Date : 24th May, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে থাকছেন না মমতা, পাক সন্ত্রাস, অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গ পারতে পারেন মোদীরাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের আসল চেহারা তুলে ধরল ভারত: জঙ্গি আর সাধারণ মানুষের তফাৎ বোঝে নাভুট্টাখেতে সদ্যোজাত শিশুকন্যা! 'আর একটু হলেই শেয়াল-কুকুরে ছিঁড়ে খেত'ইউনুস সরবেন, নাকি ওয়াকারের অপমান হজম করে থেকে যাবেন, স্পষ্ট হবে শনিবারমক্কেলকে 'কুপরামর্শ'! এজলাস থেকেই আইনজীবীকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানোর নির্দেশ বিচারপতিরদিল্লি, কেরলে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনা, সতর্কতা জারি করল স্বাস্থ্য দফতরঅগ্নিবীরকে বাঁচাতে গিয়ে নদীতে ঝাঁপ, সিকিমে মৃত্যু ৬ মাস আগে সেনায় যোগ দেওয়া অফিসারেরHarvard University: বিদেশি পড়ুয়া ভর্তিতে বাধা নয়! ট্রাম্প সরকারের নির্দেশে স্থগিতাদেশ 'সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রিক হয়ে গেছে,' অবসরের দিন মন্তব্য বিচারপতি এএস ওকার মমতার পাল্টা শুভেন্দু! মুর্শিদাবাদ নিয়ে বিশেষ অধিবেশনের দাবি বিরোধী দলনেতার
Independence Day of Bangladesh

পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ইসলামাবাদের গদি একাই উল্টে দিয়েছিলেন মুজিব

পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন, এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়, নির্বাচনের ফল ঘিরে অসন্তোষ, তাকে দমাতে সেনাবাহিনীর ভয়াবহ সন্ত্রাস... যা থেকে ক্রমে জন্ম নেয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে সেই রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের সূচনাপর্ব ফিরে দেখা।

পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ইসলামাবাদের গদি একাই উল্টে দিয়েছিলেন মুজিব

প্রতি বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশে পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস । ছবি - শেখ মুজিবুর রহমান (বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি) - ৭ মার্চের ভাষণ প্রাক্কালে, । দ্য ওয়াল ফাইল ।

শেষ আপডেট: 26 March 2024 19:22

সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায় 

ভোটের মরশুম এসে গিয়েছে। ভোট এলেই মোটামুটি বিভিন্ন নির্বাচন ও তার ইতিহাস নিয়ে চায়ের আড্ডায়, পাড়ার ঠেকে বেশ ঝড় ওঠে। লেখালেখিও হয়। ভারতের রেকর্ড এই ব্যাপারে বেশ ভালই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রে ভোটাভুটি নিয়ে যতই সমস্যা হোক, অন্তত সংবিধান লাগু করার পর প্রথম সাধারণ নির্বাচন থেকেই মোটের ওপর স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা রেখে নজির তৈরি করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।

অথচ এই ব্যাপারে ভারতের পড়শি দেশ পাকিস্তান যেন বারবার এগোতে গিয়েও হোঁচট খেয়েছে। 'কায়েদ-ই-আজম' মহম্মদ আলি জিন্না একটি টাইপরাইটারের সাহায্যে 'পাকিস্তান' সৃষ্টি করে গেলেন বটে! তাকে একটি লোককল্যাণমূলক গণতন্ত্র হিসেবে দেখতে তাঁর সদিচ্ছারও বিশেষ অভাব ছিল না। কিন্তু পাকিস্তান তৈরির মাত্র এক বছরের মধ্যেই করাচিতে নিজ বাসভবনে সকাল দশটার কিছু পরে পরলোকে গমন করেন তিনি। যার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। জিন্নার চেয়ারে বসার মত অবস্থা অন্তত দ্বিতীয় আর কোনও বড়-মেজ নেতার ছিল না। লিয়াকত আলি খান প্রধানমন্ত্রী হলেন বটে। কিন্তু ১৯৫১ সালে তাঁকেও খুন হয়ে যেতে হয়। তীব্র ক্ষমতার লড়াইতে তারপর আর পাকাপোক্ত গণতন্ত্রটাই তৈরি হতে পারেনি পাকিস্তানে। ফলে দীর্ঘ সামরিক শাসন জারি হয়, ক্ষমতা দখল করেন মার্শাল আয়ুব খান। 

বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে স্বাধীনতার পরে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের আসর বসে ১৯৭০ সালে। আর প্রথমবার নির্বাচন হতেই পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যার রুগ্ন চেহারাটা ফোঁপরা হয়ে বেরিয়ে পড়ে। 

পাকিস্তান তখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে পশ্চিম পাকিস্তান; করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, কোয়েট্টা-সহ পাকিস্তানের রাজনীতি-অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। ভাষাগত দিক দিয়ে এই দিকটাকে বলা হয় 'উর্দুপ্রধান', যদিও পাকিস্তানে কোনওকালেই উর্দু মাতৃভাষা হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না। উর্দু পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল 'ইসলামের ধারক ও বাহক' হিসবে অনেকটা কৃত্রিমভাবে আরোপিত। আজও পাকিস্তানের বৃহত্তম ভাষাগোষ্ঠী পঞ্জাবি। উল্টোদিকে, বাংলা ও বাঙালির পূর্ব-পাকিস্তান ছিল অনেকটাই অবহেলিত। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া সেই অর্থে বড় শহর নেই। দীর্ঘকাল বাণিজ্যিক ও সামরিক গুরুত্বের পাল্লাতেও চট্টগ্রামের মর্ম বুঝে উঠতে পারেননি পাক কর্তারা। বাঙালি-প্রধান পুব অংশকে খুব একটা উঁচু নজরেও দেখতেন না পশ্চিমের নেতারা। যদিও পূর্ব পাকিস্তান বহু খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীর ধাত্রীভূমি। সেই অবহেলার যুগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল পড়াশোনা, গবেষণা ও মুক্তচিন্তার জন্য বিখ্যাত। বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা সম্মানের সঙ্গে নানা পদে কাজ করতেন। কিন্তু পাক অর্থনীতির সোনালি ধারা চুঁইয়ে পুব অবধি বেশি আসতে পারত না। একাধিকবার ভাষা নিয়েও সংঘাত হয়েছে। প্রতিবাদে বাহান্নর 'ভাষা আন্দোলন' যার অন্যতম। ফলে তীব্র অসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছিল পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে। জন্ম নিয়েছিল বাঙালি অস্মিতা। যাকে পুরোদমে এক জন-আন্দোলনে রূপায়িত করেন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির অবিসংবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।

নির্বাচনের এক মাস আগে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলেন প্রকৃতি ঠাকরুন। নভেম্বরের গোড়া থেকেই ভারত-সহ একাধিক দেশের আবহাওয়া দফতরের কাছে ধরা পড়ে, বঙ্গোপসাগরে ধিকি ধিকি তৈরি হচ্ছে এক প্রবল ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু বারবার পাকিস্তানকে সতর্ক করা হলেও অভিযোগ, ইসলামাবাদের কর্তারা কানে তোলেননি। শেষে, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বিকেল গড়াতে রুদ্রমূর্তিতে কার্যত দানবের মত পূর্ব পাকিস্তান উপকূলে আছড়ে পড়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। নাম দেওয়া হয়েছিল 'ভোলা'।

আজও মানব ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় বলে পরিচিত হয়ে রয়েছে এই কুখ্যাত 'ভোলা' সাইক্লোন! পাকিস্তান সরকারের তরফে এই ঝড় থেকে বাঁচতে কার্যত কিছুই করা হয়নি। ফল হয়েছিল মারাত্মক। ঠিক কত লোক মারা গিয়েছিল, আজও জানা যায় না। শোনা যায়, তিন থেকে পাঁচ লক্ষ লোকের মৃতু হয়েছিল সেই অভিশপ্ত রাতে। মাটিতে মিশে গিয়েছিল উপকূলের একাধিক গ্রাম। পশ্চিমের কর্তাদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ঢাকায়।       

