেব নিকেষ। এই সময় দিদির মতো মেঘনার পাশে এসে দাঁড়ান তাঁর স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রী শুভ্রা। শুভ্রাই যেন মেঘনার পরবর্তী জীবনের অভয়প্রদীপ। পরিস্থিতি যেন দুই সতীনকে বন্ধু করে তোলে। দু'জনেই যেন পুরুষতান্ত্রিক নির্মমতার শিকার।
অনেকদিন পর বাংলা ছবিতে দু'জন নারীর অভিনয় ছবিকে টেনে নিয়ে চলেছে। দর্শক দুই নারীর অভিনয় দেখে অভিভূত। চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় ও জয়া আহসান টক্কর দিয়ে অভিনয় করেছেন। প্রসঙ্গত, কৌশিকের বিসর্জন ছবিতে জয়ার লুক ঠিক করেছিলেন কৌশিকের স্ত্রী চূর্ণীই।

No photo description available.

এভাবেই জয়া দশ বছর টলিউডে জয়া পার করলেন হিটের পর হিট দিয়ে। এক সফল যাত্রার বিজয়িনী যেন জয়া। তাঁর কাছে যেন ম্লান হয়ে পড়েছেন কলকাতার মূলস্রোতের বহু নায়িকা। পোশাক থেকে লুক-- সবেতেই জয়া অনন্যা। বাংলাদেশের রক্ষণশীলতাকে ভেঙে জয়া যেমন ধরা দেন সাহসী লুকে, সাহসী চরিত্রে, তেমনি দুর্গাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলিতেও তিনি মুঠো ভরে নেন শিউলি ফুলে। আবার তিনিই এদেশের ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

তবে এত সাফল্যের মাঝেও ধর্মান্ধ পুরুষতান্ত্রিক মহলে বারবার সমালোচিত হয়েছেন জয়া। নিন্দিত হয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। সোশ্যাল মিডিয়ায় জয়ার ছবিতে উঠেছে বিতর্কের ঝড়, উত্তেজক যৌন কমেন্টের প্লাবন। তবু সমালোচনার পাহাড় সরিয়ে জয়া পেয়েছেন অকুণ্ঠ ভালবাসা। পর্দায় তিনি এলে চোখ ফেরাবে কার সাধ্যি! জয়ার গ্ল্যামারের ছটা আর মননশীল ছবির ঘরানা-- দুইয়ে মিলে জয়া বক্সঅফিসে হিট। সুন্দরী, রূপসী, শ্রেষ্ঠ নায়িকা, রহস্যময়ী-- সব ছাপিয়ে প্রতিমা মুখশ্রী জয়া যেন এ যুগের বাংলা ছবির 'দেবী'।

এক দশক পার করে পার করে চির বসন্তের আলিঙ্গনে জয়া আহসানের টলিউড সফর সুদূরপ্রসারী হোক। বৃষ্টিস্নাত জন্মদিনে এই শুভেচ্ছাই রইল। জয়যাত্রায় সফল হন জয়া।


ভিডিও স্টোরি