খেলোয়াড় হিসেবে দু’বার (২০১২, ২০১৪) আইপিএল ট্রফি হাতে তুলেছিলেন গৌতম। কোচের পদে বসে গত মরশুমে কলকাতাকে সাফল্যের স্বাদ এনে দেন। সমস্ত দিক থেকে অপ্রতিরোধ্য শক্তি হয়ে ওঠে কলকাতা। জেতে ৯টি ম্যাচ, হার মাত্র ২টিতে। লিগের লড়াই শেষ করে ২০ পয়েন্টে। রান রেটও (+১.৪২৮) শ্লাঘনীয়!
গৌতম গম্ভীর
শেষ আপডেট: 19 May 2025 07:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘একটা থ্রিল (রোমাঞ্চ) ছিল আগে, যেটা আজকাল মিস করি। দলকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতেন, তাতে একধরনের আত্মবিশ্বাস ছলকে উঠত।‘
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। চলতি আইপিএলেই (IPL) দিল্লি ক্যাপিটালসের (Delhi Capitals) বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে প্রাক্তন কোচ গৌতম গম্ভীরকে (Gautam Gambhir) নিয়ে এই ভাষাতেই স্মৃতিকাতরতা জাহির করেছিলেন পেসার হর্ষিত রানা (Harshit Rana)। এমনিতে পূর্বতন, বিদায়ী কোচ বা মেন্টরদের নিয়ে বলতে গিয়ে খেলোয়াড়রা ঈষৎ কুণ্ঠিত হতে থাকেন। বেশ মেপেজুপে শব্দ বেছে নেন। হর্ষিতের আবেগ সেদিন কোনও কানুন মানেনি। নির্বাধ আবেগে গৌতম-স্তুতি ঝরে ঝরে পড়ছিল।
শুধু হর্ষিত নন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) এখনকার প্রায় সমস্ত ক্রিকেটারের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে গৌতম গম্ভীর সংক্রান্ত প্রশ্ন করলেই মোটামুটি ভক্তিপ্রণত জবাব মিলবে। তার একটা কারণ অবশ্যই চলতি মরশুমে ধরাশায়ী পারফরম্যান্স। অন্ধকার বর্তমান সব সময় অতীত, যদি সেটা সামান্যতম ইতিবাচকও হয়, তাকে আলোকিত করে তোলে। গৌতম জমানার সাফল্য ঈর্ষণীয়, এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তাকে বিশ্লেষণ করতে বসলে সম্ভবত কোনও কেকেআর খেলোয়াড় চাইলেও ‘নিরপেক্ষ’ থাকতে পারবেন না। তাতে আবেগের অতিরেক, অনুভূতির অতিরঞ্জন আসবেই আসবে!
খেলোয়াড় হিসেবে দু’বার (২০১২, ২০১৪) আইপিএল ট্রফি হাতে তুলেছিলেন গৌতম। কোচের পদে বসে গত মরশুমে কলকাতাকে সাফল্যের স্বাদ এনে দেন। সমস্ত দিক থেকে অপ্রতিরোধ্য শক্তি হয়ে ওঠে কলকাতা। জেতে ৯টি ম্যাচ, হার মাত্র ২টিতে। লিগের লড়াই শেষ করে ২০ পয়েন্টে। রান রেটও (+১.৪২৮) শ্লাঘনীয়!
