সনাতনী সমস্ত প্রথাকে চ্যালেঞ্জ কেরেছ এবং একবিংশ শতকে এক অনমনীয় ভারতকে বিশ্বদরবারে পেশ করেছে বিরাট কোহলি। বিরাট হল ‘মোস্ট অস্ট্রেলিয়ান নন-অস্ট্রেলিয়ান’।
গ্রেগ চ্যাপেল
শেষ আপডেট: 13 May 2025 16:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতীয় ক্রিকেটে গ্রেগ চ্যাপেলের (Greg Chappell) আমলকে কালো অধ্যায় বলেই মনে করা হয়। তাঁকে ভারতীয় দলের কোচ করার জন্য তদ্বির করেছিলেন তৎকালীন টিম ইন্ডিয়া অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান চানক্য প্রথমে এসেই বাংলার মহারাজের ডানা ছাটার প্রক্রিয়া শুরু করেন। অধিনায়কত্ব হারানোর পাশাপাশি দল থেকেও গুরু গ্রেগের আমলে বাদ পড়েন সৌরভ। ভারতীয় দলের হালও সে সময় মোটেই ভাল ছিল না। ২০০৭ ওডিআই বিশ্বকাপে গ্রেগের আমলেই রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল।
গুরু গ্রেগের অধ্যায় এখনও ভুলতে পারেনি ভারতীয় ক্রিকেট। প্রাক্তন এই অজি অধিনায়ককে কোচের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল বিসিসিআই। তবুও মাঝেমধ্যেই ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে মন্তব্য করে আলোচনায় এসেছেন গ্রেগ চ্যাপেল। এবার বিরাট কোহলির অবসর প্রসঙ্গে মন্তব্য করলেন গ্রেগ। সেখানে তিনি প্রশংসা করলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরও (Sourav Gangopadhyay)।
১২ মে বিরাট কোহলি (Virat Kohli Retirement) টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা করে ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। কোহলির এই ঘোষণার পর একের পর এক মন্তব্য করে চলেছেন প্রাক্তন ও বর্তমান ক্রিকেটাররা। সবাই বিরাটের প্রশংসায় মেতে উঠেছেন। এবার বিরাট বন্দনায় মাতলেন প্রাক্তন ভারতীয় প্রধান কোচ (Former Indian Head Coach) গ্রেগ চ্যাপেল।
গ্রেগ চ্যাপেল বলেছেন, বিরাট কোহলি ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং এমএস ধোনির (MS Dhoni) উত্তরাধিকার সঠিকভাবেই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সৌরভের সঙ্গে একসময় মতবিরোধ থাকলেও এবার তাঁর অধিনায়কত্ব সম্পর্কে প্রশংসা শোনা গেল গ্রেগের মুখে।শক্তিশালী ভারতীয় দল গঠনের জন্য তিনি সৌরভ এবং ধোনির প্রশংসা করেন। সৌরভের আগ্রাসী মনোভাব ও ধোনির হীমশীতল মস্তিষ্কের প্রশংসা করেছেন চ্যাপেল। তাঁর মতে সৌরভ ভারতীয় ক্রিকেটকে মেরুদণ্ড দিয়েছিল। আর ধোনি শিখিয়েছিলেন, সাদা বলের ক্রিকেটে কী ভাবে রাজত্ব করতে হয়।
একটি ক্রিকেট ওয়েবসাইটে দীর্ঘ পোস্ট করে চ্যাপেল লিখেছেন, অধিনায়ক কোহলির আমলে বিদেশের মাটিতে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সামনে পড়লেও ঘুরে দাঁড়াত ভারত। বিরাটের টিম ইন্ডিয়া সব সময় জয়ের আশা নিয়ে মাঠে নামত। গ্রেগ চ্যাপেল কোহলির নির্ভীক মনোভাব তুলে ধরে বলেন, বিরাট সবসময় তাঁর দলের বাকিদের অনুপ্রাণিত করতেন।
গ্রেগ বলেন বিরাট কখনও হাল ছাড়েননি, বিশেষ করে তাঁর প্রতিপক্ষের সামনে তো নয়ই। বিরাটের ফিটনেস ও ক্রিকেটের প্রতি আবেগকেও প্রশংসা করেছেন প্রাক্তন এই অজি ক্রিকেটার।
চ্যাপেল লিখেছেন, “টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিরাটের অবসর হল এক অসামান্য যুগের পরিসমাপ্তি। সে এমন এক যুগ, যেখানে ছিল চোয়ালচাপা সংকল্প, ছিল আগুন, আর ছিল অপার ঔদ্ধত্য। শচিন তেণ্ডুলকরের পর বিরাটই ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রভাবশালী ক্রিকেট চরিত্র। আমার তো কোথাও গিয়ে মনে হয়, ভারতের ক্রিকেটীয় সত্ত্বার উপর সংস্কৃতিগত এবং মানসিকগত ভাবে প্রভাব বিস্তারের প্রেক্ষিতে শচীনকেও বোধহয় বিরাট ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে ভারতীয় ক্রিকেটীয় হৃদপিণ্ড ছিল বিরাট। শুধুমাত্র রান করা নয়, প্রত্যাশার মানদণ্ডকে প্রতিনিয়ত নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে ও। সনাতনী সমস্ত প্রথাকে চ্যালেঞ্জ কেরেছ এবং একবিংশ শতকে এক অনমনীয় ভারতকে বিশ্বদরবারে পেশ করেছে বিরাট কোহলি। বিরাট হল ‘মোস্ট অস্ট্রেলিয়ান নন-অস্ট্রেলিয়ান’ (Most Australian Non-Australian)।”