Date : 11th Jul, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
Eng vs Ind: বুমরাহর দাপটের পর ভারতকে টানছে রাহুল-পন্থ জুটিঘটকালির ছকে প্রেমের ফাঁদ! ম্যাট্রিমনি সাইটে পরিচয়, ৪৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে পগারপার পাত্রফের শহরে সিভিক ভলান্টিয়ারের 'দাদাগিরি'! ৬টি ধারায় মামলাভিন্ন ধর্মে বিয়ে, মেয়ের কুশপুতুল দাহ করলেন বাবা, চাঞ্চল্য রাজগঞ্জেস্ত্রীকে নির্যাতন, পরকীয়ার অভিযোগে পদ খোয়ালেন তৃণমূল ব্লক সভাপতিরাস্তায় যৌন হেনস্থা, ঠাটিয়ে চড় ফতিমাকে! শিউরে ওঠা ঘটনার বিবরণ দিলেন অভিনেত্রীচিকিৎসককে হুমকি, কাঞ্চনের 'অপরাধ' দেখছেন না বিজেপির রাজ্য সভাপতি! দিলেন ব্যাখ্যাওWorld Kebab Day: আজ বিশ্ব কাবাব দিবস, সপ্তাহান্তে লোভাতুর বাঙালির জন্য রইল শহরের ৫ দোকানের হদিসLocal Trains Cancel: আবার একগুচ্ছ লোকাল ট্রেন বাতিল, দুর্ভোগে নিত্যযাত্রীরাছিল তিন, হল চার, পুজোর ছবিতে নাটকীয় এন্ট্রি নিলেন দুঁদে গোয়েন্দা! চিন্তায় প্রযোজকরা
Soumitra Chatterjee

বাপি না থাকলেও, 'মহাসিন্ধুর ওপার থেকে' আজও আগলে রেখেছেন আমায়: পৌলমী চট্টোপাধ্যায় বসু

বাপি সবসময় বলতেন সময় দিতে চাইলে, সময় বার করা যায়। ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। 

বাপি না থাকলেও, 'মহাসিন্ধুর ওপার থেকে' আজও আগলে রেখেছেন আমায়: পৌলমী চট্টোপাধ্যায় বসু

গ্রাফিক্স - দিব্যেন্দু দাস

শেষ আপডেট: 16 June 2025 12:42

শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

সকাল থেকেই আজ একটা বৃষ্টিস্নাত দিন। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ শান্ত হয়ে গেছে প্রথম বর্ষার স্নেহছায়াতলে। দিনটাও যে স্নেহের। আজ বাবা দিবস। সুপারস্টাররা কতখানি প্রকৃত বাবা হন? তাঁরা কি বাড়িতেও স্টারদের মতোই ব্যবহার করেন? বাংলা ছবির প্রকৃত সুপারস্টার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতৃসত্ত্বা নিয়ে আজ 'ফাদারস ডে' তে দ্য ওয়াল-এ গল্প করলেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা পৌলমী চট্টোপাধ্যায় বসু। তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিলেন শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

আজ অ্যাকাডেমিতে 'টিনের তলোয়ার' নাটকের শোয়ে অভিনয় করতে যেতে যেতে গাড়ির মধ্যেই বাবার কথা ভাগ করে নিলেন সৌমিত্র কন্যা।

May be an image of 2 people and people smiling


আজ 'টিনের তলোয়ার' নাটকে অভিনয় করছেন আপনি। বাবার সঙ্গে কী এই নাটক আগে দেখেছিলেন?

হ্যাঁ তবে তখন আমি বেশ ছোট। উৎপল দত্তের 'টিনের তলোয়ার' নাটক দেখেছিলাম। সেরকম স্মৃতি আমার কিছু নেই। তবে তখন বিদেশি নাটক খুব কলকাতায় হত, সেগুলো বাপির সঙ্গে দেখতে যেতাম। বাপির সঙ্গে বহু বহু নাটক দেখেছি। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'তিন পয়সার পালা' থেকে শুরু করে শম্ভু মিত্রের 'গ্যালিলিও' সব দেখেছি বাবার সঙ্গে। গানের অনুষ্ঠান, ছবির প্রদর্শনী সব বাবার হাত ধরেই যাওয়া।

বাংলাছবির মহাতারকা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে বাবা কতটা ছিলেন?

