বিরাটের সঙ্গে আজ ফর্মে ফেরা ফাফ দু'প্লেসিকে নিয়েও চিন্তা থাকছে পাঞ্জাবের।
শেষ আপডেট: 9 May 2024 08:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লোকে কষ্টেসৃষ্টে একটা বাড়ি বানায়। বা শহরে হলে, হয়ত ধার-দেনা করে একটা ফ্ল্যাট কেনে। সেখানে পাঞ্জাব কিংসকে দেখলে মনে হবে হোমরা-চোমরা কেউ হবে! তিন-তিনটে বাড়ি তাদের। অথচ এমনই কপাল, একটা বাড়িও ঠিক জুতের হচ্ছে না! গত মরসুম থেকে ধরলে পাঞ্জাবের হোমগ্রাউন্ড তিনটে। মোহালি, ধর্মশালা, তারপর যোগ হয়েছে নবীনতম মুল্লানপুর। এদিকে গত ছ'টা হোম-ম্যাচের মাত্র একটা জিতেছে পাঞ্জাব। অথচ পাঁচটা অ্যাওয়ে ম্যাচের মধ্যে আবার তিনটেতেই জয় পেয়েছে তারা। ঘরের মাঠেই অতএ কাঁটা হয়ে আছে পাঞ্জাবের।
বৃহস্পতিবার ধর্মশালায় পাঞ্জাবের শেষ ঘরের ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। এমনিতে ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় ম্যাচ ফেলে কোনও লাভ নেই। দেড় হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম অনন্যসাধারণ সুন্দর ক্রিকেট মাঠ বলে পরিচিত এই স্টেডিয়ামের গ্যালারির ওপাশে আকাশজুড়ে শোভা পায় বরফ-ঢাকা হিমালয়ের ধৌলাধরের চূড়া। হিমালয়ের কোলে সবুজ গালিচায় ক্রিকেটের এমন সুযোগ বিশ্বের বেশি কোথাও নেই। এ'হেন মাঠে আজ নামছে আরসিবি ও পাঞ্জাব, যাদের দু'জনেরই ভাগ্য একটা সরু সুতোয় ঝুলে আছে। লিগ টেবলে যথাক্রমে সাত ও আট নম্বরে আছে আরসিবি ও পাঞ্জাব। আজকের ম্যাচ যে হারবে, সে আনুষ্ঠানিকভাবে প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে যাবে। জিতলে ওই সরু সুতোতেই আরও দিনকতক বেশি ঝুলে থাকতে হবে। সোজা কথায়, খুব বিরাট কিছু অঘটন না ঘটলে আরসিবি বা পাঞ্জাব, দুইদলের কেউই প্লে-অফে যাবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু আইপিএল তো দিনের শেষে অঘটনেরই টুর্নামেন্ট। অতএব, আশা রাখা যেতেই পারে।
টুর্নামেন্টের শুরুতে বিরাট কোহলিরা যেরকম খেলেছেন, তার সঙ্গে মিলিয়ে শেষ দিকের ম্যাচগুলো দেখলে মনে হবে, মাঝে কোনও নিলাম-টিলাম হয়েছে, ইউএস গ্রুপ পুরো দল বদলে ফেলেছে। আইপিএলে আরসিবি অন্যতম সমর্থক-পুষ্ট দল। লিগ টেবলের একেবারে তলায় থাকলেও ভারতের যে কোনও মাঠে খেলা থাকলে স্টেডিয়ামের বাইরে গাড়ি-টাড়ি আটকে জ্যাম হয়ে যায়। বিরাট নিজে আগুনে ফর্মে আছেন। কিন্তু দলের বাকিরা শুরুর দিকে যেমন ঝোলাচ্ছিলেন, এখন হঠাৎ করেই তেড়েফুঁড়ে ফর্মে এসে গিয়েছেন। শেষ তিনটে ম্যাচ জিতে রীতিমতো চনমনে বেঙ্গালুরু শিবির। অধিনায়ক ফাফ দু'প্লেসি ভাল ফর্মে ফিরেছেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও বিরতি সেরে দলে ঢুকেছেন। শোনা যাচ্ছে ধর্মশালায় এসে নাকি আরসিবি ম্যানেজমেন্ট অনুশীলনে না গিয়ে একটু সাইট-সিয়িং ইত্যাদি করাতে নিয়ে গিয়েছেন। ফুরফুরে মেজাজেই আছে দল।
পাঞ্জাবের সেখানে দেখে বোঝার উপায় নেই কী অবস্থা। এমনিতে পাঞ্জাব এবারের আইপিএলে সবচেয়ে 'আনপ্রেডিক্টেবল' দল। ১১ ম্যাচ খেলে মাত্র চারটেয় জিতেছে বটে, কিন্তু বেশিরভাগ ম্যাচেই এমন খেলেছে যে সমালোচকরা সমীহ করতে বাধ্য হয়েছেন। কলকাতার লোকজনই যেমন ইডেনে পাঞ্জাবের দাপট দেখার পর থেকে আর বেশি তেড়েফুঁড়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। মাঠ পুরো ভরবে কিনা সন্দেহ ছিল সিএবির, ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্স যে জিতবে, ম্যাচ শুরুর আগেই সবাই একরকম নিশ্চিত ছিল। প্রথমে ব্যাট পেয়ে ফিল সল্ট-সুনীল নারাইন জুটির বেধড়ক মার দেখে অনেকে কেকেআর ইনিংস দেখে কাছাকাছি রেস্তোরাঁতেও ঢুকে পড়েছিলেন। আর দেখে কী হবে? ২৬২ টার্গেট! দূর দূর তক কোনও সম্ভাবনা আছে? কিন্তু তারপর ইডেনে যা শুরু হল... এমসিসির কর্তারা দেখলে ক্রিকেটের বই-টই নতুন করে লিখতেন। প্রভসিমরণ সিংহ, শশাঙ্ক সিংহ, জনি বেয়ারস্টো মিলে দুই উইকেট হারিয়ে ১৮ ওভার ৪ বলেই রান তুলে দিলেন।
আদতে পাঞ্জাবের দলটা মারাত্মক খামখেয়ালি। যেদিন খেলবে, উল্টোদিকের বেজায় দুঃখ আছে। আশুতোষ শর্মা, শশাঙ্ক, প্রভসিমরণ, স্যাম কারান... খেলা যে কেউ ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাও আবার নির্ভরযোগ্য ওপেনার শিখর ধওয়ন নেই। তাতেই এই! ফলে আরসিবিকে আজ ওই সুতোয় ঝুলে থাকতে হলে যথেষ্ট আঁটঘাট বেঁধেই নামতে হবে।