এইরকম আবহাওয়ায় নির্বাচনের ফল বেরোতে দেখা যায়, সমীকরণ সব জট পাকিয়ে গিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পশ্চিমের চাইতে বিপুল পরিমাণ বেশি। ফলে আসন সংখ্যাও সেখানে বেশি। সেই পুব অংশের মুকুটহীন সম্রাট মুজিবের আওয়ামি লিগ। প্রার্থী দিয়েছিল একশো সত্তরটি আসনে। যার আটটি ছিল পশ্চিমেও। তার ১৬৭ টি আসনে জিতে রেকর্ড গড়ে ফেলে তারা। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি সব মিলিয়ে প্রার্থীই দিয়েছিল ১২০ আসনে। সেখানেও একাধিক মুসলিম লিগ ভেঙে তৈরি হওয়া দলের প্রতিরোধে পড়তে হয় তাদের। ফলে পিপিপি জেতে মাত্র ৮৬-টি আসনে। সব মিলিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায় আওয়ামি লিগ। 

আর এতেই শুরু হয় সমস্যা। এমনিতেই পশ্চিন পাকিস্তানে বাঙালি অধ্যুষিত পুবদিককে খানিক খাটো করে দেখা হত। ফলে নানা কথা বলে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধার সৃষ্টি করেন। প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেন পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণ। সরাসরি পশ্চিমের নেতাদের অবজ্ঞা ও অবহেলার বিরুদ্ধে এবং নিজেদের হকের রাজনৈতিক অধিকারের দাবি জানিয়ে শুরু হয় গণ-আন্দোলন। ঢাকা প্রতিবাদে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। অথচ বিন্দুমাত্র আলোচনার পথে না গিয়ে আন্দোলনকে বাগে আনতে ইয়াহিয়া খান এক ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ করেন। প্রথমে মুজিবকে আলাপ আলোচনায় পরাস্ত করার পরিকল্পনা চলে। সরাসরি যাতে ইন্ধন দেন পিপিপি নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো। তাতে কাজ না হওয়ায় সটান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে উড়িয়ে আনা হয় সশস্ত্র পাক সেনাবাহিনীকে। 

পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে একযোগে 'অপারেশন' চালানোর কথা পরিকল্পনা করা হয়। যার মধ্যে সবার আগে হাতে আনতে হবে ঢাকা শহরকে। বিশেষ করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোটা ক্যাম্পাসকে একশো ভাগ সেনা দখলে নিয়ে আসার ছক কষা হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকেই শুরু হয় সেনা অভিযান। জারি করা হয় কার্ফু। গোটা ঢাকা শহরের একাধিক জায়গা জুড়ে কার্যত তাণ্ডব চালায় সেনা, চলে নাগাড়ে হত্যা, ধর্ষণ সহ একাধিক যুদ্ধাপরাধের সমতুল অপরাধ। গণহত্যায় বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ছাত্র থেকে কেউ ছাড় পাননি। হিন্দু, বৌদ্ধ-সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরেও নারকীয় অত্যাচার চলে। কার্যত শ্মশান হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার মার্কিন কনস্যুলেটের তৎকালীন কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড জরুরি ভিত্তিতে পরিস্থিতি জানান ওয়াশিংটনকে। আবেদন করেন হস্তক্ষেপের। অভিযোগ, ইয়াহিয়া খানের প্রতি সদয় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন সব শুনেও বড় ধরণের কোনও পদক্ষেপ করেননি। উলটে নিক্সন ও তাঁর সহযোগী হেনরি কিসিঞ্জারের সহানুভূতি আগাগোড়া ছিল পাকিস্তানের প্রতি। 

যার ফলশ্রুতিতে, ১৯৭১ সালের আজকের দিন, অর্থাৎ ২৬ মার্চ ভোরবেলায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন 'বাংলাদেশ' রাষ্ট্রের ঘোষণা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জয় আসে ডিসেম্বরে। মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াইতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল ভারতীয় সেনা। আজ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে পরম শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে 'স্বাধীনতা দিবস' হিসেবে স্মরণ করা হয় ২৬ মার্চকে। দেশজোড়া নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ফিরে দেখা হয় দক্ষিণ এশিয়ার রক্তক্ষয়ী এক ইতিহাস।
 


ভিডিও স্টোরি