আমার কাছে উনি চিরকালই শুধু বাবা-ই ছিলেন। উনি নিজেও নিজেকে কোনওদিন তারকা ভাবতেন না। অভিনয় করাটা ওঁর কাজ ভাবতেন। অনেকে যেমন ১০টা-৫টা অফিস করেন,অনেকে খেলেন, অনেকে লেখেন যেমন, তেমন বাবাও অভিনয় করতেন। গ্ল্যামারাস জগতে থেকেও আমাদের বাড়ির পরিবেশ কিন্তু খুব সাধারণ ছিল। আমি আর আমার দাদা সেভাবেই বাপিকে দেখেছি। আমাকে তো ক্লাস টুয়েলভ অবধি স্কুলে পৌঁছে দিতেন বাপি। আমি মর্ডান হাইস্কুলে পড়তাম। সেখানে গার্লস স্কুলে শুধু মায়েরাই ঢুকতে পারতেন। কিন্তু বাপি আমার জন্য স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আমার স্কুলের দিদিমণিরাও পরে আমাকে বলেছেন 'পৌলমী তোমার বাবা কত বড় স্টার হিরো, তবু তিনি কী ভীষণ অবলীলায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। ' আমি স্কুল থেকে বেরলে আমার ব্যাগ গাড়িতে রেখে, গাড়ি ড্রাইভ করে বাপি নিয়ে আসতেন। আমার নাচের স্কুলেও বাবা নিয়ে যেতেন। আমার মা যখন ব্যাডমিন্টনে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গিয়েছিলেন গোরখপুরে তখন বাবা আমাকে আর দাদাকে ব্রেকফাস্ট করে খাইয়ে রেডি করে স্কুলে পাঠাতেন। আজকের ভাষায় বলতে গেলে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় 'Hands-On বাবা' ছিলেন। আমি ধরিত্রীমাতার কাছে ধন্য যে তিনি এমন একজন বাবা আমাদের উপহার দিয়েছিলেন। যে বাবা নিজে একজন স্টার হয়েও তাঁর সন্তানদের কখনও অবহেলা করেননি।

May be an image of 2 people, people dancing and fire

অগুন্তি ছবি, নাটক, যাত্রা, আবৃত্তি এত রকমের কাজ করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে এতখানি সময় দিতেন কী ভাবে?

বাপি সবসময় বলতেন সময় দিতে চাইলে, সময় বার করা যায়। ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। উনি আমাদের নাটক দেখতে নিয়ে যেতেন, নাচের অনুষ্ঠান দেখতে নিয়ে যেতেন, আমাকে বেশিরভাগ রাতেই বাবা গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতেন। যেহেতু আমি একটু আহ্লাদী ছিলাম, বাবা কাজ থেকে ফিরে যতই ক্লান্ত হন,ঠিক গল্প বলতেন। বাপি গল্প না বললে আমি ঘুমোতাম না। 
তিনি আমাকে যে সময় দিয়েছেন, প্রশয় দিয়েছেন, এখন বুঝি সেই সময়টা আমায় কতটা ঋদ্ধ করেছে। বাপির কথাবার্তা গুলো এখন মনে পড়ে , এখন বুঝতে পারি কত বড় শিক্ষা, কত দিকনির্দেশ উনি দিয়ে গিয়েছেন।

বাবার হাত ধরেই কী নাটকে অভিনয় করতে আসা?