নাইট বাহিনী এবার সেই জয়যাত্রা অব্যহত রাখতে পারে কি না, অনুরাগীদের নজর ছিল সেদিকে। মরশুম শুরুর আগে দলে প্রচুর রদবদল না হলেও দুটো স্তরে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন হয়। প্রথমত, ফ্র্যাঞ্চাইজির দায়িত্ব ছেড়ে টিম ইন্ডিয়ার কোচ হওয়ার প্রস্তাব মেনে নেন গুরু গম্ভীর। দ্বিতীয়ত, অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারকে নিলামে ধরে না রেখে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেকেআর ম্যানেজমেন্ট। বলা বাহুল্য, দুটো সিদ্ধান্তই কলকাতার বিপর্যয় ঘনিয়ে এনেছে। একদিকে গম্ভীরের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হাতে তুলেছে ভারত, নতুন করে সেজে উঠছে দল। অন্যদিকে শ্রেয়স ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা দেখিয়ে চলেছেন, নেতৃত্বে দেখাচ্ছেন পরিণতি! যার সুবাদে পাঞ্জাব কিংস প্লে-অফের লড়াইয়ে জমি খুঁজে পেয়েছে।
কেন কলকাতা এবারের আইপিএলে ব্যর্থ, তার কারণ খুঁজতে বসলে ফিরতে হবে গোড়ার কথায়। জানতে হবে—কীভাবে কলকাতার সত্তা বদলে দেন গৌতম গম্ভীর? এর জবাবে প্রাক্তন নাইট ওপেনার মনবিন্দর বিসলার ব্যাখ্যা, ‘অনেক দিন বাদে কেকেআরে ফেরেন গম্ভীর। কিন্তু এসেই আমূল বদলের রণকৌশল নেননি। যদি গতবারের কেকেআরের প্রথম একাদশের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন, নতুন মুখ বলতে স্রেফ মিচেল স্টার্ক আর রমণদীপ। তাতেই দল চ্যাম্পিয়ন! এর আগে বহু বছর কেকেআর ধারাবাহিকতা দেখায়নি। তাই আগের মরশুমে কেউই—চ্যাম্পিয়ন তো দূর অস্ত—প্লে-অফের জন্যও কলকাতার নাম নেয়নি। গৌতম কুর্সিতে বসতেই গোটা পরিস্থিতি বদলে যায়।‘
যদিও বিষয়টা একবার নয়, এর আগেও করে দেখিয়েছেন টিম ইন্ডিয়ার বর্তমান হেড কোচ। বিসলার কথায়, ‘এর দু’বছর আগে গম্ভীর লখনউ সুপার জায়ান্টসে ছিল। তারাও কিন্তু প্লে-অফের টিকিট পাকা করে। তারপর দল ছাড়তেই বিপর্যয় শুরু।‘
তাহলে গৌতমের এক্স-ফ্যাক্টর ঠিক কী? মনবিন্দরের মতে, বদলটা মানসিকতায়। ক্রমাগত জয়লাভের যে-তাড়না চারিয়ে দেন গম্ভীর, সেটা আইপিএলের মতো টুর্নামেন্ট, যেখানে প্রথম দল ও দশম দলের ফারাক খুবই ক্ষীণ, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ধরা দেয়। এর অন্যতম কারণ—কোচ হিসেবে টিম সাজাতে গিয়ে গৌতম গম্ভীর কখনওই বড় নামের পেছনে ছোটেন না। আস্থা রাখেন আনকোরা খেলোয়াড়ে। নজরে শুধু এবং শুধুমাত্র পারফরম্যান্স। বাদবাকি প্রায় সমস্ত দল যখন নতুন ক্রিকেটারদের এক-দুই ম্যাচ সুযোগ দিয়েই ক্ষান্ত, তার মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলে তাঁরা দল থেকে বাদ পড়েন, গৌতম গম্ভীর টানা তিন-চার ম্যাচ দেখে যাওয়ায় আগ্রহী। বাকি দল যেখানে নামজাদা বিদেশি কিংবা পরিচিত ভারতীয় ক্রিকেটারদের ঘিরে দল বানাতে চান, গৌতমের পাখির চোখ থাকে বারো জন ছন্দে থাকা, নামের বদলে কাজে শক্তিশালী ক্রিকেটারে। তাদের কেন্দ্র করে ধারাবাহিক জয়লাভের লক্ষ্যে প্রথম একাদশ গড়ে ফেলেন। গত মরশুমে কলকাতা নাইট রাইডার্সের পারফরম্যান্স এর সবচেয়ে ভাল প্রমাণ।
এবার এমন বটবৃক্ষকের অভাব অনুভব করেছে কেকেআর। একটি কী দুটি লড়াই জিতে পরের ম্যাচ হারতেই দলে লক্ষ্যণীয় বদল ঘটিয়ে ফেলেছেন চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। ফলে ধারাবাহিকতা উধাও। উধাও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আত্মবিশ্বাসও। মিডল অর্ডারে লাগাতার মুখ থুবড়ে পড়েছে কলকাতার ব্যাটিং লাইন আপ। এর জন্য ছন্দ হারানো, তাল কেটে যাওয়াকেই দুষেছেন মনবিন্দরের মতো অনেকে। একদিকে নড়বড়ে শুরুয়াতের পর গৌতম গম্ভীরের টিম ইন্ডিয়া দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যলাভের লক্ষ্যে ছুটে চলেছে। অন্যদিকে তাঁর উপস্থিতির অভাবে এবারের মতো আইপিএল থেকে লজ্জার বিদায় মেনে নিতে হয়েছে কলকাতাকে।
দুই ময়দানে, দুই ফর্ম্যাটে দু’ধরনের খণ্ডচিত্র। ফ্যাক্টর কিন্তু একজনই… তাঁর নাম গৌতম গম্ভীর!