না বাপি আমাকে নাটকে আনেনি । আমাদের মডার্ন হাই স্কুল ফর গার্লসে শেক্সপিয়রের নাটক পড়ানো হত, করানো হত। বিট্রিশ কাউন্সিলের জন্য শেক্সপিয়রের কয়েকটি নাটক আমি স্কুল থেকে করেছিলাম। সেই নাটক দেখে বাপি বোঝেন আমার রক্তে অভিনয় আছে। ক্লাস টুয়েলভে পড়াকালীন আমি উৎপল দত্ত ও শোভা জ্যাঠিমার (সেন) ডাকে আমি 'আজকের শাজাহান' করতে যাই। তারপর থেকেই আমি আমার বাবার সঙ্গে কাজ করেছি। দীর্ঘ ৩৭ বছর আমি বাপির সঙ্গে কাজ করেছি। বাবার পরিচালনায় কাজ করেছি, পরে আমার পরিচালনায় বাবা কাজ করেছেন। শুধু থিয়েটার করা নয়, ভাল মানুষ কী ভাবে হতে হয়, আমার বাবাকে দেখে শিখেছি।

 মঞ্চের অভিনেত্রী পৌলমীর আগে তো আপনি নৃত্যশিল্পী পৌলমী?

আমার নাচের পাবলিক পারফরমেন্স প্রথম ১২ বছর বয়সে। অ্যাকাডেমি ফাইন আর্টসে হয়েছিল। এছাড়াও বাবা অনেক নাচের অনুষ্ঠান তখন প্রমোট করতেন। অভিনয়ের থেকে ভিন্ন পেশা নাচের শো বাবা প্রমোটও করতেন। যামিনী কৃষ্ণমূর্তি থেকে কলামণ্ডলমের বহু নামকরা শিল্পীর নাচের শো বাবা করে দেখিয়েছেন। তবে নাচের থেকে পরে অভিনয়েই মঞ্চে পুরোপুরি চলে এলাম।

May be an image of 2 people

মানুষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়?

নিজেকে নিয়ে এতটুকু গর্ব, অহংকার করতে বাবাকে দেখিনি। খুব জুনিয়র ছেলের সঙ্গে বসেও মুড়ি-বাদাম খেতে খেতে বাবাকে গল্প করতে দেখেছি। উনি যে স্টার সেটা আমাদের কাউকে কোনওদিন বুঝতে দেননি। সময়ানুবর্তিতা বাপির থেকেই শেখা। নাটকের রিহার্সালে পাঁচ মিনিট আগে এসেছেন, কোনওদিন পরে আসেননি। আমি ডিরেকশন দিলেও বাপি আগে এসে মঞ্চটাকে দেখতেন, সমস্ত প্রপস,ড্রেস চেক করতেন। ওঁনাকে ভাল ঘর দিলে উনি বলতেন তোমরা আমাকে আলাদা করে দিচ্ছ কেন? আমি তোমাদের সঙ্গে বসব। বাপি নিজের স্টারডম কখনও কারও ওপর আরোপ করেননি। এখন অনেককেই দেখি গাছে না উঠতে এক কাঁদি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাপি যে উচ্চতায় ছিলেন সেখানে থেকেও আড্ডা মারতে, গল্প করতে ভালবাসতেন।

উত্তমকুমার তো সৌমিত্র বাবুকে বলেছিলেন 'পুলু নিজের স্টারডম বজায় রাখতে মিটিং মিছিলে ঘুরিস না এত!'

বাপি বলেছিলেন আমাকে মানুষের মধ্যে থাকতে হবে। মানুষের মধ্যে থেকেই তো আমার অভিনয়ের রসদ খুঁজে পাই।

বাবার মেয়ের ভূমিকাতেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের 'মহাসিন্ধুর ওপার থেকে' আজও তো মানুষ ভোলেনি। পৌলমী চট্টোপাধ্যায় বললেই আজও মানুষ দূরদর্শনের এই টেলিফিল্মটার কথা বলেন।

সত্যি মানুষ 'মহাসিন্ধুর ওপার থেকে' এখনও ভোলেনি। এই টেলিছবির কাহিনি বাপির নিজের লেখা। যেটা কালজয়ী কাজ হয়ে থেকে গেছে। সেইসময় বাপি আমাকে বলেছিলেন একজন অভিনেত্রী হলে গান গাইতে জানতে হবে, নাচ করতে জানতে হবে, খুব পরিশ্রম করতে তোমায় রাজি হতে হবে। 'মহাসিন্ধুর ওপার থেকে' আমাদের খুব কাছের ছিল। বাবা-মেয়ের গল্পে এক পুরনো দিনের অভিনেত্রীর চলে আসা। এই বিষয়টা বাবার খুব কাছের ছিল। পুরনো দিনের অভিনেত্রীদের এখন কী অবস্থা, তারা এখন কী করছেন। নীলিমা দাস যে অভিনেত্রীর চরিত্রটি করেন। নীলিমা দাস আমাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন। ওঁকে বাবা নিজের দিদির মতোই ভালবাসতেন। যে গল্পে অনেক মানুষ  আইডেন্টিফাই করতে পেরেছিল। এখনও করে। আমি গত পরশু, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানেও মানুষজন আমায় দেখে 'মহাসিন্ধুর ওপার থেকে'র কথা বলছিলেন। কত মানুষ আমাকে ঐ মেয়ের চরিত্রে মনে রেখেছেন।

May be an image of 2 people and people smiling

 কখনও ফিল্মে অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছিল আপনার কাছে? বাবা চেয়েছিলেন আপনি ছবিতে নায়িকা হন?

আসলে তখনই আমি মঞ্চে অভিনয় শুরু করে দিয়েছিলাম। আমার বাবা, মা কেউই কোনওদিন কোনও কিছু চাপিয়ে দেননি আমাদের। আমি তখন সিরিয়াসলি নাচ করতাম। কিন্তু ছবিতে অভিনয় করার ইচ্ছে জাগেনি। বাবার মনে হয়েছিল মেয়ের জীবন যেদিকটায় নিয়ে যাবে সেই জীবনটাই ভাল। আমার টানটা মঞ্চের প্রতি সবথেকে বেশি ছিল। আজ অবধি মঞ্চেই থেকে গিয়েছি।


শেষদিকে করোনা আক্রান্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়েও তো আপনার খুব লড়াই চলেছিল! সেই মনের জোরও তো বাবার শিক্ষা থেকে পাওয়া?

তখন ২০২০ সালে আমি,মা, দাদা তিনজনেই বাপিকে বলেছিলাম প্লিজ বাড়ি থেকে বেরনোর চেষ্টা করনা। কিন্তু বাপি বাড়িতে বদ্ধ হয়ে থেকে হাঁপিয়ে উঠছিলেন। ওঁনার বড় হয়ে ওঠায়, দীর্ঘ কর্মজীবনে করোনার মতো এমন কিছু দেখেননি। ঐ একা থাকা,কোনও কাজ করতে না পারা, কোথাও যেতে না পারা বাপি মেনে নিতে পারছিলেন না। উনি খুব আড্ডাবাজ মানুষ ছিলেন। প্রিয়জনদের বলতেন আমাকে একটা পুলিশের গাড়ি করে তুলে নিয়ে যাও, আবার বাড়ি দিয়ে যাও। শ্যুটিং করতে বেরিয়েছিলেন বদ্ধ থাকতে না পেরে। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল বলেই উনি বেরিয়েছিলেন। কিছু করার নেই। আমি ভবিতব্য বলেই মেনে নিয়েছি। তখন করোনার প্রথম দিক। এখন যেমন ডাক্তারবাবুরা করোনার অনেক রকম ভ্যাক্সিন, চিকিৎসার সন্ধান পেয়েছেন। বাবার ঐ সময়ে তা ছিল না। কিন্তু বাপির শেষযাত্রায় যে ভাবে হাজার হাজার মানুষ পথে নেমেছিলেন, করোনার মধ্যেও কোনও রং না দেখে এত মানুষের উজাড় করা ভালবাসা যা আমি আজীবন মনে রাখব।
 


ভিডিও স্টোরি